শুল্ক বৈষম্য কমলে বিল্ডিং ইন্ডাস্ট্রি করা সহজ হতো

ইঞ্জিনিয়ার এইচ এম জাহিদুল ইসলাম : আমরা স্টিল বিল্ডিং ম্যানুফেকচার করে থাকি। তাই কোন ধরনের ম্যানুফ্যাকচারার এটা বুঝতে হবে প্রথম। এটা যদি আমি তুলনা করি, লাইক গার্মেন্টস সেক্টর। আমরা ‘র’ মেটারিয়ালগুলো ইমপোর্ট করি এবং আমাদের ফ্যাক্টরিতে প্রসেস করে বিভিন্ন সেক্টরে যেমন কমার্সিয়াল সেক্টরে, রেসিডেনশিয়াল সেক্টরে, ইন্ডাস্ট্রিয়াল সেক্টরে যে ধরনের স্থাপনা লাগে সব আমরা আমাদের ফ্যাক্টরিতে ম্যানুফেকচার করে থাকি এবং এগুলো সাইটে গিয়ে আমরা ফিটিং করে দিয়ে আসি।

এখানে দেখেন আমাদের ‘র’ মেটারিয়াল ইমপোর্ট করতে হয় এবং লোকাল ম্যান পাওয়ার এবং ইমপোর্টেড মেশিনারিজের সাহায্যে আমরা প্রসেসিং করে রিকোয়ার্ড বিল্ডিংটা ম্যানুফেকচার করে থাকি।

আমাদের উৎপাদনের মূল উৎস হচ্ছে আমাদের শ্রমিকরা এবং যে শ্রমিকরা গার্মেন্টস সেক্টরের মতো বাংলাদেশে অ্যাভেইলেবল বাট আমাদের সেক্টরের শ্রমিকদের উচ্চ মূল্য দেওয়া হয়। যেখানে বিশ্ব বাজারের তুলনায় গার্মেন্টস সেক্টরে একটা কর্মীকে যেমন সাত আট হাজার টাকা বেতনে পাওয়া যায়। বাট আমাদের সেক্টরে প্রায় পনের থেকে বিশ হাজারের মধ্যে মিনিমাম মূল্যে নিয়োগ দিয়ে থাকি। যার কারণে এটা শ্রমিকদের ফেবারে আছে।
তাছাড়া আমাদের ফ্যাক্টরিতে যে ‘র’ মেটারিয়াল ইউজ করি তার পুরোটাই আমাদের ইমপোর্ট করতে হয়। এখানে আমাদের মেইন প্রতিবন্ধকতা যেখানে যে ‘র’ মেটারিয়ালগুলো আমরা ইমপোর্ট করে থাকি বিদেশ থেকে। বাট ইমপোর্টের যে ডিউটি দেওয়া হয় তা ফিনিশ প্রোডাক্টের সম মূল্যে দেওয়া হয়। একচুয়ালি আমাদের মেইন কাজ থাকে ইন্ডাস্ট্রিতে।

আপনি ইন্ডাস্ট্রি করবেন, আপনার ইন্ডাস্ট্রি করার মেশিনারিজ আপনি ইমপোর্ট করছেন ডিউটি দিয়ে। কিন্তু আপনার যে স্থাপনা তৈরি করা হবে এখানে সে স্থাপনার ‘র’ মেটারিয়াল আমরা ইমপোর্ট করি হাই ডিউটি দিয়ে। যেটা ফিনিশড প্রোডাক্টের যেমন থার্ড লেবেলের যে ডিউটি দেওয়া হয় আমাদের ম্যাক্সিমাম ‘র’ মেটারিয়ালে সে স্তরের শুল্ক দেওয়া হয়। যেটা কোনো যুক্তিসংগত না।

ইতিমধ্যে আমরা ট্যারিফ কমিশনে এপ্লাই করেছি। ট্যারিফ কমিশন আমাদের ফেভারে সুপারিশ করেছে। এগুলো আগেও হয়েছে কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না। আমি জানিনা, কেন এই কাজ হচ্ছে না। আসলে মনে করি এটা যেমন আমাদের ব্যবসায় বাধার সম্মুখীন, তেমনি আমাদের দেশে যে ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজেশন সেটাও বাধার সম্মুখীন হচ্ছে সেইম কারণে।

কারণ এখানে যদি শুল্কটা কম থাকতো তাহলে কিন্তু একজন এন্টারপিনিয়র যে ইন্ডাস্ট্রি করতে চাচ্ছে সে অল্প মূল্যে একটা ইন্ডাস্ট্রিয়াল বিল্ডিং পেতো এবং মেশিনারিজ যেহেতু অল্প মূল্যে পায় তাহলে ইন্ডাস্ট্রি করা কিন্তু খুবই সুবিধাজনক অবস্থায় থাকতো। আমি আশা করবো, আমাদের গভর্মেন্ট ব্যাপারটা সুনজর দিবে এবং আরেকটা জিনিস দেখা যাবে যে আমাদের কাঁচামাল হিসেবে যা ব্যবহৃত হয় যেসন আপনার স্টিল বিল্ডিংয়ে যে ইন্ডাস্ট্রিয়াল রুপিং শীট বা ওয়ালে যে শীট আমরা ব্যবহার করি সেইম শীট কিন্তু আপনার ফ্রিজ এসির কেইজ হিসেবে ইউজ করা হয়। যারা ফ্রিজ ম্যানুফেকচারিং ফ্যাক্টরি যেটা বিলাসি দ্রব্য বা এসি ম্যানুফেকচারিং ফ্যাক্টরি তারা কিন্তু সেইম প্রোডাক্টটা পাচ্ছে টেন পার্সেন্ট শুল্ক দিয়ে। অথচ আমরা সেইম প্রোডাক্ট সেইম এসেসপোর্ট সেইম ম্যানুফেকচারারের কাছ থেকে সেইম প্রোডাক্টটা ইমপোর্ট করতে আমাদের ডিউটি দিতে হচ্ছে টুয়েন্টি ফাইভ পার্সেন্ট। তো এই ব্যাধাবেধটা কেন? এটা আমরা আজও জানি না। এটা নিয়ে আমরা অনেকবার সবার কাছে গিয়েছি। সবাই বলেছে ব্যাপারটা যুক্তিসংগত না। তারপরও আমরা অযৌক্তিক বেড়াকলে পড়ে আছি। আমি আশা করব গভর্মেন্ট এই ব্যাপারটাতে সুদৃষ্টি দিবে।

কারণ আমাদের সেক্টরে প্রায় দুই লক্ষ ওয়ার্কার কাজ করে। আমি মনে করি আমাদের প্রোডাক্ট হাইয়ার ভেল্যু এডেট প্রোডাক্ট। সো আমি আশা করব সরকার এই এই ব্যাপারটা সুদৃষ্টি দিয়ে দেখবে এবং এই খাতটাকে আরও এই শুল্কের ব্যাপারটা খুব ইজি করে দিয়ে আমাদের খাতটাকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য সহায়তা করবে।

ট্যারিফ কমিশনে আমরা গত পাঁচ সাত বছর যাবৎ এপ্লাই করছি। প্রতি বছর ট্যারিফ কমিশন রিকমান্ড করে যে, এইটার ডিউটি কমানো হোক। কিন্তু এনবিআর এটা কখনো কমায় না। কেন কমায় না, এটা আমরা বলতে পারব না। যে ঘরটা আমরা দুই বছর আগে বলেছিলাম সত্তর হাজার টাকায় দিব, এখন ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটে এমনিতেই স্টিলের প্রাইজ অনেক আপ। দুই বছর আগে আমরা এইচ আর প্লেট সাড়ে চার শত ডলারে ইমপোর্ট করতাম। যেটা এখন প্রায় সাত শত ডলারে ইমপোর্ট করতে হয়। প্রায় ডাবল।

সো আমরা যে রেসিডেনশিয়াল সেক্টরে যে ঘরটা সত্তর হাজার টাকায় দিতে পারতাম, সেটা এখন আর সত্তর হাজার টাকায় দিতে পারছি না। এখন প্রায় নব্বই পঁচানব্বই হাজার টাকায় এটা আমাদেরকে যেতে হচ্ছে। এক নম্বর কারণ ইন্টান্যাশনাল মার্কেটে স্টিলের হাই প্রাইজ, দ্বিতীয়ত আমাদের উচ্চ শুল্ক। আমি আশা করি, সরকার এই ব্যাপারে সুদৃষ্টি দিবে। নির্মাণের যে ধারাবাহিকতা বা বিবর্তন আগে চুন-সুরকির মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। তারপরে সিমেন্ট টেকনোলজি, আরসিসি টেকনোলজি আসলো। এখন স্টিলের টেকনোলজি চলছে। দেশের সার্বিক উন্নয়ন হচ্ছে কিভাবে সেটা যদি দেখেন, জিডিপির দিকে তাকিয়ে থাকলে কিন্তু হবে না। অবকাঠামোগত যে উন্নয়ন এটা কিন্তু একটা ফ্যাক্টর।

আপনার পকেটে অনেক টাকা আছে, জিডিপি যেটা মিন করে যে আপনার কাছে টাকা আছে বাট আপনার কোনো ঘর নাই, আপনার কোনো এসেট নাই, ওই উন্নয়নের কিন্তু কোনো মূল্য নাই। সো আমাদের অবকাঠামোগত উন্নয়নের যদি আমি একটা দৃষ্টান্ত দেই, মেজর একটা ইউনিট আছে যেটা স্টিল কনজাংশন পার ক্যাপিটাল পার ইয়ার। বাংলাদেশে এটা খুব খারাপ অবস্থায় আছে। কেউ এই দিকে কোনো দৃষ্টি দেয় না।

আমাদের দেশে স্টিল কনজাংশন পার ক্যাপিটাল পার ইয়ার ত্রিশ থেকে চল্লিশ কেজি। উন্নত দেশে যেমন চায়নাতে যদি আপনি এটা মেজার করেন সেটা প্রায় আড়াই শত কেজি এবং ইউরোপিয়ান কান্ট্রিতে দেখলে দেখা যাবে আট নয়শত কেজি কোনো কোনো দেশে আছে। সো এইটা যদি না বাড়ে, না বাড়াতে আমরা বুঝাতে চেয়েছি যে অর্থনৈতিকভাবে আমরা স্বাবলম্বি হচ্ছি কিন্তু অবকাঠামোগত উন্নয়নের দিক দিয়ে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। সো স্টিলের ব্যবহারটা বাড়াতে হবে বাংলাদেশে এবং বাড়ানোর জন্য এটার সার্বিক শুল্ক বলেন, যে যে সাইট বিবেচনা করার সেটা বিবেচনা করে গভর্মেন্টের এখনই এই জিনিসটা সংশোধন করতে হবে। এই জন্য নির্মাণ সামগ্রী যেগুলো আছে শুধু স্টিল না, স্টিলের সাথে রিলেটেড যা আছে সিমেন্ট বলেন, অন্যান্য যা যা আছে এইগুলোর দিকে গভর্মেন্টের অন্য সাইট থেকে ইনকাম করে এই দিকে সুযোগ সুবিধা দিতে হবে। যাতে এইগুলোর মূল্য কম থাকে এবং মানুষ অতি সহজে তার বসতবাড়ি বলেন, তার ইন্ডাস্ট্রি বলেন, তার দরকারি যে কোনো স্ট্রাকচার যাতে সহজে করতে পারে। এইটার কোনো বিকল্প নাই। এই দিকে জোর দেওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প নাই।

আপনার পকেটে টাকা ভোরবেন, অর্থনৈতিকভাবে আপনি উন্নত হবেন কিন্তু আপনার কোনো এসেট নাই, এসেট নাই মিনস আপনার একটা ফ্ল্যাট থাকতে হবে, আপনার একটা বাড়ি থাকতে হবে। কিন্তু এইগুলোর যদি অতি উচ্চ মূল্য হয়, এইগুলো করতে যদি স্ট্রাগল করতে হয় তবে এইগুলোর দিকে কিন্তু মানুষ যাবে না।

কারও পকেটে এক কোটি টাকা আছে বা সমমূল্যের একটা ফ্ল্যাট আছে বা একটা বাড়ি আছে কোনটাতে সে সিকিরউড মনে করবে। সো আমি মনে করি গভর্মেন্টের এই দিকগুলোর দিকে সুনজর দেওয়ার এখনই সময়।

আমরা এলএম স্টিল বিল্ডিং আসলে ২০০১ সাল থেকে স্টিল স্ট্রাকচার কনস্ট্রাকশনের সঙ্গে জড়িত। ঢাকার আশেপাশে অনেক ঘরের স্ট্রাকচার আমরা করেছি এবং সারা বাংলাদেশের সব জায়গায় আমরা কাজ করে থাকি। আমাদের মেইন সেক্টর ছিল ইন্ডাস্ট্রিয়াল বাট রিসেন্টলি আমরা কিছু নতুন টেকনোলজি নিয়ে কাজ করছি। এইগুলো নিয়ে রিসার্চ করি এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে আমরা হাউজিং সেক্টর যেটা লো কস্ট হাউজ, যেটা আমাদের সরকারের চেলেঞ্জ, ওই দিকে আমরা বেশ কিছু ইনোভেটিভ প্রোডাক্ট মার্কেটে ছেড়েছি। ভবিষ্যতে এটা আরও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দিতে পারবো বলে আশা করছি।

তবে আমাদের কিছু রেডিমেট মডিউল আছে বিল্ডিংয়ের এবং বলতে গেলে রেডিমেট হাউজ বলা চলে। একটা উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে, ফার্নিচার কিনলে আপনি ফার্নিচারটা প্যাকেটে করে নিয়ে আসলেন। ক্যাটালড় দেখে আপনি নিজেই লাগাতে পারবেন। আমাদের এই ধরনের একটা প্রোডাক্ট আছে। হাউজিং সেক্টরে একটা ছোট ঘর লাগবে দশ বাই বিশ বা দশ বাই পনের বা পনের বাই বিশ বা আঠার বাই ত্রিশ যা-ই লাগুক এটা শুধু হাউজিং না আপনার স্টোরেজ, লেবার শেট যেকোনো পারপাসে আপনি ব্যবহার করতে পারবেন এবং এটার বিশেষত্ব হলো এটা টেকসই। আমরা পঁচিশ বছরের গ্যারান্টি দিয়ে থাকি। এর মধ্যে কোনো প্রবলেম হবে না এবং আরেকটা বিশেষত্ব হলো আপনি ইচ্ছা হলে এটাকে খুলে রেখে দিতে পারেন আবার শিফটিং ও করতে পারেন।

রেডিমেট হাউজের যদি একটা ছোট স্কেলের বলি, যেমন দশ ফিট বাই দশ ফিটের একটা ঘর। এই ঘরটা এক বছর আগে সত্তর হাজার টাকায় দিতে পারতাম। কিন্তু এটা এখন বেড়ে প্রায় নব্বই হাজার টাকার মতো হয়েছে।

শুল্ক নিয়ে আমার একটাই কথা, যেটা আমাদের ফ্যাক্টরিতে ‘র’ মেটারিয়াল হিসেবে ইউজ হয় তার শুল্ক ‘র’ মেটারিয়াল হিসেবেই যেটার শুল্কের যেমন বিভিন্ন স্লাব থাকে যেটা ‘র’ মেটারিয়ালের স্লাব সেই ‘র’ মেটারিয়ালের স্লাবের মধ্যে আনা হোক। এটাই আমার একমাত্র দাবি।

ইঞ্জিনিয়ার এইচ এম জাহিদুল ইসলাম
সাবেক সাধারণ সম্পাদক
ম্যানুফেকচারার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ।