প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে বলপ্রয়োগে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে বলে আবারও অভিযোগ করেছে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও মর্যাদা রক্ষার দাবিতে দেশের সকল বারে সপ্তাহব্যাপী প্রতিবাদ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে সংগঠনটি।
৭ অক্টোবর শনিবার সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। লিখিত বক্তব্যে কর্মসূচি ঘোষণা করেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন। সংবাদ সম্মেলনে আইনজীবি সমিতির সম্পাদক মাহবুব উদ্দিন খোকনসহ সমিতির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
কর্মসূচির মধ্যে আছে আগামীকাল রবিবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত প্রতিদিন সব জেলা বারে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা।
গতকাল শুক্রবার হেয়ার রোডে প্রধান বিচারপতির বাসভবনে আইনজীবী সমিতির নেতারা গেলে পুলিশ বাধা দেয়। এর আগে গত ২ অক্টোবর তারা প্রধান বিচারপতির সঙ্গে দেখা করতে গেলে বাসার গেট থেকে ফেরত আসেন। সর্বোচ্চ আদালত আপিল বিভাগের কাছে দেখা করার নির্দেশনা প্রার্থনা করলে আদালত তাতে সারা দেয়নি।
লিখিত বক্তব্যে জয়নুল আবেদীন বলেন, বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি রক্ষায় আগামী রবিবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত প্রতিদিন দেশের সব জেলা বারে আইনজীবীরা মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা পালন করা হবে। ১২ অক্টোবর বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
জয়নুল আবেদীন বলেন, গত দুই দিন প্রধান বিচারপতির সঙ্গে আইনমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাসহ সরকারি বিভিন্ন কর্মকর্তারা সাক্ষাত করেছেন। কিন্তু আমাদের সাক্ষাত করতে বাধা দেয়া করা হয়। এতেই প্রমাণ হয় প্রধান বিচারপতি স্বেচ্ছায় ছুটিতে যাননি, তাকে বল প্রয়োগ করে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। তারা প্রধান বিচারপতিকে তাদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন। তিনি অন্তরীণ। একমাত্র সরকারি নির্দেশিত ব্যক্তিরাই প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাত করতে পারবে অন্যরা নয়।
তিনি বলেন, প্রধান বিচারপতি ছুটির যেই কথিত চিঠি প্রকাশ করেছে, সেই চিঠিতে অনেক জায়গায় বানান ভুল রয়েছে। চিঠি নিয়ে দেশের বিভিন্ন মহল থেকে সন্দেহ প্রকাশ করছে। প্রধান বিচারপতির মত একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি কিভাবে পাঁচটি বানান ভুল থাকা চিঠিতে স্বাক্ষর করতে পারেন এমন প্রশ্নও তুলেছেন।
আইনজীবী সমিতির সভাপতি বলেন, সংবিধানের ৯৪তে স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার কথা আছে কিন্তু আজ এই স্বাধীন বিচার বিভাগের প্রধান কর্তা ব্যক্তি প্রধান বিচারপতি নিজেই স্বাধীন নয়। তিনি পরাধীন। উনাকে সরকার বল প্রয়োগ করে ছুটিতে পাঠিয়েছে। যা বিচার বিভাগের সঙ্গে সরকারের প্রতারণা বলে আমরা আইনজীবী সমিতি মনে করি।
প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাত করতে বাধার বিষয়ে জয়নুল আবেদীন বলেন, সুপ্রিম কোর্ট থেকে সভাপতি-সম্পাদকসহ কার্যনিবার্হী কমিটির সদস্যরা গতকাল শুক্রবার বিকাল পাচঁটার দিকে তার বাসার দিকে রওনা দিলে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল ভবনের সামনে ট্রাফিক লাইটে পুলিশ আমাদের গাড়ি বহর আটকিয়ে দেয় এবং পোশাকধারী ও সাদা পোশাকধারী আইন শৃংখলাবাহিনীর ৩০ থেকে ৩৫ জন বারের সভাপতির গাড়ি ঘিরে ফেলে। এবং তারা জানতে চায় বারের সভাপতি কোথায়। বারের সভাপতি তখন অন্য একটি গাড়ড়িতে ছিলেন। সভাপতির গাড়িতে থাকা আমাদের সমিতির সদস্যদের গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়ে পুলিশ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলে আামরা প্রধান বিচারপতি সঙ্গে সাক্ষাত করতে যাওয়ার পথেই ফিরে আসতে বাধ্য হই।
গত ২ অক্টোবর প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা এক মাসের ছুটির আবেদন করেছেন বলে গণমাধ্যমকে জানান আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। ওই দিন রাতেই আইনমন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেয়া হয় আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞাকে। তিনিই বর্তমানে প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পালন করছেন।
আইনজীবী সমিতির সম্পা্দক ব্যরিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে যারা অবস্থান নিয়েছেন তারা বিচার বিভাগের স্বাধীনতা চায় না।
এ সময় তিনি উদারহণ দিয়ে বলেন, ১৬শ খ্রিষ্টাব্দে ইংল্যান্ডের রাজাদের দেবতা মনে করা হতো। ওইখানে রাজারাই সব কিছু ছিল। চারশ বছর পর সেই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটেছে বলেও মনে করেন তিনি।
আইনমন্ত্রী ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির মাধ্যমে জানিয়েছিলেন প্রধান বিচারপতির সঙ্গে দেখা করতে বাধা দেয়া হবে না। কিন্তু তারপরও বাধা দেয়া হয়েছে এতে এক ধরনের প্রতারণা করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
খোকন বলেন, এ ঘটনায় মানুষ অনেক কষ্টে আছে। আইনজীবীরাও অনেক কষ্টে আছে।
প্রধান বিচারপতির অসুস্থতা এবং ছুটি নিয়ে তৈরি হওয়া উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে আজ সংবাদ সম্মেলন ডাকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি।
আজকের বাজার:এলকে/এলকে ৭ অক্টোবর ২০১৭