সীমান্তে মাইন পুঁতেছে মায়ানমার: অ্যামনেস্টি

রোহিঙ্গাদের মধ্যে মৃত্যু আতঙ্ক তৈরির আগাম কৌশল হিসেবে মায়ানমার তার দেশের অভ্যন্তরে বাংলাদেশ সীমান্তে ‘সারা বিশ্বে নিষিদ্ধ’ ভূমি মাইন পেতে রেখেছে বলে দাবি করেছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। ইতোমধ্যে বিষয়টির সত্যতার প্রমাণও হাতে এসেছে বলে দাবি সংস্থাটির।

মানবাধিকার এই সংস্থাটি বলছে, দেশটির সেনারাই সীমান্তে নিষিদ্ধ ভূমি মাইন পুতে রেখেছে। প্রত্যক্ষদর্শী একাধিকজনের বরাত দিয়ে ও নিজেদের অস্ত্র বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে এমন দাবি করছে সংস্থাটি। এরই মাঝে সীমান্তের কাছের রাখাইনের তুং পায়ো লেট ওয়াল (তুমরো হিসেবে পরিচিত) এলাকায় কিছু ভূমি মাইন পাওয়া গেছে।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, এইসব ভূমি মাইন স্থাপনের ফলে রোহিঙ্গাদের মধ্যে মৃত্যুঝুঁকি বেড়ে গেছে। তারা সবসময় প্রাণভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। ফলে তারা জীবনে বাঁচাতে হাতের মুঠোয় মৃত্যু নিয়েও সাগর পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করছে।

শনিবার (০৯ সেপ্টেম্বর) এক বিবৃতিতে অ্যামনেস্টি বলছে, সারা বিশ্বে নিষিদ্ধ ভূমি মাইনে রাখাইন সীমান্তে গত সপ্তাহে দুই শিশুসহ অন্তত ৩ জন আহত হয়েছে। একজনের মৃত্যুও হয়েছে।

বিবৃতিতে অ্যামনেস্টির ক্রাইসিস রেসপন্স ডিরেক্টর তিরানা হাসান বলেন, ‘এমনিতেই রাখাইন রাজ্যে অস্থিরতা বিরাজ করছে। মানুষ জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। তার উপর এই ধরনের ভূমি মাইন পরিস্থিতিকে আরও ঘোলাটে করবে।’

বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্ত এলাকায় অবস্থান করছেন। বিবৃতিতে এমনটি জানিয়ে তিরানা আরও বলেন, ‘যেখানে প্রাণভয়ে সীমান্ত দিয়ে ব্যাপক সংখ্যায় মানুষ পালাচ্ছে, সেখানে এসব পথের যত্রতত্র অমানবিকভাবে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর মারণাস্ত্রের ব্যবহার সাধারণ মানুষের জীবনকে আরও ঝুঁকির দিকে ঠেলে দিচ্ছে।’

অ্যামনেস্টির ওই বিবৃতিতে বলা হয়, রোহিঙ্গাদের অনেকেই বাংলাদেশে অস্থায়ী ক্যাম্প করলেও তারা প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আনার জন্য সীমান্তে পারাপার করছে। গত ৩ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ থেকে সীমান্ত পেরিয়ে তুং পায়ো লেট ওয়ালে গিয়ে ফিরে আসার সময় এমনই এক পঞ্চাশোর্ধ নারীর পা মাইনের উপর পড়ে যায়। পরে বাংলাদেশের একটি হাসপাতালে তাকে চিকিৎসা দেয়া হয়। তার পা দুটি হাঁটুর নিচ থেকে গেছে।

সংস্থাটি বলছে, এ ঘটনার পর ওই নারীর বিস্ফোরণের পর পরই মোবাইল ফোনে ওই নারীর ক্ষত-বিক্ষত ফোলা পায়ের তোলা ছবি তোলা হয়। শুরু হয় যাচাই-বাছাই। এর এক পর্যায়ে ক্ষতের ধরণ থেকে চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলেন- এটা বিস্ফোরক কোনও কিছুর কারণেই ঘটেছে, যা শক্তিশালী ও ভূমি থেকে উপরের দিকে বিস্ফোরিত হয়েছে। যার সব কিছু ভূমি মাইনেই হয়ে থাকে। গ্রামবাসীদেরও কেউ কেউ ভূমি মাইন পুতে রাখার বিষয়টি জানিয়েছে বলে দাবি অ্যামনেস্টির।

আজকের বাজার:এলকে/এলকে/ ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৭