স্বাগতিক শ্রীলঙ্কাকে পঞ্চম ও শেষ ম্যাচে ১০ জুলাই সোমবার ৩ উইকেটে হারিয়ে ৩-২ ব্যবধানে ওয়ানডে সিরিজ জিতে নিলো সফরকারী জিম্বাবুয়ে। ফলে আট বছর পর বিদেশের মাটিতে কোন দলের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জয়ের নজির গড়লো গ্রায়েম ক্রেমারের দল। পক্ষান্তরে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এই প্রথম ওয়ানডে সিরিজ জয়ের স্বাদ পেল আফ্রিকার দলটি। র্যাকিংয়ের অষ্টম স্থানে থাকা শ্রীলঙ্কাকে হারালো একাদশ স্থানে থাকা জিম্বাবুয়ে।
সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে টস জিতে প্রথমে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেন জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক ক্রেমার। অফ-স্পিনার সিকান্দার রাজা ও ডান-হাতি পেসার টেন্ডাই চাতারা বল হাতে ইনিংস উদ্বোধনের সুযোগ পেয়েই জ্বলে উঠেন। তাদের বোলিং তোপে স্কোর বোর্ডে ৩১ রান যোগ হতেই ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলে লংকানরা।
আগের দু’ম্যাচে সেঞ্চুরি করা উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান নিরোশান ডিকবেলা ৩ রান করে রাজার প্রথম শিকার হন। অন্য প্রান্তে শ্রীলঙ্কা শিবিরে আঘাত হানেন চাতারা। দলীয় ১৩ রানে নামের পাশে ১ রান রেখে থামেন তিন নম্বরে নামা কুশল মেন্ডিস।
এরপর পরিস্থিতি সামাল দেয়া চেষ্টা করেছিলেন গত দুই ম্যাচে ডিকবেলার সাথে পরপর ডাবল-সেঞ্চুরির জুটি গড়া ওপেনার দানুস্কা গুনাথিলাকা ও চার নম্বরে নামা উপুল থারাঙ্গা। কিন্তু গুনাথিলাকা ও থারাঙ্গাকে জুটিতে ১৮ রানের বেশি যোগ করতে দেননি রাজা। ৬ রান করা থারাঙ্গাকে তুলে নেন রাজা।
দ্রুত ৩ উইকেট হারানোর পর বড় জুটি গড়ার চেষ্টা করেন গুনাথিলাকা ও অধিনায়ক অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজ। জিম্বাবুয়ে বোলারদের উপর চড়াও হয়ে না হয়ে বরং দেখে শুনে এগোতে থাকেন তারা। এ জুটিতে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছিলো শ্রীলঙ্কাকা।
কিন্তু সেটি হতে দেননি জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক ক্রেমার। গুনাথিলাকা ও ম্যাথুজের সামনে বাধা হয়ে দাঁড়ান তিনি। ২৪ রানে থাকা ম্যাথুজকে শিকার করে জিম্বাবুয়েকে চতুর্থ সাফল্য এনে দেন ক্রেমার।
এরপর আসলে গুনারত্নেকে নিয়ে দলের ইনিংস মেরামতের কাজ শুরু করেন গুনাথিলাকা। এই জুটিও সর্তকতার সাথে এগোতে থাকেন। তবে বড় জুটি গড়তে পারেননি তারাও। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের সপ্তম হাফ-সেঞ্চুরি তুলে থেমে যান গুনাথিলাকা। ৫টি চারে ৮৬ বলে ৫২ রান করেন গুনাথিলাকা।
১১৯ রানে গুনাথিলাকার বিদায়ের পর ৬ রানের ব্যবধানে আরও ২ উইকেট হারায় শ্রীলংকা। অর্থাৎ ৭ উইকেটে ১২৬ রানে পরিণত হয় স্বাগতিকরা। এতে দেড়শ’ রানের মধ্যে গুটিয়ে যাবার শংকায় পড়ে শ্রীলঙ্কাকা। কিন্তু সেটি হতে দেননি গুনারন্তে। অষ্টম উইকেটে আকিলা দনঞ্জয়ার সাথে ২৭ ও নবম উইকেটে দুশমন্থ চামিরাকে নিয়ে ৫০ রান যোগ করেন গুনারতেœ। ফলে ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে ২০৩ রানের লড়াকু সম্মানজনক স্কোর পায় শ্রীলংকা। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম হাফ-সেঞ্চুরি পাওয়া ইনিংসে ৫৯ রানে অপরাজিত থাকেন গুনারতেœ। তার ৮১ বলের ইনিংসে ৪টি চার ছিলো। দনঞ্জয়া ৭ রানে আউট হলেও, ১৮ রানে অপরাজিত থাকেন চামিরা। জিম্বাবুয়ের রাজা ৩টি ও ক্রেমার ২টি উইকেট নেন।
জয়ের জন্য ২০৪ রানের লক্ষ্যে দারুন সূচনা করেন জিম্বাবুয়ের দুই ওপেনার হ্যামিলন্টন মাসাকাদজা ও সলোমন মির। শ্রীলঙ্কাকার বোলারদের উপর চড়াও হয়ে খেলে ৮৬ বলে ৯২ রান তুলে ফেলেন মাসাকাদজা ও মির। এরপর দু’জনকে বিচ্ছিন্ন করেন শ্রীলঙ্কাকার ডান-হাতি মিডিয়াম পেসার গুনারতেœ। সিরিজের প্রথম ম্যাচে সেঞ্চুরি করা মির ৩২ বলে ৪৩ রান করেন। তার ইনিংসে ৫টি চার ও ২টি ছক্কা ছিলো।
দলের ইনিংসটাকে সামনের দিকে টেনে নিয়ে যাবার লক্ষ্যে দ্বিতীয় উইকেটে মাসাকাদজার সাথে জুটি গড়েন তিন নম্বরে নামা টারিসাই মুসাকান্ডা। খুব বেশি দূর যেতে পারেননি তারা। জুটিতে ৪৫ রান যোগ হবার পর থেমে যান মাসাকাদজা। আউট হবার আগে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৩১তম হাফ-সেঞ্চুরি তুলে ৯টি চার ও ১টি ছক্কায় ৮৬ বলে নিজের ৭৩ রানের ইনিংসটি সাজান মাসাকাদজা।
দলীয় ১৩৭ রানে দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে মাসাকাদজা ফিরে যাবার পর জিম্বাবুয়ের হাল শক্ত হাতে ধরতে পারেননি পরের দিকের ব্যাটসম্যানরা। ফলে ১৪৮ থেকে ১৭৫ রানে পৌঁছাতে আরও ৫ উইকেট হারিয়ে বসে জিম্বাবুয়ে। এতে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় শ্রীলঙ্কাকা।
এমন অবস্থায় ব্যাট হাতে জিম্বাবুয়ের ত্রাণ কর্তার ভূমিকায় আবির্ভুত হন রাজা। বল হাতে ৩ উইকেট নেয়া রাজা এবার ব্যাট হাতে ২৭ বলে অপরাজিত ২৭ রান করে ৭১ বল বাকী থাকতেই জিম্বাবুয়েকে অবিস্মরণীয় এক জয় এনে দেন। সেই সাথে সিরিজ জয় নিশ্চিত হয়ে যায় সফরকারীদের। ছোট্ট হলেও রাজার দুর্দান্ত ইনিংসে ১টি চার ও ২টি ছক্কা ছিলো। রাজার সঙ্গী হিসেবে ১৩ বলে ১১ রান করে অন্যপ্রান্তে অপরাজিত ছিলেন ক্রেমার। শ্রীলংকার দনঞ্জয়া ৪৭ রানে ৪ উইকেট নেন।
ম্যাচের সেরা হয়েছেন জিম্বাবুয়ের রাজা ও সিরিজ সেরা হন একই দলের হ্যামিল্টন মাসাকাদজা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
শ্রীলঙ্কাকা : ২০৩/৮, ৫০ ওভার (গুনারতেœ ৫৯*, গুনাথিলাকা ৫২, রাজা ৩/২১)।
জিম্বাবুয়ে : ২০৪/৭, ৩৮.১ ওভার (মাসাকাদজা ৭৩, মির ৪৩, দনঞ্জয়া ৪/৪৭)।
ফল : জিম্বাবুয়ে ৩ উইকেটে জয়ী।
সিরিজ : পাঁচ ম্যাচের সিরিজ ৩-২ ব্যবধানে জিতলো জিম্বাবুয়ে।
ম্যাচ সেরা : সিকান্দার রাজা (জিম্বাবুয়ে)।
সিরিজ সেরা : হ্যামিল্টন মাসাকাদজা (জিম্বাবুয়ে)।
আজকের বাজার:এলকে/ এলকে/ ১০ জুলাই ২০১৭