সিরিয়ায় কোবানের কুর্দিরা বাড়িঘর সংস্কার করছে

সিরিয়ার যে অংশ আইএস মুক্ত সে অংশে কুর্দিরা বাড়িঘর সংস্কার করছে। তারা বাড়িঘর মেরামতের জন্য বিদেশে অবস্থানরত আত্মীয়দের দিকে চেয়ে আছেন। খবর এএফডপি’র।

মার্কিন সমর্থিত কুর্দি বাহিনী তুমুল লড়াই চালিয়ে ইসলামিক স্টেট জিহাদিদের উচ্ছেদ করার সময় উভয়পক্ষের সংঘর্ষে তুরস্কের সীমান্তবর্তী সিরিয়ার অধিকাংশ উত্তরাঞ্চল প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে। ২০১৫ সাল থেকে এলাকাটি আইএস জিহাদিদের দখলে ছিল।
যুদ্ধের প্রাথমিক পর্যায়ে এর প্রচ-তা ও ভয়াবহতা থেকে রক্ষা পেতে সালেহ তুরস্কে পালিয়ে যান।

এক বছর পর তিনি তার নিজ বাড়িতে ফিরে আসেন। তিনি দেখতে পান ভয়াবহ যুদ্ধে তার বাড়ির তিনটি কামরার মধ্যে দুটি কামরা ধ্বংস হয়ে গেছে।

তিনি বলেন, ‘আমরা কোবানে ফিরে দেখতে পাই যুদ্ধ থেমে গেছে। শহরের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও ধ্বংসযজ্ঞ আমাদের হতবিহ্বল করে ফেলে।’

তিনি এক সময় জুতার কারিগর ছিলেন। তিনি আশা করেছিলেন কর্তৃপক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘর নির্মাণে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিবে। কিন্তু ধীরে ধীরে তার সেই আশা ‘ক্ষীণ হয়ে আসছে।’

৪৫ বছর বয়সী হতভাগ্য লোকটি বলেন, ‘আমাদের এই বাড়িতেই থাকতে হবে। আমরা সরকারের ফাঁকা বুলির ওপর ভরসা করে আর হাতপা গুটিয়ে বসে থাকতে পারছি না।’

তিনি তার পরিবারের সদস্যদের বিদেশে পাঠিয়েছেন। সেখান থেকে তারা তার জন্য অর্থ পাঠায়।

তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে জার্মানি এবং আমার ভাই ইরাকি কুর্দিস্তানে আছে। আমি ও আমার বাচ্চারা যেন বাড়িতে ফিরে আসতে পারি সেজন্য তারাই আমাকে সাহায্য করছে।’

এ পর্যন্ত বাড়ি মেরামতের জন্য সালেহ ১ হাজার ১৫০ মার্কিন ডলার খরচ করেছেন। এখন শুধু বাড়ির চূড়ান্ত রং করা বাকি।
তার পূর্বাঞ্চলীয় এলাকা বুতানেও আরেকটি বাড়িও মেরামত করা হয়েছে। এখনো বাড়িটিতে গুলির গর্ত দেখা যায়। তবে দেয়ালগুলো মেরামত করে রং করা হয়েছে।

মোহাম্মদ নায়েসান নিকটস্থ মার্টির কাওয়া জেলায় বাস করেন। তিনি তার একতলা বাড়িটি নিজ হাতে ও নিজ খরচে মেরামত করেন।
৭৬ বছর বয়সী এই বৃদ্ধ বলেন, ‘আইএস আমাদের বাড়িটি সম্পূর্ণ ধ্বংস করে ফেলে।’
তিনি তার স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে বাড়ির সামনে বসে পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত করছিলেন।

তিনি আরো বলেন, ‘মিউনিসিপালিটির লোকজন এসে ভবনের ক্ষতির সমস্ত বিবরণ লিখে নিয়ে গেছে। কিন্তু ওই পর্যন্তই। এরপর আর কিছুই করেনি।’

তিনি বলেন, ‘কেউ আমাদের সাহায্য করেনি। বাড়িঘর পুনরায় মেরামত করা খুবই ব্যয়সাপেক্ষ। আমার অনেক খরচ হয়েছে।’
২০১২ সালে থেকে সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় কুর্দি প্রধান এলাকাগুলো থেকে কেন্দ্রীয় সরকারি বাহিনীর সদস্যদের প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। এরফলে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এখানে আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে।

আইএস সিরিয়ার উত্তরাঞ্চল দখল করার সময় ২০১৪ সালে কোবান আক্রমণ করে।
নগরীর শীর্ষ কর্মকর্তা আনোয়ার মুসলিম বলেন, জিহাদিদের হটাতে চার মাসের এই যুদ্ধে নগরীর প্রায় অর্ধেক এলাকা ধ্বংস হয়ে যায়। শহরটির উত্তর ও পূর্বাঞ্চল সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

মুসলিম বলেন, ‘কোবানেতে ৫ হাজার বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে গেছে। এগুলোর প্রায় ৭০ শতাংশ পুনরায় নির্মাণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, কর্তৃপক্ষের এতো বাড়ি নির্মাণের মতো অর্থ নেই। তাই বিদেশে থেকে ব্যক্তি পর্যায়ে পাঠানো টাকায় বাড়ি নির্মাণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

কর্তৃপক্ষ পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহের দিকে মনোনিবেশ করেছেন। তাছাড়া কতৃপক্ষ বেশ কয়েকটি স্কুল পুনরায় নির্মাণ করছে।
কিন্তু তাদের এই পদক্ষেপও প্রায় ব্যর্থ। এখনো অধিকাংশ স্থানেই পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত হয়নি। কোবানের জনসংখ্যা সাত বছর আগে যুদ্ধ শুরুর সময় ৪ লাখ ছিল। আজ এই সংখ্যা হ্রাস পেয়ে আড়াই লাখে দাঁড়িয়েছে।

মুসলিম বলেন, ‘আমরা কর্মসংস্থান সৃষ্টির চেষ্টা চালাচ্ছি, চাকরির বাজার বৃদ্ধি করছি এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খুলে দিয়েছি।’
৩২ বছর বয়সী কুর্দি ভাষার শিক্ষক মুসলিম নাবু বলেন, ‘আমাদের বাড়ি পুনরায় নির্মাণের সামর্থ নেই।’
তিনি বাধ্য হয়ে ভাড়া বাড়িতে বাস করছেন।

মুসলিম বলেন, এখন পর্যন্ত ৫শ ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির মধ্যে মাত্র ২৫৮টি বাড়ির জন্য ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়েছে।

আরজেড/