সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে উত্তেজনা বাড়ছে

সম্প্রতি কক্সবাজারের উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ভয়াবহ সংঘর্ষের ঘটনায় চারজনের মৃত্যুর পর রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে উত্তেজনা বাড়ছে।

ওই সংঘর্ষের ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হওয়া অপর এক রোহিঙ্গা কিশোর বালক কক্সবাজারের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার মারা গেছেন।

নিহত শফিউল আলম (১৭) কক্সবাজারের কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা জামাল হোসেনের ছেলে বলে পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে।

তবে সংঘর্ষের এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে দুই রোহিঙ্গাকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছেন উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সঞ্জুর মোর্শেদ।

গ্রেপ্তার হওয়া দুই রোহিঙ্গা হলেন- মাঝি কালা বোদা এবং মোহাম্মাদ আলম। তারা দুজনও কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা।

এদিকে, কুতুপালং রেজিস্ট্রার্ড ক্যাম্পের ইনচার্জ খলিলুর রহমান জানান, তারা পাঁচজন রোহিঙ্গাসহ গত সোমবার অপহরণের শিকার হওয়া ৮ জনকে উদ্ধার করেছেন।

ক্যাম্পটির ই-ব্লকের দুজন রোহিঙ্গা এখনো নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানান ওই কর্মকর্তা।

অপরদিকে, দুজন রোহিঙ্গাকে হত্যা করার অভিযোগ এনে উত্তেজিত রোহিঙ্গারা নয়াপারা এলাকায় বেশ কিছু সময় ধরে কক্সবাজার-টেকনাফ সড়ক অবরোধ করে রাখে।

ডিআইজি’র পরিদর্শন:

সংঘর্ষের ঘটনার পরে চট্টগ্রাম পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) আনোয়ার হোসেন বুধবার রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ওই এলাকা পরিদর্শন করেছেন।

পরিদর্শন শেষে ক্যাম্প ইনচার্জের অফিস কক্ষে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের সাথে মত বিনিময় করেন ডিআইজি আনোয়ার।

সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে ডিআইজি আনোয়ার বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সংঘর্ষের ঘটনায় ইতিমধ্যে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

সরিয়ে নেয়া হলো এনজিওকর্মীদের:

রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করা জাতিসংঘ এবং বিভিন্ন পর্যায়ের আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সমন্বয়কারী ইন্টার সার্ভিস কো-অর্ডিনেশন গ্রুপের (আইএসসিজি) সমন্বয়ক সৈয়কত বিশ্বাস জানান, সাধারণত এনজিওকর্মীদের বিকাল ৪টার পর রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় থাকতে দেয়া হয় না।

কিন্তু ক্যাম্পগুলোতে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যে নিরাপত্তার কারণে সবাইকে (এনজিও কর্মীদের) ক্যাম্প থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

সন্ত্রাসীদের হামলার ভয়ে প্রায় দুই হাজার রোহিঙ্গা কুতুপালনং ২ নম্বর পূর্ব ক্যাম্পের তাবলিগ জামায়াত মার্কাজে আশ্রয় নিয়েছিলেন।

একই সময়ে প্রায় ৫০০ রোহিঙ্গা পরিবারকে লম্বালশিয়ার ক্যাম্প থেকে সরিয়ে নেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন কুতুপালং ওয়ান স্টপ ক্যাম্পের ইনচার্জ মাহফুজুর রহমান।

মঙ্গলবারের সংঘর্ষের ঘটনা:

উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে মঙ্গলবার রাতে সন্ত্রাসীদের দুটি পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে গোলাগুলিতে চার রোহিঙ্গা শরণার্থী নিহত এবং অন্তত ২০জন আহত হন ।

নিহতরা হলেন- রোহিঙ্গা নেতা মুন্নার ভাই মোহাম্মদউল্লাহ ওরফে গিয়াস উদ্দিন ও মো. ফারুক, টেকনাফ উপজেলার হ্নেলা ইউনিয়নের রঙ্গীখালী এলাকার বাসিন্দা নুরুল বোশার দিলদার আহম্মদের ছেলে নুরুল বোশার এবং নুর হোসেনের ছেরে নুরুল হুদা।

নিরাপত্তা বৃদ্ধি:

রোহিঙ্গা ক্যাম্পের রক্ষক্ষয়ী সংঘর্ষের পর ক্যাম্পের আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে সেখানে অতিরিক্ত নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের মতায়ন করা হয়েছে।

উখিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, ক্যাম্পগুলোর পরিস্থিতি শান্ত হলেও সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের জন্য যৌথ অভিযান চলছে।

রোহিঙ্গা সংকট:

মিয়ানারের সরকারি বাহিনীর নিপীড়ন ও নির্যাতনের শিকার হয়ে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে প্রায় ৭ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। বাংলাদেশ মানবতা দেখিয়ে তাদের শরণার্থীদের আশ্রয় দিলেও রোহিঙ্গারা নানা অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি করার চেষ্টা করছে।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে পাঠাতে চাইলেও নিজেদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে নানা টাল-বাহানা করছে প্রতিবেশী দেশটি।