শেষ ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে ৬০ রানের ব্যবধানে হারালো টাইগাররা

দুর্দান্ত জয় দিয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের টি-টুয়েন্টি সিরিজ শেষ করলো বাংলাদেশ। আজ সিরিজের পঞ্চম ও শেষ ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে ৬০ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। রান বিবেচনায় অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এটিই সর্বোচ্চ ব্যবধানে জয় টাইগারদের। আর নিজেদের টি-টুয়েন্টি ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানের বড় ব্যবধানে জয় বাংলাদেশের।
শেষ ম্যাচ জয়ে পাঁচ ম্যাচের সিরিজ ৪-১ ব্যবধানে জিতলো বাংলাদেশ। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম দ্বিপাক্ষিক সিরিজেই জয়ের স্বাদও পলো টাইগাররা।
পঞ্চম ও শেষ ম্যাচে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করে ২০ ওভারে ৮ উইকেটে ১২২ রান করে বাংলাদেশ। জবাবে ৩৮ বল বাকী থাকতে ৬২ রানে গুটিয়ে যায় অসিরা।
জয় দিয়ে সিরিজ শেষ করার লক্ষ্যে মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নামে বাংলাদেশ। সৌম্য সরকারের পরিবর্তে উদ্বোধনী জুটিতে মোহাম্মদ নাইমের সাথে ইনিংস শুরু করেন মাহেদি হাসান। প্রথম ৪ ওভারে বাংলাদেশকে ৩৫ রান উপহার দেন নাইম-মাহেদি। এরমধ্যে নাইমের ১টি করে চার-ছক্কা ছিলো। মাহেদির ব্যাট থেকে আসে ২টি চার।
পঞ্চম ওভারের তৃতীয় বলে দলীয় ৪২ রানে মাহেদিকে থামান অস্ট্রেলিয়ার স্পিনার অ্যাস্টন টার্নার। ১২ বলে ১৩ রান করেন মাহেদি। এই সিরিজে উদ্বোধনী জুটিতে এই ৪২ রানই বাংলাদেশ দলের সর্বোচ্চ ।
এরপর সাকিব আল হাসানকে নিয়ে সতর্কতার সাথে দলের স্কোর বাড়ানোর পথেই হাচ্ছিলেন নাইম। কিন্তু বেশি দূর যেতে পারেননি তারা। নবম ও দশম ওভারে আউট হন নাইম-সাকিব। ১টি করে চার-ছক্কায় ২৩ বলে ২৩ রান করে ড্যান ক্রিস্টিয়ানের শিকার হন নাইম।
২০ বলে ১১ রান করে অস্ট্রেলিয়ার স্পিনার এডাম জাম্পার শিকার হন সাকিব। তার ইনিংসে কোন বাউন্ডারি বা ওভার বাউন্ডারি ছিলো না।
শুরুটা ভালো হলেও, ৬০ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে বাংলাদেশ। সেই চাপ দূর করার চেষ্টা করেন ধারাবাহিক ব্যর্থতায় চার নম্বরে খেলতে নামা সৌম্য সরকার ও অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। ১২তম ওভারে জাম্পাকে ছক্কা মেরে ভালো কিছুর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন মাহমুদুল্লাহ। কিন্তু ১৪তম ওভারে থেমে যান মাহমুদুল্লাহ। ১৪ বলে ১৯ রান করে আগারের শিকার হন তিনি। সৌম্যর সাথে ২১ বলে ২৪ রান করেন টাইগার নেতা।
অধিনায়কের বিদায়ের ওভারের শেষ বলে ছক্কা হাঁকান সৌম্য। পরের ওভারের চতুর্থ বলে বাউন্ডারি আসে তার ব্যাট থেকে। এতে আজ ভালো কিছু করার আত্মবিশ্বাস পান সৌম্য। কিন্তু দুর্ভাগ্য তার। ক্রিস্টিয়ানের পরের বলে থামতে হয় তাকে। ১৮ বলে ১৬ রান করেন তিনি। প্রথম চার ম্যাচে ১২ রান করেছিলেন এই বাঁ-হাতি।
ছয় নম্বরে নামা উইকেটরক্ষক নুরুল হাসান সুবিধা করতে পারেননি। সিরিজের তৃতীয় ও নিজের অভিষেক ম্যাচে হ্যাট্টিক করা মিডিয়াম পেসার নাথান এলিস আউট করেন নুরুলকে। ১৩ বলে ৮ রান করেন তিনি। ১১০ রানে ষষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হন নুরুল। তখন বাংলাদেশের ইনিংসের ১৪ বল বাকী ছিলো।
অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের দৃঢ়তায় শেষদিকে দ্রুত রান তুলতে পারেনি বাংলাদেশের লোয়ার-অর্ডার ব্যাটসম্যানরা। শেষ ১৪ বলে মাত্র ১২ রান তুলে বাংলাদেশ। এতে ৮ উইকেটে ১২২ রানের সংগ্রহ পায় টাইগাররা।
১১ বলে ১টি ছক্কায় ১০ রান করে এলিসের দ্বিতীয় শিকার হন আফিফ হোসেন। ৮ বলে ১টি চারে ৪ রান করে অপরাজিত ছিলেন মোসাদ্দেক। প্রথম ছয় বলে কোন রানই নিতে পারেননি মোসাদ্দেক। অস্ট্রেলিয়ার এলিস-ক্রিস্টিয়ান ২টি করে উইকেট নেন।
জয়ের জন্য ১২৩ রানের জবাবে শুরুটা ভালো হয়নি অস্ট্রেলিয়ার। অস্ট্রেলিয়া ইনিংসে নিজের প্রথম ও দ্বিতীয় ওভারে আঘাত হানেন বাঁ-হাতি স্পিনার নাসুম আহমেদ। ক্রিস্টিয়ান ৩ ও মিচেল মার্শ ৪ রান করে ফিরেন।
১৭ রানের মধ্যে ২ উইকেট হারানোর পর প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেছিলেন অধিনায়ক ম্যাথু ওয়েড ও বেন ম্যাকডারমট। কিন্তু এই জুটিতে ২১ রানের বেশি যোগ করতে দেননি সাকিব। ২২ রান করা ওয়েডকে থামান তিনি।
ওয়েডের আউটের পর ধ্বস নামে অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসে। সাকিব-সাইফুদ্দিনের বোলিং তোপে ১২ রানের মধ্যে শেষ ৭ উইকেট হারায় অস্ট্রেলিয়া। ,েশষ পর্যন্ত ১৩ দশমিক ৪ ওভারে ৬২ রানে অলআউট হয় অসিরা। টি-টুয়েন্টি ক্রিকেটে এটিই অস্ট্রেলিয়ার সর্বনি¤œ দলীয় রান।
অস্ট্রেলিয়ানদের মধ্যে ওয়েডের পর কেবল ম্যাকডারমটই দুই অংকের কোটা স্পর্শ করেছেন। ১৭ রান করেন তিনি। ম্যাচ ও সিরিজ সেরা নির্বাচিত হওয়া সাকিব ৯ রানে ৪টি ও সাইফউদ্দিন ১২ রানে ৩ উইকেট নেন। ৪ উইকেট নেয়ার পথে টি-টুয়েন্টিতে দ্বিতীয় বোলার হিসেবে ১শ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করলেন সাকিব।