শেষ হলো বিশ্ব পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী সপ্তাহ

আজকের বাজার প্রতিবেদন
র‌্যালি,সেমিনার ও বিনিয়োগ শিক্ষা কাযক্রমসহ ব্যাপক আয়োজনে অনুষ্ঠিত হলো বিশ্ব পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী সপ্তাহ ২০১৭। বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা বলয় সম্প্রসারণের জন্য সচেতনতা বাড়াতে বাংলাদেশে বিনিয়োগকারী সপ্তাহ পালনের উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, বিএসইসি। ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অব সিকিউরিটিজ কমিশন,আইওএসকো’র সদস্য হিসেবে ৭৮টি দেশের সঙ্গে আগেই বাংলাদেশে এ সপ্তাহের উদ্বোধন করা হয়। গেলো ২ অক্টোবর রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমিতে আনুষ্ঠানিকভাবে এর উদ্বোধন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত।
এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ ও ২০১০ সালের ধসের পর যথাযথ উদ্যোগের কারনে আমাদের পুজিবাজার এখন বেশ স্ট্রং অবস্থানে রয়েছে।
তিনি বলেন, ১৯৯৬ ও ২০১০ সালের ধসের পর আমাদের পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। ২০১০ এর ধসের পর আমরা দেখলাম আমাদের স্টক এক্সচেঞ্জের আইন ও নীতিমালায় বেশ দুর্বলতা রয়েছে। তাই উদ্যোগ নিয়ে মাত্র ৩/৪ বছরের মধ্যে প্রয়োজনীয় সকল আইন ও নীতিমালা সংযুক্ত করা হয়। তারপর থেকে আমাদের পুঁজিবাজার বেশ স্ট্রং অবস্থানে রয়েছে। এ কারনে এখন অনেকেই পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছেন। এ আগ্রহ বাড়াতে সাকিব আল হাসান যুক্ত হয়ে আরও ভুমিকা রাখবে বলেও আশা ব্যক্ত করেন অর্থমন্ত্রী।
তিনি নিজের বিনিয়োগের বিষয় তুলে ধরে বলেন, আমি ১৯৬৪ সালে প্রথম বিনিয়োগ করি। পরবর্তীতে দেশ ভাগ হওয়ার সময় আমার ৩৩ হাজার টাকার পুরো বিনিয়োগ নষ্ট হয়ে যায়। এরপর ভয়ে সরে আসি। তারপর আবার বিনিয়োগ করলেও, লাভের মুখ দেখতে পায়নি ফলে ২০০২ সালের পর পুরো সরে আসি।


অর্থমন্ত্রী ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের প্রশংসা করে বলেন, সাকিব আল হাসানের সম্পৃক্ততা বিনিয়োগকারী সপ্তাহের আয়োজনকে আরও প্রাণবন্ত করেছে। সাকিব খুব মূল্যবান কথা বলেছন। বুঝে-শুনে বিনিয়োগ করুন। মন্ত্রী বলেন, সাকিব বিনেয়োগের এই প্রচেষ্টার সঙ্গে যুক্ত হয়ে আমাদের প্রচেষ্টাকে আরও সহজ করে দিল। আপনারা চিন্তাভাবনা করে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করবেন।
এরআগে বিনিয়োগ শিক্ষা কার্যক্রমের এ্যাম্বাসেডর হিসেবে পুঁজিবাজারে জেনে-বুঝে বিনিয়োগের আহবান জানিয়েছেন ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান বলেন, আমি যখন কাউন্টিতে খেলতে যেতাম তখন দেখতাম বিদেশি খেলোয়াররা পড়াশোনা করছে। আমি তাদের জিজ্ঞাসা করতাম এত কী পড়ছো। তারা বলতো আমরা পুঁজিবাজার সম্পর্কে পড়ছি। তাই আমি বলবো- যারা পুঁজিরাজারে বিনিয়োগ করবেন তারা জেনে-বুঝে বিনিয়োগ করবেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব ইউনুসুর রহমান বলেন, ওয়ার্ল্ড সিকিউরিটিজ কমিশনের তালিকায় এরইমধ্যে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশন এ ক্যাটাগরিতে উত্তীর্ণ হয়েছে।
তিনি বলেন, একটি দেশকে এগিয়ে নিতে যে কয়েকটি আর্থিক খাত অবদান রাখে, তার মধ্যে সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ অন্যতম। বাংলাদেশে ৪টি রেগুলিটি অথরিটি রয়েছে। এরমধ্যে পুঁজিবাজারের অবস্থান দ্বিতীয়। এটিকে সমৃদ্ধ করতে বিনিয়োগ সম্পর্কে প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষার আয়োজন করা জরুরী। এছাড়া স্কুলের পাঠ্য বইয়েও, বিনিয়োগ শিক্ষা অধ্যায় সংযুক্ত করার প্রস্তাব করেন ইউনুসুর রহমান। সবাইকে জেনে বুঝে বিনিয়োগ করার আহবানও জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ অ্যান্ড কমিশন, বিএসইসি’র চেয়ারম্যান এম খায়রুল হোসেন জানান, বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা বলয় সম্প্রসারণ বলয় তৈরী করতে বিশ্বের ১৮টি দেশে পালিত হচ্ছে বিশ্ব বিনিয়োগ সপ্তাহ। এর অংশ হিসেবে বাংলাদেশেও আয়োজন করা হয়েছে বিনিয়োগকারী সপ্তাহ।
তিনি বলেন, ১৮টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশই সবার আগে এ আয়োজনে করতে সক্ষম হয়েছে।
বিএসইসি’র চেয়ারম্যান বলেন, বিনিয়োগে সচেতনতা আনতেই এ আয়োজন। অনেক বিনিয়োগকারী মনে করেন, পুজিবাজারে বিনিয়োগ করলেই লাভ হয়। এখানে ঝুকি নেই। এ সকল ভ্রান্ত ধারণা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। একজন বিনিয়োগকারীকে লাভের মুখ দেখাতে পারে, তার জ্ঞান। আর এ জ্ঞান অর্জনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে দেশব্যাপি বিনিয়োগ শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। এ থেকে জ্ঞান অর্জন করে, পুজিবাজারে বিনিয়োগ করলে ঝুঁকি কম থাকবে।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে ২০২১ এবং ভিশন ২০৪১ ঘোষণা করেছেন, তা পূরণ করতে হলে পুজিবাজারের সহযোগীতা লাগবে। পুজিবাজার থেকেই তা পূরণ করা সম্ভব। শুধু ব্যাংকের ওপর নির্ভর করে এগিয়ে য্ওায়া সম্ভব নয়। প্রধানমন্ত্রীর পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পুজিবাজার কাজ করে যাচ্ছে।
বিএসইসি’র চেয়ারম্যান বলেন, পুঁজিবাজারের মূল শক্তি বিনিয়োগকারীরা। তাদের সুরক্ষায় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশন নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। তারই অংশ হিসেবে বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এছাড়া সপ্তাহে ৫ দিন বিনামূল্যে বিনিয়োগ শিক্ষার আয়োজন করা হয়েছে।
বক্তব্যের শেষে পুঁজিবাজার সুরক্ষায় সকল বিনিয়োগকারীসহ পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগীতা কামনা করেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশন, বিএসইসি’র ড. এম খায়রুল হোসেন।

এ সময় তিনি সাকিব আল হাসানকে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের শুভেচ্ছাদূত হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেন।
অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন, বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সাইফুর রহমান।
অনুষ্ঠান শেষে শিল্পকলা একাডেমির সামনে বেলুন ও শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে বিনিয়োগকারী সপ্তাহ ২০১৭ এবং শোভা যাত্রার উদ্বোধন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। । পরে শোভা যাত্রাটি জাতীয় প্রেসক্লাব ঘুরে শিল্পকলা একাডেমেতি এসে শেষ হয়। এতে বিনিয়োগ শিক্ষা কার্যক্রমের ব্যান্ড অ্যাম্বাসেডর, বিশ্ব ক্রিকেট অল রাউন্ডার সাকিব আল হাসানসহ পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা অংশ নেন।
বিনিয়োগকারী সপ্তাহের দ্বিতীয় দিন ৩ অক্টোবর দুপুরে রাজধানীর বনানীতে ফারইষ্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে অনুষ্ঠিত ‘বিনিয়োগ ও ঝুঁকি’ বিষয়ক এক সেমিনারে বক্তারা বলেন, পুঁজিবাজার রাতারাতি কোটিপতি হওয়ার জায়গা নয়।
তারা বলেন পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ একদিনের জন্য নয়, এটি হতে হবে দীর্ঘমেয়াদী। ডে ট্রেডিং বা দৈনিক শেয়ার ক্রয়-বিক্রয়কে ঠিক বিনিয়োগ বলা যায় না। মান সম্মত কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে সময় দিতে পারলে ভালো রিটার্ন পাওয়া সম্ভব। সেটাই মূলত বিনিয়োগ।
বাংলাদেশ সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ,সিডিবিএল এ সেমিনারের অয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে সিডিবিএল চেয়ারম্যান শেখ কবির হোসেন বলেন, আমরা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করবো, রাতারাতি বড় লোক হওয়ার জন্য নয়। কারণ রাতারাতি অনেক সম্পদের মালিক হওয়ার জায়গা পুঁজিবাজার নয়। তিনি বলেন, মানসম্মত শেয়ারে বিনিয়োগ করে সময় দিন। তাহলে একটি নির্দিষ্ট সময়ের পরে ভালো রিটার্ন আসবে।বিনিয়োগ করে ধর্য ধারণ করতে হবে।

এ সময় সিডিবিএলের ভাইস চেয়ারম্যান একেএম নুরুল ফজল বুলবুল বলেন, আপনার বিনিয়োগ হতে হবে দীর্ঘমেয়াদী। ডে ট্রেডিং বা দৈনিক শেয়ার ক্রয়-বিক্রয়কে ঠিক বিনিয়োগ বলা যায় না। দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ হলে ভালো রিটার্ন পাওয়া সম্ভব।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক মাহমুদ ওসমান ইমাম। তিনি পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ এবং এর ঝুঁকি নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি তার বক্তব্যে মার্কেট ঝুঁকি, ব্যবসা ঝুঁকি, ইনফ্লোশনারি ঝুঁকি, লিক্যুইডিটি ঝুঁকি, কনসেনট্রেশন ঝুঁকি, ক্রেডিট ঝুঁকি এবং হোরায়জন ঝুঁকির কথা তুলে ধরেন। এছাড়া তিনি কিভাবে এ ধরনের ঝুঁকি কমিয়ে আনা যায় তা তুলে ধরেন।
এসময় ফারইষ্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (এফআইইউ) ভাইস চ্যান্সেলর ড.নাজমুল করিম চৌধুরী, এফআইইউ এর ব্যবসায় অনুষদের ডিন ড. নেসার আহমেদ, সিডিবিএলের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক শুভ্র কান্তি চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
সেমিনারে এফআইইউ এর ব্যবসায় অনুষদের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন।
বিশ্ব পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী সপ্তাহের ব্যাপক আয়োজনের তৃতীয় দিন ৪ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হয় বেশকিছু সেমিনার। এই দিন রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে ‘বিনিয়োগ ও ঝুকি’ বিষয়ক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি’র কমিশনার অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন নিজামী বলেন, কারসাজি করলে কঠোর হবে
পুঁজিবাজারে বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে কোনো কোম্পানি বাজারের আসার ক্ষেত্রে কারসাজি হলে কঠোর হবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। এর জন্য যদি আইনি সংস্কারেরও প্রয়োজন হয় তবে তাই করা হবে।
তিনি বলেন, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীর স্বার্থ রক্ষার জন্য কাজ করছে বাংলাদেশ সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন,বিএসইসি। তাদের সুরক্ষা দেওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির আইনি দায়িত্ব। এজন্য কয়েক বছর ধরে আমরা আইনি সংস্কার করেছি। যার কারণে পুঁজিবাজার এমন ভালো অবস্থানে আসতে পেরেছে। এর সুফল এখন বিনিয়োগকারীরা পেতে শুরু করেছে।
নিজামী বলেন, আমরা এখন দেখি একটা কোম্পানি প্রত্যাশার বাইরে প্রিমিয়াম পাচ্ছে। যদিও প্রতিযোগিতার মাধ্যমে এই প্রিমিয়াম নির্ধারণ করছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা। আমরা এই বিডিং গভীরভাবে পর্যবেক্ষণে রেখেছি। এখানে প্রাতিষ্ঠানিক কারসাজি হলে তা বন্ধে কঠোর উদ্যোগ নেওয়া হবে। প্রয়োজনে আইনেরও সংস্কার করা হবে।
বিএসইসির এ কমিশনার বলেন, বিনিয়োগ শিক্ষার মাধ্যমে এখন বিনিয়োগকারীরা বুঝতে পারছে কার কী দায়িত্ব; বিএসইসির কী করার আছে; কী করছে। বিনিয়োগকারীদের এ সম্পর্কে যত বেশি জ্ঞান থাকবে, তত বেশি বাজার বুঝতে পারবে।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন লংকাবাংলা ফাইন্যান্সের গবেষণা প্রধান নুরুল হাই। তিনি পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ ও ঝুঁকি নিয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন। বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে কী ধরণের ঝুঁকি আছে; তা কিভাবে ব্যবস্থাপনা করতে হবে তা নিয়ে আলোচনা করেন তিনি।
সেমিনারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগের সহকারি অধ্যাপক হুসাইন আহমেদ এনামুল হুদা বলেন, কোনো বিনিয়োগের ঝুঁকি কমানোর ক্ষেত্রে বড় কাজ হবে বৈচিত্রকরণ করা।
তিনি বলেন, কতিপয় শেয়ারের মধ্যে একটি নির্দিষ্ট অর্থ বিনিয়োগ করাই বৈচিত্রকরণ নয়। বৈচিত্রকরণ হলো আপনার মোট অর্থকে বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করা।


সেমিনারে সমাপনী বক্তব্যে কমিশনার আমজাদ হোসেন বলেন, ধৈর্য্যরে সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ একজন বিনিয়োগকারীকে ভালো রিটার্ন দিতে পারে। সচেতনতার সাথে জেনে বিনিয়োগ করতে তিনি সবার প্রতি আহ্বানও জানান।
সেমিনারে আলোচক হিসেবে ছিলেন বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমান, পিএলএফএস ইনভেস্টমেন্টের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল মোক্তাদির, লংকাবাংলা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের সহকারি ভাইস প্রেসিডেন্ট এমএ ফয়সাল মাহমুদ।
একই দিন অপর এক সেমিনারে বক্তারা বলেন, আগামীর দিন হবে পুঁজিবাজারের। এই দিনটির জন্য অপেক্ষায় পুঁজিবাজার। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে পুঁজিবাজারের বিকল্প নেই। দেশের বিনিয়োগ বাড়াতে পুঁজিবাজারই হতে পারে অন্যতম হাতিয়ার।
বিনিয়োগ ও ঝুঁকি বিষয়ক এ সেমিনারে মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন ও সঞ্চালন করেন সিটি ব্যাংক ক্যাপিটাল রিসোর্সেস এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এরশাদ হোসাইন। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক আনোয়ারুল ইসলাম, ডিএসই ব্রোকারেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আহমেদ রশিদ লালী, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের বাংলাদেশের প্রধান আলমগীর মোর্শেদ ও প্রাণ আরএফএলের অর্থ পরিচালক উজমা চৌধুরী।
মূল প্রবন্ধে এরশাদ হোসেন বিনিয়োগ কী এবং কেন প্রয়োজন, বিনিয়োগের ঝুঁকি এবং বিনিয়োগের বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন।
এরশাদ হোসেন বলেন, উৎপাদশীল খাতে অর্থ সরবরাহ করে দেশের উন্নয়নে সক্রিয় অংশগ্রহণের অন্যতম উপায় হলো পুঁজিবাজার। লাখো মানুষের বিনিয়োগের সুযোগ ও কর্মসংস্থান তৈরি করে পারে পুঁজিবাজার। বিনিয়োগকারীদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সঞ্চয় দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে বড় অবদান রাখতে পারে।
তিনি বলেন, পুঁজিবাজার ছাড়াও বিনিয়োগের আরও কয়েকটি খাত আছে। সেই খাতের তুলানায় এখানে মুনাফাও বেশি সঙ্গে ঝুঁকিও আছে। আর এখানে বিনিয়োগের মাধ্যমে দেশের প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখতে পারে বিনিয়োগকারীরা। আগামী দিনে দেশের বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য পুঁজিবাজারকে ব্যবহার করা যেতে পারে বলেও মনে করেন তিনি।
বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ২০১০ সালের পুঁজিবাজারে ধ্বসের পর ব্যাপক সংস্কার হয়েছে। এই সংস্কারের ফল আগামী দিনে পাবে বিনিয়োগকারীরা। তবে বিনিয়োগের আগে দেখে শুনে ও বুঝে বিনিয়োগের কথা বলেন তিনি। তিনি বলেন, বিনিয়োগকারীদের কথা মাথায় রেখে ২০০৬ সালে তালিকাভুক্ত কোম্পানিতে কর্পোরেট গভর্ন্যান্স পরীক্ষামূলকভাবে চালু করে কমিশন। পরবর্তীতে কিছু সংশোধন করে ২০১২ সালে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আগামীতে কিছু বিষয় সংশোধন করে আরও যোগ উপযোগী করা হবে।
বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা সূচকের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ এই তালিকায় এখন ৯৯তম। এটি সম্ভব হয়েছে দেশের অবকাঠামো উন্নয়ন, কোম্পানির দক্ষতা বৃদ্ধি এবং কর্পোরেট গভর্ন্যান্স শক্তিশালীর জন্য।
ডিএসই ব্রোকারেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আহমেদ রশিদ লালী বলেন, একটি স্থিতিশীল বাজার গড়ার প্রত্যয় নিয়ে কাজ করছে বিএসইসি, ডিএসই, সিএসই এবং মার্চন্টে ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্টরা। বাজার এখন যথেষ্ঠ পরিপক্ক। এটি সম্ভব হয়েছে সরকারের ইচ্ছার জন্যই। তবে এখনো কিছু সমস্যা আছে। সেখানে রেগুলেটরদের নজর দেওয়া প্রয়োজন।
তিনি বলেন, এর মধ্যে অন্যতম হলো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য আগে বাজারে চলে আসা। আরকেটি হলো কোম্পানির ওয়েবসাইটের আপটেড তথ্য না পাওয়া। বিএসইসিকে এই জায়গায় নজর দেওয়ার আহবান জানান তিনি। আহমেদ রশিদ লালী আরও বলেন, দেশের উন্নয়ন যে হারে হচ্ছে, পুঁজিবাজারের প্রবৃদ্ধি সেহারে হয়নি। তবে যে ধরণের বড় বড় প্রকল্প হচ্ছে তা বাস্তবায়ন করতে পুঁজিবাজারকে ব্যবহার করলে দিন বদলে যাবে এ খাতের। সব মিলিয়ে দেশের প্রবৃদ্ধির সঙ্গে পুঁজিবাজার মিলে গেলে আগামীর দিনটি হবে পুঁজিবাজারের বা এই খাতের বিনিয়োগকারীদের।স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের বাংলাদেশের প্রধান আলমগীর মোর্শেদ বলেন, আমাদের বাজার শুধু ইক্যুইটি নির্ভর। জিডিপিতে এই খাতের অবদান বাড়াতে বন্ড মার্কেকে সক্রিয় করার আহ্বান জানান তিনি।

প্রাণ আরএফএলের অর্থ পরিচালক উজমা চৌধুরী বলেন, তথ্য বা জ্ঞানই টাকা। সুতরাং কোনো জায়গা থেকে আয় করতে হলে সে সম্পর্কে জানার বিকল্প নেই। তিনি বলেন, উন্নত বিশ্বের আইন যত নমনীয় আমাদেরটা তত নয়। উন্নয়নের চাকা ঘুরাতে হলে সবাইকে এক হয়ে কাজ করতে হবে। উন্নয়নের জন্য পুঁজিবাজারকে বাজারকে কাজে লাগানো যেতে পারে।

এই দিন বিনিয়োগকারী সপ্তাহ উপলক্ষ্যে আয়োজিত মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান বলেন, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করার মতো ভালো স্ক্রিপ্ট নেই। এ কারণে অবসরপ্রাপ্ত লোকজন সঞ্চয় ও ফিক্ট ইনকামে বিনিয়োগ করেন বলেও মনে করে তিনি। এই অবস্থায় তার পরামর্শ, সাধারণ বিনিয়োগকারীদের টানতে হলে বাজারে ভালো কোম্পানিগুলোকে আনতে হবে।

মশিউর রহমান বলেন, এখন বাজারে বিনিয়োগের মতো ভালো স্ক্রিপ্ট নেই। বিশেষ করে স্বল্প ও মধ্য আয়ের লোকজনের জন্য আস্থাশীল কোম্পানি।

পুঁজিবাজারের ভালো কোম্পানি না থাকায় অবসরপ্রাপ্ত লোকজন সঞ্চয় ও ফিক্সড ইনকামে বিনিয়োগ করেন বলেও মনে করে প্রধানমন্ত্রীর এই অর্থনৈতিক উপদেষ্টা। তিনি বলেন, দেশে প্রবৃদ্ধি বাড়াতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। এই বিনিয়োগ বেশি করবে প্রাইভেট খাতের লোকজন। বিনিয়োগের প্রয়োজন মেটাতে পুঁজিবাজারের বিকল্প নেই।

এ সময় স্বাগত বক্তব্যে বিএসইসির চেয়াম্যান ড. এম খায়রুল হোসেন বাংলাদেশে যত বড় বড় প্রকল্প চলমান আছে; অর্থবাজার তার জন্য যথেষ্ট না। এর জন্য পুঁজিবাজারকে ব্যবহার করতে হবে। এ বাজারকে ব্যবহার করলেই বাংলাদেশ ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হতে পারবে।

খায়রুল হোসেন বলেন, দুটি বিষয়কে সামনে নিয়ে বিশ্বব্যাপী এই মেলা হচ্ছে। এর একটি হলো বিনিয়োগ শিক্ষা ও সুরক্ষা অন্যটি হলো সব রেগুলেটরদের আইন কানুনের বিষয়ে সকলকে অবগত করা। তিনি বলেন, ২০১০ সালের ধসের পর বাজারে অনেক সংস্কার হয়েছে। কিন্তু এতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস আসেনি। এর কারণ খুঁজতে গিয়ে দেখা গেছে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে শিক্ষার অনেক বড় ঘাটতি আছে। এর সমাধানের জন্য আমরা দেশব্যাপী বিনিয়োগ শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করেছি।

ড. এম খায়রুল হোসেন বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত দেশে রুপান্তরিত হওয়ার পথে এগিয়ে যাচ্ছে। এ লক্ষ্য পূরণে বিনিয়োগকারীদের জ্ঞান আরও সানিত করে বিনিয়োগ করতে হবে।

অনুষ্ঠানে বিএসইসি কমিশনার অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন নিজামী, ড. স্বপন কুমার বালা, আমজাদ হোসেনসহ কমিশন ও পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন,বিএসইসি এ মেলার আয়োজন করে।

একই দিন দি ইন্সটিটিউট অফ কস্ট এন্ড ম্যানেজমেন্ট একাউন্টেন্টস অফ বাংলাদেশ,আইসিএমএবি য়ে আয়োজিত আরেকটি সেমিনারে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড একচেঞ্জ কমিশন বা বিএসইসি’র চেয়ারম্যান ডঃ এম খায়রুল হোসেন বলেছেন,২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত দেশে রূপান্তরিত হওয়ার পথে এগিয়ে যাচ্ছে। এ লক্ষ্য পূরণ করতে হলে পুঁজিবাজার ব্যবহার করতে হবে।

এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আইডিএলসি ফাইন্যান্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ খান।

এসময় আলোচক হিসেবে ছিলেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন,বিএসইসি’র কমিশনার অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন নিজামী, ড. স্বপন কুমার বালা,ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ,ডিএসই’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক কেএএম মাজেদুর রহমান প্রমুখ।

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন আইসিএমএবি সভাপতি জামাল আহমেদ চৌধুরী। সমাপনী বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান খান।

ডঃ এম খায়রুল হোসেন বলেন, পুঁজিবাজারে উঠানামা থাকবে- এটা স্বাভাবিক। এ বাজারে ঝুঁকি নিয়েই বিনিয়োগ করতে হবে। আর ঝুঁকি নেওয়ার আগে নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে। জেনে বুঝে বিনিয়োগ করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে যত বড় বড় প্রকল্প চলমান আছে; অর্থবাজার তার জন্য যথেষ্ট না। এর জন্য পুঁজিবাজারকে ব্যবহার করতে হবে। এ বাজারকে ব্যবহার করলেই বাংলাদেশ ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হতে পারবে।

খায়রুল হোসেন বলেন, ২০১০ সালের ধ্বসের পর বাজারে অনেক সংস্কার হয়েছে। কিন্তু এতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস আসেনি। এর কারণ খুঁজতে গিয়ে দেখা গেছে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে শিক্ষার অনেক বড় ঘাটতি আছে। এর সমাধানের জন্য আমরা দেশব্যাপী বিনিয়োগ শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করি।

তিনি বলেন, নিজের টাকা নিজেকেই পাহারা দিতে হবে। এর জন্য পড়াশুনার বিকল্প নেই। যার জ্ঞানের গভীরতা যত বেশি হবে, তিনি তত ভালো করতে পারবেন। তবে আইনগত কোনো সমস্যা থাকলে বিএসইসি তার সমাধান করবে।

মূলপ্রবন্ধে আরিফ খান বলেন, বিনিয়োগের কয়েকটি জায়গা আছে। তার মধ্যে হলো আবাসন,স্বর্ণ,ফিক্সড ইনকাম বিনিয়োগ ও পুজিবাজার। এর মধ্যে গত কয়েক বছরে ব্যপক হারে আবাসন,স্বর্ণ,ফিক্সড ইনকাম বিনিয়োগে খারাপ পরিস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তবে পুঁজিবাজার গত ৩ বছরের গড় প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৭ শতাংশ।

তিনি বলেন, গত ৮ বছরের হিসাব করলে দেখা যায়, পুঁজিবাজারে গড় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৫ দশমিক ৫ শতাংশ। তবে আমাদের বিনিয়োগকারীরা ৭ দিনেই রিটার্ন চান। ফলে তারা লোকসান করে। পুঁজিবাজার হলো দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগের জায়গা। যারা এভাবে কররবে তারাই এখান থেকে ভালো মুনাফা নিতে পারবে।

অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন নিজামী বলেন, ২০১০ সালের ধ্বসের পর এই কমিশন বাজারে ব্যাপক সংস্কার করেছে। ফলে আইওস্কোর ১৫০টি দেশের মধ্যে ৯৯ তম অবস্থানে আসতে পেরেছে। পুঁজিবাজারকে একটি স্থিতিশীয় জায়গায় দাঁড় করাতে সক্ষম হয়েছে।

তিনি বলেন, আমাদের পুঁজিবাজার অনেক সম্ভাবনাময়। এখান থেকে টাকা নিয়ে দেশের শিল্পায়ন করার যথেষ্ট সুযোগ আছে।

৫ অক্টোবর

বিনিয়োগকারী সপ্তাহের চতুর্থ দিন রাজধানীর শিল্পকলা মিলনায়তনে ‘বিনিয়োগের বিভিন্ন পণ্য ও খাত’ বিষয়ক সেমিনারে বক্তারা বলেন, আগামীর পুঁজিবাজার স্থিতিশীল ও গতিশীল করতে চাইলে শিগগিরই বন্ড মার্কেট চালু করা জরুরি। কারণ ইক্যুইটি মার্কেটে ওঠা-নামা বেড়ে গেছে।

তারা বলেন, বিনিয়োগকারীরা বন্ড মার্কেটে বিনিয়োগ সরাতে পারেন। এতে দ্রুত বাজারের স্থিতিশীলতা আসে।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আইডিএলসি সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সাইফুদ্দিন। তিনি বাংলাদেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিভিন্ন খাত ও এর প্রবৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা করেন। একইসঙ্গে বাজারে নতুন প্রোডাক্ট আনার ক্ষেত্রে ডেরিভেটিভস, কমোডিটিস, ইটিএফসহ বিভিন্ন পণ্য নিয়ে আলোচনা করেন।

সেমিনারে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক আশরাফুল ইসলাম বলেন, ২০১২ সালের আগে পুঁজিবাজারে বন্ড মার্কেটের বিধিমালা তৈরি করা হয়। এর আগে অবশ্য বন্ড মার্কেট নামে কোনো কিছু ছিল না। এরপর ২০১৫ সালে ওই আইনের কিছুটা সংশোধন করা হয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের মার্কেটে ২০০৫ সালে কিছু বন্ড তালিকাভুক্ত হয়ে আছে। তবে লেনদেন হয় না। কারণ এখানে বন্ড মার্কেট ডেভেলপড হয়নি।

সেমিনারের প্যানেল আলোচক ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট শাকিল রিজভী বলেন, ভালো বন্ড মার্কেট থাকলে ইক্যুইটি মার্কেটের ওঠানামা কম হয়। ইক্যুইটি মার্কেটে ওঠানামা বেশি থাকলে বিনিয়োগকারীরা বন্ড মার্কেটে বিনিয়োগ সরিয়ে নিতে পারেন। তিনি বলেন, অন্যান্য দেশে মোট লেনদেনের ৪০ থেকে ৫০ শতাংশই হয়ে থাকে বন্ড মার্কেটে; যেখানে বাংলাদেশে এই মার্কেট চালুই নেই।

এ সময় ভিআইপি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বলেন, স্টক মার্কেটের জন্য বন্ড মার্কেট গুরুত্বপূর্ণ। তবে বন্ডসহ ডেরিভেটিভস মার্কেট চালু করতে গেলে ইক্যুইটি মার্কেটকে আরও ভাইবারেন্ট করতে হবে।

আইডিএলসি ইনভেস্টমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মনিরুজ্জামান ডেরিভেটিভস মার্কেট নিয়ে বলেন, ডেরিভেটিভস মার্কেটকে প্রতিষ্ঠা করতে হলে আগে ইক্যুইটি মার্কেটকে সাবলীল করতে হবে। কারণ এই মার্কেট অনেক ঝুঁকি বহন করে। এখানে মার্কেট মেন্যুপুলেটরদের প্রভাব অনেক বেশি থাকে। এজন্য প্রথমে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সুযোগ কম রেখে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের দিয়ে শুরু করা উচিত।

একই দিন বিকেলে রাজধানীর শিল্পকলা মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট ও সুরক্ষা’ বিষয়ক এক সেমিনারে বক্তারা বলেন, আইন আছে। তবে তার পূর্ণ প্রয়োগ না থাকায় দেশের পুঁজিবাজারে ভালো কোম্পানি আসছে না। তাই স্থানীয় মৌলভিত্তি সম্পন্ন কোম্পানি বাজারে আনতে ইস্যু ব্যবস্থাপকদের আরও যতœশীল হতে হবে।

সেমিনারে প্যানেল আলোচনায় ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি স্কুল অব বিজনেস অ্যান্ড ইকোনমিকসের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মুসা বলেন, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রে যে আইন রয়েছে; তার পূর্ণ পরিপালন করা হয় না।

আইনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আইনে বলা আছে, ৩০ কোটি টাকার বেশি পরিশোধিত মূলধন হলে ওই কোম্পানিকে বাজারে তালিকাভুক্ত হতে হবে। কিন্তু বাস্তবচিত্রে তা দেখা যায়। অনেক কোম্পানির পরিশোধিত মূলত ৩০ কোটি টাকা পার হলেও তারা বাজারে আসছে।

তিনি বলেন, পুঁজিবাজারের প্রবৃদ্ধি বাড়াতে হলে তাই এ ধরণের কোম্পানিকে বাজারে আনতে হবে। এক্ষেত্রে আইনের পূর্ণ প্রয়োগ করতে হবে।

মোহাম্মদ মুসা বলেন, মৌলভিত্তি সম্পন্ন কোম্পানির শেয়ার কিনতে চাইলে আপনাকে দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগ করতে হবে। কোম্পানির গুণগতমান না বাড়লে সেই কোম্পানির শেয়ার কিনে মুনাফা পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। এজন্য ঝুঁকির পরিমাণ বিবেচনা না করে শেয়ার কেনা উচিত নয় বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ব্র্যাক ইপিএল স্টক ব্রোকারেজ লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শরীফ এমএ রহমান। তিনি বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট ও সুরক্ষা বিষয়ে বক্তব্য উপস্থাপন করেন। এসময় তিনি বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের সার্বিক অবস্থা, প্রবৃদ্ধি, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের অবস্থাসহ আগামীর পুঁজিবাজার নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা তুলে ধরেন।

তার প্রবন্ধের ওপর ভিত্তি করে বক্তব্য রাখেন ব্র্যাক ইপিএল ইনভেস্টমেন্টের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা দিদারুল হক খান। তিনি বলেন, যেসব কোম্পানি বাজারে আসলে প্রবৃদ্ধি বাড়বে; সে রকম কোম্পানি আসছে কম।

বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের উন্নতির জন্য দেশীয় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের দ্বায়িত্ব নিতে হবে। কারণ বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশের পুঁজিবাজারকে ভালোবাসে না। তারা যে দেশে রিটার্ন বেশি পায় সেই দেশেই তাদের বিনিয়োগ স্থানান্তর করে।

এসময় অর্থ মন্ত্রণালয়ের যগ্ম সচিব নাসির উদ্দিন আহমেদ, বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক এম হাসান মাহমুদ, ভিআইপি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বক্তব্য রাখেন।

এদিন বিকেলে এক সেমিনার ও মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম.এ মান্নান পুঁজিবাজারের উন্নয়নে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন,বিএসইসি’র দেওয়া ক্ষমতার সবটুকু ব্যবহার করার জন্য আহ্বান জানান।

এম.এ মান্নান বলেন, বিএসইসির কার্যক্রমে সরকার সন্তুষ্ট। এখন আর আগের মত বদনাম নেই। এটি সম্ভব হয়েছে বিএসইসির কর্মকর্তাদের দূরদর্শী চিন্তার কারণে। পুঁজিবাজারের উন্নয়নে সরকার বিএসইসিকে যে ক্ষমতা দিয়েছে তার সবটুক ব্যবহার করতে পারেন। সব বিষয়ে আমাদের কাছে আসার প্রয়োজন নেই।

বিএসইসি নিয়ন্ত্রক নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, সংস্থাটি নিয়ামকের ভূমিকা পালন করছে। এই নিয়ামকের ভূমিকায় থেকে তারা ২০১০ সালের পর অনেক সংস্কার করেছে। এই সংস্কারের মাধ্যমে তারা পুঁজিবাজারকে একটি স্থিতিশীল জায়গায় দাঁড় করাতে সক্ষম হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, সংস্কারের মাধ্যমে বিএসইসি ফুলের বাগানে ফুল ফুটানোর ব্যবস্থা করেছে। তবে বিনিয়োগের আগে সবকিছু দেখে শুনে বিনিয়োগ করার উপরও জোর দেন তিনি।

স্বাগত বক্তব্যে বিএসইসির চেয়াম্যান অধ্যাপক ড. এম খায়রুল হোসেন বলেন, অবকাঠামোর দিক থেকে আমাদের পুঁজিবাজার উন্নত বিশ্বের মতো। এখানে রিটার্নও বেশি। তবে এর জন্য ঝুঁকি কমিয়ে বিনিয়োগ করতে হবে।

পুঁজিবাজারের আগামীর ভবিষ্যৎ অনেক ভালো উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা অনেক সময় ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের মত আচরণ করে। এর থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

তিনি বলেন, আমরা সবসময় থাকবো না। আজ আছি তো কাল নেই। কিন্তু বিনিয়োগকারীরা সবসময় থাকবেন। আমরা চাই বাজারটাকে এমন অবস্থানে রেখে যেতে চাই, যেন চলে গেলেও তারা আমাদের মনে রাখে। এ জন্য যত ধরেণের সংস্কার করা প্রয়োজন, বিনিয়োগকারী ও পুঁজিবাজারের স্বার্থে সবই করার কথা বলেন বিএসইসির চেয়াম্যান।

এ সময় বিএসইসি কমিশনার অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন নিজামী, ড. স্বপন কুমার বালা, আমজাদ হোসেনসহ কমিশন ও পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।

৬ অক্টোবর

পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী সপ্তাহের পঞ্চম দিন শুক্রবার ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট অব বাংলাদেশ,আইসিএবি’র উদ্যোগে আয়েজিত ‘পুঁজিবাজার ও অর্থনীতি: বিনিয়োগকারীদের ভূমিকা’ বিষয়ক সেমিনারে নিয়ন্ত্রক সংস্থাসহ পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা বলেন, তালিকাভুক্ত কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনের বিশ্বাসযোগ্যতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিতের ক্ষেত্রে চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
স্বচ্ছ প্রতিবেদনের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের সঠিক দিকনির্দেশনার দায়িত্বও পেশাগত হিসাববিদদের। ফলে বিনিয়োগকারীদের এবং পুঁজিবাজারের স্বার্থ রক্ষায় নিরীক্ষকদের আরো পুজিবাজারের স্বার্থে নিরীক্ষকদের আরো সচেতন হওয়া জরুরি বলে মনে করেন পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন,বিএসইসি’র চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের অধ্যাপক প্রশান্ত কুমার ব্যানার্জি। অন্যদের মধ্যে বিএসইসির কমিশনার ড. স্বপন কুমার বালা ও মো. আমজাদ হোসেন, নির্বাহী পরিচালক মো. সাইফুর রহমান এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কেএএম মাজেদুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। সেমিনার সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ, সিএসই’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সাইফুর রহমান মজুমদার।

বিএসইসির চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেন বলেন, মুনাফা ও ঝুঁকির বিষয় বিবেচনা করে বিদেশীরা বিনিয়োগ করে থাকেন। এজন্য স্বচ্ছ আর্থিক প্রতিবেদনের গুরুত্ব অপরিসিম। ফলে আর্থিক প্রতিবেদনে বৈশ্বিক মান বজায় রাখার মাধ্যমে নিরীক্ষকরা বিদেশী বিনিয়োগ বাড়ানোর ক্ষেত্রে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে পারেন। এ বিষয়টি নজর দিয়ে তাদের আরো বেশি সচেতন হতে হবে।

দেশের পুঁজিবাজারের অবস্থান তুলে ধরে এম খায়রুল হোসেন বলেন, সেপ্টেম্বরের পরিসংখ্যান অনুসারে, জিডিপিতে পুঁজিবাজারের অবদান ২১ শতাংশ। বিগত বছরের তুলনায় বাজার মূলধন বাড়লেও তা দেশের অর্থনেতিক প্রবৃদ্ধি সঙ্গে আনুপাতিক হারে বাড়েনি। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধারাবাহিক হলেও জিডিপিতে পুঁজিবাজারের অবদান কমেছে। পুঁজিবাজারের উন্নয়ন ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণে কয়েক বছরে বিভিন্ন আইনি ও কাঠামোগত সংস্কার করা হয়েছে। ফলে পুঁজিবাজার বর্তমানে একটি স্থিতিশীল পর্যায়ে এসেছে। এখন বিনিয়োগ শিক্ষার মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের সচেতন করতে পারলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সমানভাবে চলতে পারবে দেশের পুুঁজিবাজার।

দেশের পুঁজিবাজারের ভবিষ্যৎ আশাব্যঞ্জক উল্লেখ করে বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, সম্প্রতি সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জের কর্মকর্তারা দুই স্টক এক্সচেঞ্জের কৌশলগত বিনিয়োগকারী হওয়ার জন্য আগ্রহ দেখিয়েছেন। ভবিষ্যতে বাংলাদেশে সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ,এফডিআই এবং বিদেশী পোর্টফোলিও বিনিয়োগ,এফপিআই বাড়ার সম্ভাবনার কারণেই এমনটি হয়েছে। এটি আমাদের পুঁজিবাজারের জন্য ইতিবাচক।

অনুষ্ঠানে বিএসইসির কমিশনার ড. স্বপন কুমার বালা বলেন, আর্থিক প্রতিবেদনের মাধ্যমে পেশাদার হিসাববিদরা পুঁজিবাজারে ভূমিকা রাখছেন। তাই বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় তাদের অনেক বেশি ভূমিকা রাখার সুযোগ রয়েছে। তালিকাভুক্ত কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে বিএসইসির উদ্যোগের সঙ্গে আইসিএবি যৌথভাবে কাজ করছে।

বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর তালিকাভুক্তিতে অনাগ্রহের বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিদেশী বিনিয়োগ উৎসাহিত করার নীতির কারণে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তিতে সরকার কঠোর হয় না। তবে তাদের পুঁজিবাজারে নিয়ে আসতে কৌশল নির্ধারণে কাজ করছি আমরা।

কেএএম মাজেদুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হলেও পুঁজিবাজারের মূলধনের সঙ্গে জিডিপির অনুপাতে আমরা বেশ পিছিয়ে। জিডিপিতে পুঁজিবাজারের অবদান বাড়াতে সরকার, নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও স্টক এক্সচেঞ্জ চেষ্টা করছে। বিভিন্ন নতুন পণ্য প্রচলন ও বিধিবিধান প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আর্থিক প্রতিবেদনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জনের মাধ্যমে নিরীক্ষকরাও এক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারেন।

স্বাগত বক্তব্যে আইসিএবির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোন্তফা কামাল এফসিএ বলেন, বিনিয়োগকারীরা অনেক সময় গুজবের ভিত্তিতে বিনিয়োগ করে ক্ষতিগ্রস্ত হন। পরে এজন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও অন্যদের দোষারোপ করেন। তাই বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে বিনিয়োগ শিক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

৭ অক্টোবর

বিনিয়োগ সপ্তাহের ৬ষ্ঠ দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় অনুষদ মিলানায়তনে আয়োজিত সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং এবং বিমা বিভাগের অধ্যাপক আবু তালেব সময়, রিটার্ন এবং ঝুঁকি বিবেচনা করে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করার পরামর্শ দেন।

তিনি বলেন, প্রধানত তিনটি বিষয়কে বিবেচনায় নিয়ে পুঁজিবাজারো বিনিয়োগ করতে হবে। বিষয়গুলো হল- সময়, রিটার্ন এবং ঝুঁকি।তবে এর বাইরেও কোম্পানির শেয়ারপ্রতি আয়, সম্পদ মূল্য এবং ব্যবস্থাপনাকেও বিবেচনায় রাখতে হবে। এতেই পুঁজিবাজার থেকে সফলতা পাওয়া সম্ভব।

বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ) এ সেমিনারের আয়োজন করে।

বিএমবিএর সভাপতি ছায়েদুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক  মোঃ সাইফুর রহমান। মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএসইসির পরিচালক মো. রেজাউল করিম। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন, বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মাহবুবুল আলম, বিএমবিএ সাধারণ সম্পাদক খায়রুল বাশার আবু তাহের মোহাম্মদসহ পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কোম্পানির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

অধ্যাপক আবু তালেব বলেন,পুঁজিবাজার হলো ঝুঁকির বাজার। এখানে অন্য খাতের মত বিনিয়োগ করলে হবে না। পুঁজিবাজার থেকে মুনাফা পেতে হলে বুঝে-শুনে বিনিয়োগ করতে হবে।

সম্ভাবনাময় পুঁজিবাজারের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশের প্রবৃদ্ধি বাড়াতে পুঁজিবাজারের কোনো বিকল্প নেই। শিল্পায়নের জন্য পুঁজিবাজারকে কাজে লাগাতে হবে। পুঁজিবাজারকে কাজে লাগিয়ে উন্নত বিশ্বের স্বপ্ন বাস্তবায়ন সম্ভব। আর শিল্পায়নের জন্য পুঁজিবাজারকে কাজে লাগাতে পারলে দেশে হলমার্ক এবং বিসমিল্লাহ গ্রুপের মত উদাহরণ তৈরি হবে না।

বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মো. সাইফুর রহমান বলেন একজন স্মার্ট বিনিয়োগকারীর জন্য যে ধরণের পরিবেশ প্রয়োজন সেই অবস্থা বর্তমান পুঁজিবাজারে রয়েছে। ২০১০ সালের পর সংস্কারের মাধ্যমে সে অবস্থা করা হয়েছে। সমস্যা হলো আমাদের বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগের পরিবর্তে ব্যবসা করেন। ফলে মুনাফার পরিবর্তে লোকসানকে সঙ্গী করে ঘরে ফিরে।

তিনি বলেন, স্মার্ট বিনিয়োগকারী তৈরি করার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে কমিশন।বিনিয়োগকারীরা যদি সেই সুযোগ গ্রহণ করে- তাহলে এখান থেকে মানি মার্কেটের চেয়ে বেশি রিটার্ন নিতে পারবে।

স্বাগত বক্তব্যে ছায়েদুর রহমান বলেন, যে কারণে ১৯৯৬ ও ২০১০ পুঁজিবাজারে ধস হয়েছে- সেই অবস্থা এখন আর নেই। এরপরেও বিনিয়োগ করার আগে পুঁজির নিরাপত্তার জন্য দেখেশুনে বিনিয়োগ করা প্রয়োজন।

একই দিন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ক্যাপিটাল মার্কেট,বিআইসিএম- এ ‘প্রমোটিং ইনভেস্টর প্রোটেকশন ইন বাংলদেশ থ্রো গুড গভনের্ন্স অ্যান্ড রেগুলেটরি মেজারস’ বিষয়ক সেমিনারে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার উপর জোড় দিয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন ও বিআইসিএম চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেন বলেন, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীরাই প্রধান চালক। আর সেজন্য তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করারই আমাদের প্রধান কাজ। বিনিয়োগ করতে পুঁজির প্রয়োজন আর সেই পুঁজি মুক্তির বদলে বিলীন হয়ে যাবে- যদি না তাদের সুরক্ষা না দেওয়া যায়। যদি তাদেরকে বোঝানো না যায়- কখন বিনিয়োগ করতে হবে, কোথায় এবং কোন প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করতে হবে।

সেমিনারটির আয়োজন করে বিআইসিএম।

ড. এম খায়রুল হোসেন বলেন, বিনিয়োকারীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতেই আমরা কর্পোরেট গাইড লাইন করেছি। লিষ্টেট কোম্পানির জবাবদিহিতার জন্য গাইড লাইন করেছি। এনফোর্সমেন্ট অ্যাকশন বাড়ানো হয়েছে। অনেক ইস্যু ম্যানেজারদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের বাজারের প্রতি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ অনেক বেড়েছে। ডিএসই স্ট্যাটেজিক পার্টনার নিচ্ছে। আমাদের সকলের সমন্বিত অগ্রগতি, সরকারের আগ্রহে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আগ্রহ দেখাচ্ছে। অনেকেই বাংলাদেশকে বলে-এশিয়ান টাইগার। সরকারও ২০৪১ সালে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হতে যে অর্থ দরকার, তার উৎস হতে পারে পুঁজিবাজার। সরকার দীর্ঘমেয়াদী অর্থের যোগান হতে পারে পুজিবাজার।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিআইসিএমর সহযোগী অধ্যাপক নিতাই চন্দ্র দেবনাথ, এফসিএমএ। প্যানেলিস্ট হিসেবে আলোচনায় অংশ নেন-বিএসইসির কমিশনার ড. স্বপন কুমার বালা এফসিএমএ, আইডিএলসি ফাইন্যান্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ খান সিএফএ। সেমিনারটির মডারেটর ছিলেন-বিআইসিএমের নিবার্হী প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আব্দুল হান্নান জোয়ারদার। সঞ্চালনায় ছিলেন-বিআইসিএমের প্রভাষক মো. হাবিবুল্লাহ।

৮ অক্টোবর

বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ, ২০১৭ উপলক্ষ্যে আয়োজিত ৭ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের সমাপনি দিন ৮ অক্টোবর এক অনুষ্ঠানে বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. খায়রুল হোসেন বলেন, বিভিন্ন সেমিনার, সিম্পোজিয়াম এবং কর্মশালার মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের সচেতনতার জায়গা শাণিত হয়েছে। তিনি আরো বলেন, বিনিয়োগের আগে বুঝে,শুনে করতে পারলে পুঁজিবাজারে সফলতা অর্জন করা সম্ভব।

খায়রুল হোসেন বলেন, আমার আর ৬-৭ মাস সময় আছে। যাওয়ার আগে বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগকারী সপ্তাহে সব স্টেইকহোল্ডারদের ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। এমন সাড়া পেয়ে আমি ধন্য হলাম,আমি ধন্য হলাম।

তিনি বলেন, এই কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বাজারে গতি ফেরানোর জন্য নানা ধরনের সংস্কার করা হয়েছে। সবার সহযোগীতার ফলেই এটি সম্ভব হয়েছে। আমি চলে গেলও এর ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে বলে আমি বিশ্বাস করি। বিএসইসির চেয়ারম্যান আরও বলেন, আগামী বছর বিএসইসির ২৫ বছর পূর্তি হবে। এই পূর্তি উপলক্ষ্যে আন্তর্জাতিকভাবে সেমিনারের আয়োজন করা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সেমিনারে থাকবেন বলে আশা রয়েছে।

সমাপনী অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএসইসির কমিশনার, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ,ডিএসই’র চেয়ারম্যান, দুই স্টক এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিআইসিএম, বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংক অ্যাসোসিয়েশন,বিএমবিএ, ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন,ডিবিএ, সিএফএ সোসাইটি এর সভাপতিসহ অন্যান্যা প্রতিনিধি এবং বাজার সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সিকিউরিটিজ হাউজ,মার্চেন্ট ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।