সীমান্ত পিলারে ‘পাকিস্তান’ সরিয়ে ‘বাংলাদেশ’ বসালো বিজিবি

বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে বিদ্যমান পিলারের গায়ে খোদাই করে লেখা ‘পাক/পাকিস্তান’ পরিবর্তন করে ‘বিডি/বাংলাদেশ’ বসিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। আজ বুধবার রাজধানীর পিলখানা বিজিবি সদর দফতরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিজিবি পরিচালক (অপারেশন) লেফটেন্যান্ট কর্ণেল ফয়জুর রহমান এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, সীমান্তে মোট ১০ হাজার ২৪০টি পিলার ছিল, যেগুলো অনেক আগের। এগুলোতে ‘পাক’ অথবা ‘পাকিস্তান’ লেখা ছিল। সীমান্তে দায়িত্বরত বিজিবি সদস্যরা এসব পিলারে ‘বিডি’ বা ‘বাংলাদেশ’-এ কনভার্ট করার বিষয়টি আমাদের বিবেচনা করতে বলেন। পরে বিজিবি’র মহাপরিচালক প্রক্রিয়া অনুযায়ী এগুলো বদলের সিদ্ধান্ত নেন। কার্যক্রমের অংশ হিসেবে বিজিবি সদস্যরা নিজেদের উদ্যোগে সিমেন্ট-বালু নিয়ে সীমান্তে থাকা এইসব পিলারের গায়ে ‘পাক/পাকিস্তান’ পরিবর্তন করে ‘বিডি/বাংলাদেশ’ বসিয়েছেন।

মাদক পাচার সংক্রান্ত সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,মাদক পাচার ঠেকানোসহ সীমান্তের সার্বিক বিষয়ে বিজিবি দায়িত্বপালন করছে। ইয়াবাসহ সব ধরনের মাদক দ্রব্য প্রতিরোধে মিয়ানমার সীমান্তে বিজিবি সদস্যরা বরাবরের মতো সতর্ক রয়েছে। এটা বলতে পারি যে, সীমান্তে মাদকের সাথে বিজিবির সম্পৃক্ততা জিরো।’
ফয়জুর রহমান বলেন, সীমান্ত সুরক্ষার পাশাপাশি সীমান্ত ব্যবস্থাপনা জোরদারে বিজিবিতে ‘স্মার্ট ডিজিটাল সার্ভেইল্যান্স এন্ড ট্যাকটিকাল বর্ডার রেসপন্স সিস্টেম’ স্থাপন করা হয়েছে। টেকনাফে কাঁটা তারের বেড়ার কাজ চলছে। ভাসমান বিওপি স্থাপন ও দ্রুত গতিসম্পন্ন ইন্টারসেপটার সিলভার ক্র্যাফট জলযান সংযোজন করা হয়েছে। বিজিবিতে বর্তমানে ২টি হেলিকপ্টার সংযোজন রয়েছে।

তিনি বলেন, পার্বত্য সীমান্ত এলাকায় ৮১৫ কিলোমিটার সীমান্ত সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। সেখানে ৩১৭ কিলোমিটার সীমান্ত সড়ক নির্মাণ কাজ বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। এছাড়াও ৭৩টি আধুনিক কম্পোজিট বিওপি নির্মাণের অনুমোদন গ্রহণ করা হয়েছে।

সীমান্ত হত্যা সম্পর্কে তিনি বলেন, সম্প্রতি বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বিএসএফ’র গুলিতে সীমান্ত নিহতের বিষয়টা বিএসএফ’র মহাপরিচালকের (রাকেশ আস্থানা) কাছ থেকে আপনারা মতামত পেয়েছেন,এরপর সীমান্তে কোন ধরনের হত্যাকান্ড ঘটেনি।

আরেক প্রশ্নের জবাবে বিজিবির অপারেশন পরিচালক বলেন, ‘সীমান্তে বিজিবি সদস্যদের কতটুকু উপস্থিতি থাকা প্রয়োজন,এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় দায়িত্বশীলরা নিশ্চয়ই আরও ভালো জানেন। আমাদের সীমান্তরক্ষার জন্য যতটুকু দরকার, ঠিক ততো সংখ্যক বিজিবি সদস্য মোতায়েন রয়েছেন। সীমান্তে আমাদের লোকজন সতর্ক রয়েছেন। দায়িত্বশীলদের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিজিবির বর্তমানে জনবল বেড়েছে, আমাদের অংশে যে দায়িত্ব রয়েছে, তার সর্বোচ্চটাই আমরা নিয়োজিত করছি।’

ফয়জুর রহমান বলেন, বিজিবি চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিগত ৮ মাসে দেশের সীমান্ত এলাকাসহ অন্যান্য স্থানে অভিযান চালিয়ে মোট ৩৭২ কোটি ৯ লাখ ৫৯ হাজার টাকা মূল্যের বিভিন্ন ধরনের চোরাচালান পণ্য ও মাদকদ্রব্য আটক করেছে।

এছাড়াও সীমান্তে বিজিবি’র অভিযানে ইয়াবাসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক পাচার ও অন্যান্য চোরাচালানে জড়িত থাকার অভিযোগে ২ হাজার ৬৩ জন চোরাকারবারীকে এবং অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রমের অভিযোগে ৩৪৪ জন বাংলাদেশী নাগরিক ও ৯৬ জন ভারতীয় নাগরিককে আটক করেছে।