ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ উপকূলে আঘাত হানার ১০ দিনের মধ্যে বঙ্গোপসাগরে ফের লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে। শনিবার বিকেল নাগাদ লঘুচাপটি আরও ঘণীভূত হয়ে সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়েছে। লঘুচাপই ক্রমান্বয়ে শক্তি সঞ্চয় করে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়। সুস্পষ্ট লঘুচাপের জন্য সমুদ্রবন্দরগুলোকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদফতর।
শনিবার বিকেলে আবহাওয়ার সতর্ক বার্তায় বলা হয়েছে, উত্তর অন্ধ্র প্রদেশ-দক্ষিণ উড়িষ্যা উপকূলের অদূরে পশ্চিম মধ্য-বঙ্গোপসাগর ও কাছাকাছি উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত লঘুচাপটি ঘণীভূত হয়ে সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়েছে। এটি আরও ঘণীভূত হয়ে মৌসুমী নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে।
আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান জানান, সুস্পষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা তৈরি হচ্ছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর, বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্র বন্দরসমূহের উপর দিয়ে ঝোড়ো হাওয়া (বাতাসের গতিবেগ ঘন্টায় ৪০-৫০ কি.মি.) বয়ে যেতে পারে।
চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে বলেও জানান তিনি। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি এসে সাবধানে চলাচল করতে বলেছে আবহাওয়া বিভাগ।
গত ৩০ মে প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ কুতুবদিয়ার কাছ দিয়ে কক্সবাজার-চট্রগ্রাম উপকূল অতিক্রম করে। ঘূর্ণিঝড়ে প্রাণ হারান ৮ জন। ঝড়ে উপকূলীয় অঞ্চলে ৫৪ হাজার ৪৮৯টি পরিবারের ২ লাখ ৮৬ হাজার ২৪৫ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
প্রাকৃতিক নানা কারণে সমুদ্রের একটি অঞ্চলে কেন্দ্রাভিমুখী ঝোড়ো হাওয়ার অঞ্চল বা লঘুচাপ সৃষ্টি হয়। ক্রমান্বয়ে এ ঝোড়ো হাওয়ার অঞ্চলটি শক্তি সঞ্চয় করে (বাতাসের গতি বৃদ্ধি পেয়ে) সুস্পষ্ট লঘুচাপ, নিম্নচাপ, গভীর নিম্নচাপ ও শেষে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়।
আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, নিম্নচাপ হচ্ছে একটি ঝোড়ো হাওয়ার অঞ্চল, যেখানে বাতাসের গতিবেগ ৪১ থেকে ৫০ কিলোমিটারের মধ্যে। গভীর নিম্নচাপের ক্ষেত্রে বাতাসের গতিবেগ ৫১ থেকে ৬১ কিলোমিটারের মধ্যে থাকে। কোন ঝোড়ো হাওয়ার অঞ্চলে বাতাসের গতিবেগ ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটারের মধ্যে হলে তাকে বলে ঘূর্ণিঝড়।
দেশের বিভিন্ন স্থানের উপর দিয়ে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। কয়েক দিন ধরে প্রচণ্ড গরমে কষ্ট পাচ্ছে নগরবাসীও। দাবাদাহে বিশেষ করে রোজাদারদের কষ্ট হচ্ছে বেশি। গরমে ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়েছে নানা রোগ-ব্যধি।
আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু (বর্ষা) বরিশাল, ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগ পর্যন্ত অগ্রসর হয়েছে।
শনিবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগের অনেক জায়গায়, ঢাকা, খুলনা, রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বৃষ্টি হতে পারে।
রাজশাহী, পাবনা, নওগাঁ, মাঈজদীকোর্ট, রংপুর, দিনাজপুর ও সৈয়দপুর অঞ্চলের উপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় তা কিছু কিছু অঞ্চলের উপর থেকে প্রশমিত হতে পারে বলেও জানিয়েছেন আবহওয়াবিদরা।
আবহাওয়া অধিদফতর আরও জানিয়েছে, সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে। আগামী ৩ দিনে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু সারাদেশে বিস্তার লাভ করতে পারে এবং বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বাড়তে পারে পারে।
আজকের বাজার:এলকে/এলকে/ ১০ জুন ২০১৭