সবজিতে ভরপুর নেত্রকোনার হাওরাঞ্চলের কাঁচা বাজার। আলু, লাউ, বেগুন, শিম, মুলা, ফুলকপি, বাধাকপিসহ প্রতিদিনই বাজারে আসছে প্রচুর পরিমাণে সবজি। কমেছে দামও। তাই স্বস্তি ফিরেছে নেত্রকোনার হাওরাঞ্চলের ৬টি উপজেলার কাঁচা বাজারগুলোতে।
জেলার হাওর এলাকার প্রবেশদ্বার হিসেবে খ্যাত মদন উপজেলার কয়েকটি বাজার ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে। একই অবস্থা হাওর উপজেলা কলমাকান্দা, বারহাট্টা, মোহনগঞ্জ, আটপাড়া ও খালিয়াজুরীর সবজি বাজারগুলোতেও।
স্থানীয়রা জানান, শাকসবজির পুরো মৌসুম চলছে এখন। কৃষকরা তাদের জমি থেকে নানা জাতের সবজি তুলে বিক্রির জন্য বাজারগুলোতে নিয়ে যাচ্ছেন। তাই সবজির বাজারগুলো শীতকালীন শাকসবজিতে ভরপুর। চাহিদার চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণে সবজির সরবরাহ থাকায় সকল প্রকার সবজির মূল্যও কমেছে অনেকটা। এ অবস্থায় অল্প টাকায় ব্যাগ ভর্তি সবজি কিনে স্বস্তিতে বাড়ি ফিরতে পারছেন সাধারণ কৃষকরা।
হাওরাঞ্চলের বাজারগুলোতে বর্তমানে আলু ৩০ থেকে টাকা কেজি, শিম ১৫ থেকে ২০ টাকা কেজি, বেগুন ২০ থেকে ৩০ টাকা কেজি, লাউ প্রতি পিস ২০-৩০ টাকা করে, মিষ্টি লাউ ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি, পেঁপে ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি, ফুলকপি, ১০ টাকা কেজি, বাধা কপি ১০ টাকা কেজি, মুলা এক হালি (৪টা) ১০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। প্রতিটি সবজির মূল্যই গত এক সপ্তাহে কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা করে কমেছে।
মদন উপজেলা সদরের সবজি বাজারের ক্রেতা স্থানীয় চাঁনগাঁও গ্রামের বাসিন্দা বাবুল মিয়া বলেন, আমাদের এলাকার সবজিতেই এখন বাজার ভরা। শাকসবজির কোনো অভাব নাই। সবকিছুর দামই কমেছে। বিশেষ করে ফুলকপি ও মুলা একেবারে নামমাত্র মূল্যে পাওয়া যাচ্ছে।
একই এলাকার বাসিন্দা সবুজ মিয়া বলেন, আমাদের এলাকায় প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি উৎপাদন হয়। এসব সবজি এখন বাজারে আসছে। তাই দাম অনেক কমে এসেছে। অল্প টাকা দিয়েই ব্যাগ ভর্তি সবজি কিনতে পারছি সবাই।
উপজেলার খালিয়াজুরী উপজেলার জগ্ননাথপুর এলাকার কৃষক মজিবুর রহমান বলেন, এবার আমি আলু, লাউ, মুলা ও ফুলকপি চাষ করেছি। কিন্তু শীতের শুরুতে বাজার দর কিছুটা ভালো থাকলেও এখন একেবারেই কমে গেছে। যতটা আশা করেছিলাম তেমন লাভ হবে না।
মোহনগঞ্জ উপজেলা সদরের সবজি বাজারের ব্যবসায়ী আনিস মিয়া বলেন, বাজারে পর্যাপ্ত পরিমাণে স্থানীয় সবজি আসছে। তাই বাইরে থেকে আসা সবজির চাহিদা ও আমদানি দুটোই কম। প্রতিদিনই শাকসবজির দাম কমছে। তবে শীত মৌসুম শেষে সবজির দাম বাড়তে পারে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর নেত্রকোনার ১০টি উপজেলায় মোট ৭ হাজার ৭২৫ হেক্টর জমিতে সবজি আবাদ করা হয়েছে। তবে শুধু হাওরাঞ্চলের উপজেলাগুলোতে সবজির আবাদ হয়েছে ৪ হাজার ১৪৫ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে মদন উপজেলায় ৮০০, খালিয়াজরী উপজেলায় ৬০৫, মোহনগঞ্জ উপজেলায় ৪২৫, আটপাড়া উপজেলায় ৪৬০, বারহাট্টা উপজেলায় ৬৪৫ ও কলমাকান্দা উপজেলায় ১ হাজার ২১০ হেক্টর জমিতে সবজির আবাদ হয়েছে। এছাড়া জেলার অন্য চারটি উপজেলায় মোট ৩ হাজার ৫৮০ হেক্টর জমিতে সবজি আবাদ হয়েছে। তার মধ্যে সদর উপজেলায় ১ হাজার ২৪০, পূর্বধলায় ৯৫০, দুর্গাপুরে ৬৩০ এবং কেন্দুয়াতে ৭৬০ হেক্টর জমিতে সবজি আবাদ হয়েছে। (বাসস)