সহিংসতায় ৬৭০০ রোহিঙ্গা প্রাণ হারিয়েছে: এমএসএফ

মায়ানমারে সেনাবাহিনী পরিচালিত সহিংসতার এক মাসের মধ্যে ৬ হাজার ৭০০ জন রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে বলে দাবি করছে মেডিসিনস স্যান্স ফ্রন্টিয়েরস (এমএসএফ) নামক এইড সংস্থা।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মধ্য থেকে চালানো জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। দেশটির সেনাবাহিনীর দেওয়া নিহতের সংখ্যার সঙ্গে সেই তথ্যের বিস্তর ফারাক রয়েছে। মায়ানমার সেনাবাহিনী জানায়, সহিংসতায় ৪০০ রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়েছে।

এমএসএফ বলছে, মিয়ানমারে দেশটির কর্তৃপক্ষ যে ব্যাপক সহিংসতা চালিয়েছে এটি তার সুস্পষ্ট প্রমাণ।

মায়ানমার সেনাবাহিনী এই সহিংসতাকে সন্ত্রাসীদের প্রতিরোধ হিসেবে দায় সারানোর চেষ্টা করছে বলে খবরে বলা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত ৬ লাখ ৪৭ হাজার রোহিঙ্গা দেশটির সেনাবাহিনীর সহিংসতার মুখে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে চলে আসে।

দাতা সংস্থাটির জরিপে বলা হয়েছে, ২৫ আগস্ট থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অন্তত ৯ হাজার রোহিঙ্গা মায়ানমারে মারা যায়। এর মধ্যে অন্তত ৬ হাজার ৭শ মৃত্যুর কারণ সহিংসতা, যার মধ্যে পাঁচ অথবা তার চেয়ে কম বয়সের শিশু ছিল ৭৩০ জন।

এর আগে মায়ানমার সেনাবাহিনী জানায়, সহিংসতায় ৪০০জন মুসলিম সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে। এমএসএফ বলছে, শরণার্থীরা যে অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছে তা খুবই ‘ভয়াবহ’।

সাংবাদিক ও গবেষকরা শরণার্থীদের সাক্ষাৎকার নেওয়ায় এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। এতে মায়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ আরো জোরালো হচ্ছে।

বিবিসির দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া প্রতিনিধি জোনাথন হেড বলেছেন, অনেক প্রতিবেদনে রাখাইনের ভয়াবহ ঘটনাগুলোর দিকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে; তবে রাখাইনের তুলা তুলি গ্রামে ব্যাপক গণহত্যা নিয়ে বেশ কিছু গণমাধ্যম খবর দিয়েছে।

‌জোনাথন বলেন, ‘আমি কয়েকজন রোহিঙ্গার সাক্ষাৎকার নিয়েছি, তারা সহিংসতার শঙ্কা থেকেই পালিয়েছেন বলে আমাকে জানিয়েছেন। তবে তারা বাস্তবেই সহিংসতার মুখোমুখি হননি।

এমএসএফ’র সুশৃঙ্খল এ গবেষণা চিত্র মায়ানমার সামরিক বাহিনীর পরিচালিত অভিযান যে যথেষ্ট নৃশংস ছিল এবং তাদের এই নৃশংসতাই মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) মামলা দায়েরের জন্য যথেষ্ট।

উল্লেখ, গত ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক সামরিক অভিযান শুরু করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। ওই সময় দেশটির সীমান্তে ৩০টির বেশি পুলিশ ও সেনা তল্লাশি চৌকিতে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের সংগঠন আরাকান স্যালভেশন আর্মির (আরসা) সদস্যদের হামলার জবাবে শুরু হওয়া সামরিক অভিযানকে জাতিসংঘ ‘জাতিগত নিধনের চেষ্টা’ বলে অভিহিত করেছে।

আজকের বাজার:এলকে/১৪ ডিসেম্বর ২০১৭