সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জাপায় ফাটল

জাতীয় পার্টির শীর্ষ দুই নেতার মাঝ থেকে সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা নিয়োগ নিয়ে উঠতি দ্বন্দ্বের মাঝে দলটির একাংশের নেতারা প্রয়াত এইচএম এরশাদের স্ত্রী রওশন এরশাদকে বৃহস্পতিবার তাদের চেয়ারপার্সন ঘোষণা করেছেন। যার মধ্য দিয়ে ভাঙনের কিনারায় চলে এসেছে দলটি।

জাপার সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য আনিসুল ইসলাম মাহমুদ রওশনের গুলশান বাসভবনে তার উপস্থিতিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন।

তিনি বলেন, ‘রওশন এরশাদ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করবেন। আগামী ছয় মাসের মধ্যে কাউন্সিলের মাধ্যমে গণতান্ত্রিকভাবে দলের স্থায়ী চেয়ারম্যান ঠিক করা হবে।’

আনিসুল দাবি করেন, দলের গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করে জিএম কাদেরকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ঘোষণা করা হয়েছিল।

তবে তিনি জানান, কাদেরকে দলের কো-চেয়ারম্যান হিসেবে মূল্যায়ন করবেন রওশন।

জাতীয় পার্টির সিনিয়র নেতা মশিউর রহমান রাঙ্গা দলের মহাসচিব হিসেবে থাকছেন।

সংবাদ সম্মেলনে রওশন বলেন, দলে কী হচ্ছে তা নিয়ে নেতারা উদ্বিগ্ন ছিলেন। ‘তারা ভয়েও আছেন যে অতীতের মতো দল ভাগ হয়ে যাবে কি না। কিন্তু আমি সবার সাথে মিলে দল পরিচালনা করতে চাই।’

সেই সাথে তিনি তার প্রয়াত স্বামী এরশাদ প্রতিষ্ঠিত দলটি ছেড়ে যারা অতীতে বিভিন্ন সময়ে চলে গিয়েছিলেন তাদের পুনরায় ফিরে আসার আহ্বান জানান।

১৮ জুলাই এরশাদের ছোট ভাই কাদেরকে আনুষ্ঠানিকভাবে জাপার চেয়ারম্যান ঘোষণা করা হয়। দলের চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মহাসচিব রাঙ্গা এ ঘোষণা দেন।

রাঙ্গা বলেন, মারা যাওয়ার আগে এরশাদ এক সাংগঠনিক নির্দেশনার মাধ্যমে ঘোষণা দিয়েছিলেন যে তার অবর্তমানে দলের চেয়ারম্যান হবেন কাদের। ‘তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে আজ থেকে জিএম কাদের আমাদের দলের চেয়ারম্যান।’

তবে চার দিন পর রওশনের নামে দেয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জাপার চেয়ারম্যান হিসেবে কাদেরের মনোনয়ন যথাযথভাবে দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হয়নি।

মারা যাওয়ার আগে এরশাদ ১৪ জুলাই তার ভাই কাদেরকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও উত্তরাধিকারী করেন।

জাপার মধ্যকার দ্বন্দ্ব পুনরায় সামনে আসে বুধবার। এ দিন দলের সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন স্পিকারকে চিঠি লিখে কাদেরের চিঠিটি গ্রহণ না করার আহ্বান জানান। মঙ্গলবার কাদের স্পিকারকে পাঠানো ওই চিঠিতে তাকে সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়ার কথা বলেন।

স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীকে পাঠানো চিঠিতে রওশন বলেন, কাদের দলীয় ফোরামের সিদ্ধান্ত ও জাতীয় পার্টির সংসদীয় দলের সাথে বৈঠক না করেই এ চিঠি পাঠিয়েছেন।

চিঠি দেয়ার আগে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, মুজিবুল হক চুন্নু ও ফখরুল ইমামসহ দলের কয়েকজন নেতা রওশনের সাথে তার গুলশান বাসভবনে দীর্ঘ বৈঠক করেন।

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে ১১তম সাধারণ নির্বাচনে অংশ নিয়ে ২২টি আসন পায় জাপা। তবে নির্বাচনের পর তারা সংসদে বিরোধী দলের ভূমিকা পালনের সিদ্ধান্ত নেয়।

জাপা সূত্র অনুযায়ী, দলের বেশিরভাগ সংসদ সদস্য ও প্রেসিডিয়াম সদস্য কাদেরের সাথে রয়েছেন। অন্যদিকে, রওশনের প্রতি অনুগত থাকা কয়েকজন সংসদ সদস্য ও প্রেসিডিয়াম সদস্য চাচ্ছেন তিনি দলের চেয়ারপার্সন ও সংসদে বিরোধী দলের নেতার ভূমিকা পালন করুক। তথ্য-ইউএনবি

আজকের বাজার/এমএইচ