সাংহাই ও সেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জের পক্ষেই ডিএসইর সিদ্ধান্ত

সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জ এবং সেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জকেই কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে পার্টনার করতে সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। চলতি সপ্তাহেই এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে পাঠাবে প্রতিষ্ঠানটি।

সোমবার ১৯ ফেব্রুয়ারি প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদের সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. আবুল হাশেম সাংবাদিকদের বলেন,  সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জ এবং সেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জকে কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে পার্টনার করতে আমাদের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছি। এখন যত দ্রুত সম্ভব আমরা বিএসইসিতে ডিএসইর এই প্রস্তাবনা পাঠাবো। এই প্রস্তাবের পর নিয়ন্ত্রক সংস্থা তা আইনগতভাবে যাচাই করে তাদের সিদ্ধান্ত জানাবে। আর পরবর্তী করণীয় ঠিক করা হবে বিএসইসির সিদ্ধান্তের পর।

তিনি বলেন, এ ব্যাপারে ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালককেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তার নেতৃত্ব এই প্রস্তাবনা জমা দেওয়া হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

এসময় ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক কেএএম মাজেদুর রহমান বলেন, আমরা ডিএসইর প্রস্তাবনা এই সপ্তাহের মধ্যে জমা দেবো। তবে সেটা হবে খুব শিগগিরই।

এর আগে ১০ ফেব্রুয়ারি পরিচালনা পর্ষদের সভায় সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জ এবং সেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জকে কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে পার্টনার করতে একমত পোষণ করেন। তবে তা আর প্রস্তাব আকারে বিএসইসিতে পাঠানো হয়নি।

এরপর নানা দিত থেকে অভিযোগ ওঠে যে, ডিএসইর কৌশলগত বিনিয়োগকারী নিয়ে অনিয়মের আশ্রয় নেওয়া হচ্ছে। সেখানে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি ও ভারতীয় দরদাতা প্রতিষ্ঠান ডিএসইর কৌশলগত বিনিয়োগকারী নিতে অনৈতিক চাপ প্রয়োগ করছে বলে অভিযোগ তোলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। পাশাপাশি এই চাপের নিন্দা করা হয়।

সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জ এবং সেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জকে নিয়ে গঠিত কনসোর্টিয়ামটি ডিএসইর পার্টনার হতে ২২ টাকা দরে ২৫ শতাংশ শেয়ার নিতে আবেদন করে। পাশাপাশি কনসোর্টিয়ামটি ৩৭ মিলিয়ন ডলারের প্রযুক্তিগত সহযোগীতা দেওয়ার প্রস্তাবও দেয় ডিএসইকে।

তবে কনসোর্টিয়ামটি ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন আইন অনুযায়ী সব দিক দিয়ে এগিয়ে থাকার পাশাপাশি বেশি দর দিয়ে শেয়ার কেনার প্রস্তাব করায় ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদ তা গ্রহণ করে। আজকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় সর্বসম্মতভাবে তা অনুমোদন করা হয়।

১০ টাকা অভিহিত মূল্যের প্রতিটি শেয়ারের জন্য চীনের সাংহাই ও সেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জ ২২ টাকা দরে মোট ৯৯২ কোটি টাকার শেয়ার কিনবে। আর ডিএসইর কার্যক্রমের মানোন্নয়নে বিনামূল্যে উন্নত প্রযুক্তি সরবরাহ করবে, যার বাজার মূল্য ৩ কোটি ৭০ লাখ ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ৩০৭ কোটি টাকা।

২০১০ সালে পুঁজিবাজার ধসের পর স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা বাড়াতে ডিএসইর ব্যবস্থাপনা থেকে মালিকানা আলাদা করার জন্য ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন অ্যাক্ট ২০১৩ করা হয়। কার্যক্রমে স্বচ্ছতা বৃদ্ধি ছাড়াও প্রযুক্তিগত উন্নয়নের দিক বিবেচনায় কৌশলগত অংশীদার নেওয়ারও এবং তাদের জন্য মোট শেয়ারের ২৫ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়। আর সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলো বা ব্রোকারেজ মালিকরা স্টক এক্সচেঞ্জটির ৪০ শতাংশ শেয়ারের মালিকানায় থাকবেন। বাকি ৩৫ শতাংশ শেয়ার পরবর্তীতে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে বিক্রি করতে হবে।

পরবর্তীতে কৌশলগত বিনিয়োগকারী নেওয়ার জন্য ২০১৫ সালে এক বছর সময় দিয়ে চিঠি ইস্যু বিএসইসি। পরে ৬ মাসে করে আরও দুই বার সময় বাড়িয়েছে কমিশন। যা আগামী মার্চ মাসের ৮ তারিখ শেষ হচ্ছে।

এমন পরিস্থীতিতে চীনের সাংহাই ও সেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জ নিয়ে গঠিত কনসোটিয়াম এবং ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ, নাসডাক এবং ফ্রন্টিয়ার মিলে গঠিত কনসোর্টিয়াম ডিএসইর শেয়ার কেনার জন্য প্রস্তাব দেয়।

উল্লেখ্য, এনএসই নেতৃত্বাধীন জোট ডিএসইর এক-চতুর্থাংশের অংশীদার হতে শেয়ারপ্রতি ১৫ টাকা দরে মোট ৬৭৬ কোটি টাকা শেয়ার কেনার প্রস্তাব দেয়।

এর আগে ব্রুমার অ্যান্ড পার্টনার্স, সিডিসি, কেএফডব্লিউ, আইএফসি, কিং ওয়ে ক্যাপিটাল এবং বাংলাদেশের স্কয়ার গ্রুপসহ খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠান ডিএসইর কৌশলগত বিনিয়োগকারী হতে আবেদন করে।

আজকের বাজার : জাকির/আরএম/১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮