নিজ দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতির জন্য দায়ী জিম্বাবুয়ের প্রেসিডেন্ট রবার্ট মুগাবেকে শুভেচ্ছা দূত বানানোর সিদ্ধান্তে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। যার পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল মুগাবের নিয়োগ প্রত্যাহার করেছে সংস্থাটি। খবর বিবিসি ও রয়টার্স।
মুগাবের নিয়োগ প্রত্যাহার নিয়ে ডব্লিউএইচওর প্রধান টেড্রোস আদহানোম গ্রেবেইয়েসুস বলেন, যারা এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, তাদের সবার বক্তব্যই সতর্কতার সঙ্গে বিবেচনা করা হয়েছে। এর আগে জনস্বাস্থ্যবিষয়ক অঙ্গীকারের জন্য জিম্বাবুয়ের প্রশংসা করেছিলেন তিনি। কিন্তু মুগাবের ৩০ বছরের শাসনামলে দেশটির স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে বলে সে সময় সমালোচকরা যুক্তি তুলে ধরেন। সমালোচকরা বলেন, জিম্বাবুয়েতে প্রায়ই স্বাস্থ্যকর্মীদের বিনা বেতনে কাজ করতে হয়, ওষুধ সরবরাহেও ঘাটতি রয়েছে, এমনকি মুগাবে নিজেই চিকিত্সার জন্য বিদেশে যান। উল্লেখ্য, ৯৩ বছর বয়স্ক প্রেসিডেন্ট মুগাবের দেশে গড় প্রত্যাশিত আয়ু ৫৯ বছর।
টেড্রোস জানান, তিনি জিম্বাবুয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করেছেন এবং মুগাবের অবস্থান পুনর্বিবেচনা করা ডব্লিউএইচওর স্বার্থের জন্য সবচেয়ে ভালো হবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি আরো বলেন, সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা গড়ে তোলার লক্ষ্যে তিনি সব দেশ ও তাদের নেতাদের সঙ্গে কাজ করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
বুধবার ডব্লিউএইচওর শুভেচ্ছা দূত হিসেবে মুগাবের নিয়োগ বিশ্বব্যাপী চমক তৈরি করে এবং এর পর পরই বিশ্বনেতারা সংস্থার এ সিদ্ধান্তের ব্যাপক সমালোচনা করেন। জিম্বাবুয়ের মানবাধিকার পরিস্থিতির ক্রমাবনতি ও একদা সমৃদ্ধ অর্থনীতিটির দুর্দশার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে মুগাবেকে দায়ী করে আসছে। কিন্তু টেড্রোস এসব সমালোচনায় কর্ণপাত করেননি। বরং মুগাবে এ অঞ্চলে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারবে বলে মন্তব্য করেছিলেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্র, কানাডাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এবং স্বাস্থ্য ও মানবাধিকার নেতারা মুগাবের নিয়োগের সমালোচনা করেন। বিদেশে চিকিত্সাসেবা নেয়ার জন্য নিজ দেশেই বহু বছর ধরে সমালোচনা রয়েছে মুগাবের। ২০০৮ সালে দাতব্য সংস্থা ফিজিশিয়ান ফর হিউম্যান রাইটসের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জিম্বাবুয়ের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ব্যর্থতা তুলে ধরা হয়। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, মুগাবের নীতির কারণে মানবসৃষ্ট সংকট তৈরি হয়েছে। সংস্থাটি জানায়, রবার্ট মুগাবের সরকারের অধীনে দেশটিতে খাদ্য, পানীয়, মৌলিক পয়োনিষ্কাশন ও স্বাস্থ্যসেবায় বিপর্যয় ঘটেছে। মুগাবের নীতির প্রভাবে সরাসরি হাসপাতাল ও ক্লিনিক, মেডিকেল স্কুলগুলো বন্ধ হয়ে গেছে, স্বাস্থ্যকর্মীদের নির্যাতন করা হয়েছে।
আজকের বাজার:এলকে/এলকে ২৩ অক্টোবর ২০১৭