অনেকেই শেয়ার ব্যবসা করতে চান। কিন্তু কোনো ধরনের ধারণা না থাকায় আর শুরু করা হয় না। শেয়ার ব্যবসা করতে চাইলে একজন ব্যক্তিকে কী জানতে হবে এবং কীভাবে ব্যবসা শুরু করতে হবে তার একটি প্রাথমিক ধারণা অর্থসূচকের পাঠকের জন্য তুলে ধরা হলো-
* প্রথমে বিও অ্যাকাউন্ট খুলতে হয়। ব্রোকারেজ হাউজে একক বা যৌথ একাউন্ট খোলা যায়।
* বয়স ১৮ বছর হতে হয়
* নির্দিষ্ট ফরম পূরণ করতে হয়
বিও অ্যাকাউন্ট খোলার প্রয়োজনীয় কাগজপত্রগুলো হলো-
* জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি, নিজের ৩ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি, নমিনির ১ কপি ছবি এবং ব্যাংক স্ট্যাটমেন্ট
জয়েন্ট অ্যাকাউন্টের ক্ষেত্রেও উল্লেখিত কাগজ ও ছবি জমা দিতে হবে।
* বিও অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য ব্রোকারেজ হাউজভেদে ৫০০-২০০০ টাকা পর্যন্ত চার্জ দিতে হয়।
শেয়ার কেনার ক্ষেত্রে:
শুরুতে শেয়ার বেচা-কেনার ক্ষেত্রে যে সব বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হয়-
* প্রথমে দেখতে হবে কোম্পনিটির মৌলভিত্তি কেমন অথবা কোম্পানিটি কোন ক্যাটারগরিতে অবস্থান করছে। কোম্পানিগুলোর জন্য ৪টি ক্যাটাগরি রয়েছে।
ক্যাটাগরিগুলো হলো- A, B, N ও Z
ক্যাটাগরি A: যে সব কোম্পানি প্রত্যেক বছর নিয়মিতভাবে এজিএম করে ও ১০% এর বেশি লভ্যাংশ দিয়ে থাকে।
ক্যাটাগরি B: যে সব কোম্পানি প্রত্যেক বছর নিয়মিতভাবে এজিএম করে ও ১০% এর কম লভ্যাংশ দিয়ে থাকে।
ক্যাটাগরি Z: যেসব কোম্পানি পর পর দুই বছর বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দেয় না, ওই কোম্পানিকে Z ক্যাটাগরিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এই কোম্পানির শেয়ার কেনার ক্ষেত্রে ব্রোকারেজ হাউজগুলো মার্জিন একাউন্টের বিপরীতে কোনো ঋণ সুবিধা প্রদান করে না। এই কোম্পানির শেয়ারগুলো কেনার ১৫ কার্যদিবস পর বিক্রি করতে হয়।
ক্যাটাগরি N: বাজারের অন্তর্ভুক্ত হওয়া নতুন কোম্পানিগুলোর এজিএম (বার্ষিক সাধারণ সভা) হওয়ার আগ পর্যন্ত নতুন কোম্পানিগুলো N ক্যাটাগরিতে অবস্থান করে।
কোম্পানির ইপিএস (আর্নিং পার শেয়ার) কত?
প্রত্যেক কোম্পানি বছরে ৪টি প্রান্তিকে ইপিএস দিয়ে থাকে। ইপিএস হলো শেয়ার প্রতি আয়। কোনো কোম্পানি একটি নির্দিষ্ট সময়ে যে পরিমাণ লাভ করে সেই লভ্যাংশকে মার্কেটের মোট শেয়ারে ভাগ করে দিলে যা আসে তাই হলো ইপিএস।
কোম্পানির শেয়ারের পিই (প্রফিট আর্নি রেশিও) কত?
যে কোম্পানির পিই যত বেশি সে কোম্পানি তত বেশি অতি মূল্যায়িত। বাংলাদেশের শেয়ার মার্কেটের কোম্পানিগুলোর পিই ২৫ এর বেশি হলে ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনা করা হয়।
লেনদেন
সরকারি ছুটি ছাড়া প্রতিদিন সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা ২টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত লেনদেন হয়ে থাকে। ব্রোকারেজ হাউজগুলোতে সরাসরি এবং ফোনের মাধ্যমে শেয়ার কেনাবেচা করা যায়। ক্রয়কৃত শেয়ার ৪র্থ কর্মদিবসে বিক্রি করা যায়। শেয়ার বিক্রির ৪ থেকে ৫ দিনের মধ্যে সাধারণত অ্যাকাউন্ট পে চেক প্রদান করা হয়। অ্যাকাউন্টের টাকার মেয়াদ পাওয়ার জন্য কমপক্ষে ৩ দিন পূর্বে রিক্যুইজিশন দিতে হয়। আইপিও শেয়ার বিক্রির জন্য প্রদত্ত আইপিও এর ওয়্যারেন্ট পত্র ব্রোকারেজ হাউজে জমা দিতে হয়।
পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে অর্থ উপার্জন করা লাভজনক ব্যবসা হলেও অনেকে এটাকে একটু ভিন্ন চোখে দেখেন। আসলে এই বাজারে কীভাবে বিনিয়োগ করতে হবে, কেমন শেয়ার কিনতে হবে, কখন তা বিক্রি করতে হবে; তা সঠিকভাবে না জানার কারণে এমন ধারণার জন্ম হয়েছে। তবে সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করে সঠিক সময়ে বিনিয়োগ করতে পারলে সেখান থেকে ভালো মুনাফা আনা সম্ভব।
পুঁজিবাজারে নিরাপদ বিনিয়োগের জন্য জেনে নেওয়া যাক ছয়টি কৌশল
দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য নির্ধারণ:
একটি সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করতে হলে অবশ্যই আপনাকে দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে। আপনি কত দিনের জন্য বিনিয়োগ করবেন। ৬ মাস, ৯ মাস, ৩ বছর, ৫ বছর কিংবা তার বেশি। আপনি হয়তো অবসরকালীন, জমি ক্রয়, বাড়ি তৈরি, ফ্লাট ক্রয়সহ নানা কাজে ব্যয়ের জন্য বিনিয়োগ করতে চান। আপনার ওই কাজ সম্পন্ন করার জন্য মেয়দী লক্ষ্য জরুরি।
তাই বিনিয়োগের আগে আপনাকে ঠিক করতে হবে কত দিন বিনিয়োগ করতে চান এবং কী পরিমাণ মুনাফা পেতে চান। কারণ মুনাফার হার বেশি পেতে চাইলে ঝূঁকির পরিমানও বেড়ে যায়।
ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতা অনুধাবন:
আপনি কী পরিমাণ মুনাফা পেতে চান তার ওপর নির্ভর করছে ঝুঁকি কতটা বেশি। মুনাফা যত বেশি হবে ঝুঁকির পরিমাণও তত বাড়বে। আসলে একেক জনের ঝূঁকি নেওয়ার ক্ষমতা একেক রকম। আপনাকে ঠিক করতে হবে ১০০ টাকায় ১০০ টাকা পেতে চান নাকি ১ হাজার টাকা। তবে সিকিউরিটিজ সম্পর্কে জ্ঞান ও বাছাই করে কেনার ক্ষমতা অনেক সময় ঝূঁকি কমাতে সাহায্য করে। তাই এমন সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ উচিত নয় যে বিনিয়োগ আপনাকে রাতে ঘুমাতে দেবে না। তাই বিনিয়োগের অনিশ্চিত সময়ে ঠাণ্ডা মাথায় বিনিয়োগকারীকে ঝূঁকি কমিয়ে সামনে এগুনো উচিত।
আবেগ নিয়ন্ত্রণ:
পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে লাভ নেওয়ার ক্ষেত্রে বড় বাধা হলো আবেগ। পুঁজিবাজারে একটি কোম্পানির শেয়ার সম্পর্কে বেশিরভাগ বিনিয়োগকারীর ইতিবাচক ধারণা থাকলে ওই কোম্পানির শেয়ার দর বাড়তে থাকে। এর বিপরীত হলে কমতে থাকে। বুল ও বেয়ার মার্কেটের এই দরের ওঠানামা যতটা না কোম্পানির ব্যবস্থাপনা, সম্পদ ও ভবিষ্যতের ওপর নির্ভর করে; তার চেয়ে বেশি নির্ভর করে গুজব, ধারণা, উচ্চাশা ও আবেগের ওপর। সুতরাং নিরাপদ বিনিয়োগের জন্য আবেগের নিয়ন্ত্রণ জরুরি।
বিনিয়োগের প্রাথমিক জ্ঞান অর্জন:
পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে হলে আপনাকে অবশ্যই বাজার সম্পর্ককে প্রাথমিক জ্ঞান থাকতে হবে। আপনাকে জানতে হবে পিই রেশিও কি, ইপিএস কি, এনএভি কি, সিএজিআর কি? আ জানা দরকার এগুলো কীভাবে হিসাব করতে হয় তা।
আপনাকে জানতে হবে একটি শেয়ার কতভাবে বিশ্লেষণ করা যায়। শেয়ার লেনদেন করার জন্য বিভিন্ন অর্ডার জানতে হবে। এছাড়া লেনদেনের বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট সম্পর্কে প্রাথমিক জ্ঞান থাকতে হবে।
বিনিয়োগে বৈচিত্রকরণ:
পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে অবশ্যই বৈচিত্র থাকতে হবে। আপনার সব বিনিয়োগ একটি শেয়ারে রাখলে চলবে না। একজন বিচক্ষণ বিনিয়োগকারীর বৈশিষ্ট্য হলো বিনিয়োগটাকে একটি শেয়ারে আটকে না রেখে সঠিক পোর্টফোলিও ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বিভিন্ন শেয়ারে বিনিয়োগ করা।
ধরুন, আপনি ৫ কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেছেন। এর মধ্যে আপনাকে ২টি কোম্পানির শেয়ার ২০ শতাংশ মুনাফা দিলো। আর ২টি কোম্পানির শেয়ারে পেলেন ১০ শতাংশ মুনাফা। তবে ১ কোম্পানিতে আপনার ১৫ শতাংশ লোকসান হলো। সব মিলে পোর্টফোলিওতে লোকসান কিন্তু কমিয়ে আনা গেল।
বিনিয়োগে বৈচিত্রকরণ আপনাকে মোট লোকসান কমিয়ে আনবে সহায়তা করবে।
মার্জিন থেকে দূরে থাকা:
পুঁজিবাজারে নিরাপদ বিনিয়োগের একটা বড় শর্ত হলো আপনাকে মার্জিন ঋণ নেওয়া থেকে যত সম্ভব দুরে থাকতে হবে। মার্জিন নিয়ে শেয়ার কেনার কারণে হয়তো আপনাকে বিনিয়োগের অন্যান্য পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করতে পারবেন না। তাতে বেশিরভাগ সময়ে লাভের চেয়ে লোকসান বেশি হবে।
আজকের বাজার: এলকে/এলকে ২৭ জুন ২০১৭