সাতক্ষীরা সফরে গিয়ে এই জেলায় নিজ দলের নেতাদেরকে প্রতি ক্ষোভ জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। কেবল নির্বাচনের সময় জনগণর কাছে ভেড়ার প্রবণতা ছেড়ে নেতাদেরকে ‘ভালো হয়ে গিয়ে’ সব সময় জনগণের পাশে থাকার তাগাদা দিয়েছেন তিনি।
মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতারা এলাকায় না থেকে ঢাকামুখী হয়েছেন জানিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে কাদের বলেন,এখনো সময় আছে, ভালো হয়ে যান। জনগণেকে সাথে নিয়ে কাজ করেন। শুধু নির্বাচনের সময় কর্মীদের বাড়ি যাবেন, নির্বাচনের সময় মৃত নেতাকর্মীদের কবর জিয়ারত করবেন। এভাবে নেতৃত্ব চলে না।
নতুন সদস্য সংগ্রহ এবং পুরনোদের নবায়ন কার্যক্রম উদ্বোধন করতে মঙ্গলবার সকালে সাতক্ষীরা যান ওবায়দুল কাদের। যশোর বিমানবন্দর থেকে সড়ক পথে জেলাটিতে যান তিনি। তাকে অভ্যর্থনা জানাতে সার্কিট হাউজে অপেক্ষা করছিলেন শত শত নেতা-কর্মী। কিন্তু সেখানে না গিয়ে কাদের সরাসরি চলে যান শহীদ আবদুর রাজ্জাক পার্কে সদস্য নবায়ন কর্মসূচির সমাবেশ স্থলে। তার এই সফর উপলক্ষে জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মী সেখানে জড়ো হন।
জামায়াতের সহিংসতাপ্রবণ জেলাগুলোর একটি সাতক্ষীরা। স্বাধীনতাবিরোধী দলটি যখন এখানে তাণ্ডব চালাচ্ছিল, তখন তাদের প্রতি রুখে দাঁড়াতে নেতা-কর্মীরা ব্যর্থ হয়েছিল বলে মনে করেন ওবায়দুল কাদের। এ জন্য তিনি তাদের ওপর ক্ষোভ ঝাড়েন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক।
নেতাদেরকে ওবায়দুল কাদের বলেন,জনগণের কোনো দোষ নেই, কোন সমস্যা নেই, সমস্যা আপনাদের। জনগণ যখন বিপদে পড়বে তখন আপনারা ঢাকায় থাকবেন এটি হবে না।
নির্বাচনে যারা অংশ নিতে চান তাদেরকে উদ্দেশ্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন,প্রার্থী হতে চান ভালো কথা। কিন্তু আপনাদের চেহারা দেখে মনোনয়ন দেওয়া হবে না। মনোনয়ন দেওয়া হবে জনগণের রিপোর্টের উপরে। জনগণ যাকে চাইবে আমরা তাকে মনোনয়ন দেবো।
ঢাকামুখী নেতাদেরকে কাদের বলেন,সাত/আটশ মোটরসাইকেল শোডাউন দিয়ে, ব্যানার ফেস্টুন টানিয়ে মনোনয়ন পাওয়া যাবে না। মনোনয়ন পেতে হলে এলাকায় কাজ করতে হবে।
‘ঢাকায় গিয়ে চেহারা না দেখিয়ে এলাকার উন্নয়নে অংশ নেন। জনগণের হৃদয়ে অবস্থান নেন। জনগণই আপনাকে মনোনয়ন দিয়ে নির্বাচিত করবে।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন,এমন অনেক কর্মী রয়েছে। যাদের ঘরে বাজার করার মত টাকা নেই। অসুস্থ হয়ে ঘরে পড়ে আছে ঔষধ কেনার টাকা নেই। তাদের খোঁজ খবরও নেন না। এটা হবে না। এটা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ হতে পারে না। এমন নেতা সাতক্ষীরার জনগণের দরকার নেই।
আগামী নির্বাচনে যাকেই মনোনয়ন দেয়া হোক, সব ভেদাভেট ভুলে কর্মীদের সাথে নিয়ে নৌকা প্রতীককে বিজয়ী করতে কাজ করারও নির্দেশ দিয়ে এসেছেন আওয়ামী লীগ নেতা।
বর্তমান সরকারের উন্নয়ন জনগণের মধ্যে তুলে ধরতেও নেতা-কর্মীদের আহ্বান জানান ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন,রান্নাঘরে বসে মহিলারা আজ সাউথ আফ্রিকায় কথা বলে। ভিডিও কলও করেন। আজ পদ্মাসেতু দৃশ্যমান। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ। এসব একমাত্র বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার দ্বারাই এসব সম্ভব হয়েছে। তিনি জনগণের জন্য রাজনীতি করেন। তিনি মানুষের ভাগ্য উন্নয়ন রাজনীতি করেন।
সাতক্ষীরা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুনসুর আহমেদের সভাপতিত্বে কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হক, সংসদ সদস্য মীর মোস্তাক আহমেদ রবি, জগলুল হায়দার প্রমুখ। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সাতক্ষীরা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম।
পরে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে একে অফরের হাত ধরিয়ে দুই নেতার মধ্যে দ্বন্দ্বের অবসানের ঘোষণা দেন কাদের। সেই সঙ্গে তাদেরকে নতুন উদ্যামে কাজ করার নির্দেশ দেন তিনি।
আজকের বাজার:এলকে/এলকে ১২ ডিসেম্বর ২০১৭