ত্বককে সুন্দর ও উজ্জল করতে কে না চায়। সাধারণত বাজারে ত্বককে সুন্দর ও উজ্জল করার যে প্রসাধনী পাওয়া যায় তাতে বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল দেওয়া থাকে। এসব প্রসাধনী ত্বকের সৌন্দর্যকে ভিতর থেকে বাড়াতে তো পারেই না, উল্টো ত্বকের মারাত্মক ক্ষতি করে।
এতে ত্বকের জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। শুধু তাই নয়, কিছু ক্ষেত্রে তো ত্বক ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে।
চলুন জেনে নেই ত্বককে সুন্দর এবং রোগমুক্ত রাখতে চাইলে কোন ৮টি প্রসাধন ব্যবহার বর্জ ন করবেন:
১) ডিওডোরেন্ট
বেশ কিছু স্টাডিতে দেখা গেছে ডিওডোরেন্ট তৈরি করতে যে যে উপকরণগুলি ব্যবহার করা হয়ে থাকে, তা অনেকে ক্ষেত্রেই ত্বকের সংস্পর্শে আসা মাত্র ইরিটেশন সৃষ্টি করে। এর ফলে চুলকানি, ত্বক লাল হয়ে যাওয়া এবং ত্বকের মারাত্মক ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। এসব কারণেই বেশি মাত্রায় ডিওডোরেন্ট জাতীয় কসমেটিক্স ব্যবহার করতে মানা করেন ত্বক বিশেষজ্ঞরা।
২) ব্লিচ ক্রিম
ত্বককে ফর্সা বানাতে অনেকেই ব্লিচ ক্রিম মুখে লাগিয়ে থাকেন। এমন কসমেটিক্স ব্যবহারের কারণে কিছু ক্ষেত্রে ফল পাওয়া যায় ঠিকই। কিন্তু এমন ধরনের ক্রিম ত্বকের যে কী মাত্রায় ক্ষতি করে থাকে, সে খবর অনেকেই রাখেন না।
প্রসঙ্গত, বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, বেশিরভাগ ব্লিচ ক্রিমে উপস্থিত হাইড্রোকুইনোনে নামক একটি উপাদান ত্বকের অন্দরে প্রবেশ করা মাত্র এমন মাত্রায় স্কিনের ক্ষতি করে যে একাধিক ত্বকের রোগ মাথা চাড়া দিয়ে ওঠার আশঙ্কা যায় বেড়ে।
৩) ট্যালকম পাউডার
বেশ কিছুদিন আগে এক বিদেশি বেবি পাউডার প্রস্তুতকারক কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা শুরু হয়েছিল মার্কিন কোর্টে। অভিযোগ উঠেছিল দীর্ঘদিন ধরে সেই বেবি পাউডারটি ব্যবহার করলে নাকি ক্যান্সারের মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বিষয়টা কতটা ভয়ানক একবার ভেবে দেখুন!
তবে একমাত্র ওই ব্র্যান্ডটি ব্যবহার করলেই যে শরীরের ক্ষতি হতে পারে, এমন নয়। গবেষণা বলছে, যে কোনও ধরনের পাউডার ব্যবহার করলেই হতে পারে নানা ধরনের রোগ। বিশেষত, অ্যালার্জি এবং ফুসপুসের মারাত্মক ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। সেই সঙ্গে ত্বকের সৌন্দর্যও কমতে শুরু করে।
৪) কাজল
চোখের সৌন্দর্য বাড়াতে অধিকাংশ মেয়েরাই চোখে কাজল ব্যবহার করে। কিন্তু এই প্রসাধনিটি মোটেও চোখের জন্য ভাল নয়। কারণ একাধিক কেস স্টাডিতে দেখা গেছে, কাজল বা সুরমা নিয়মিত ব্যবহার করলে চোখের সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। সেই সঙ্গে কনজিভাইটিস, উভেইটিস, গ্লকোমা, ড্রাই আই এবং কনজাংটিভাল ডিসকালারেশনের মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
৫) লিপস্টিক
ঠোঁটের সৌন্দর্য বৃ্দ্ধি করতে সিংহভাগ মেয়েই এই প্রসাধনীটি ব্যবহার করে থাকেন। এটি নিয়মিত লাগালে ঠোঁটের আদ্রতা হারাতে শুরু করে। ফলে ঠোঁটের সৌন্দর্য তো কমেই। সেই সঙ্গে ঠোঁটকে কালো করে এবং মারাত্মক ক্ষতি হয়। আসলে বেশিরভাগ লিপস্টিকেই এমন কিছু উপাদান ব্যবহার করা হয়, যা মোটেও ঠোঁটের জন্য ভাল নয়।
৬) নেইলপলিশ
কাজল এবং লিপস্টিকের পর যে প্রসাধনিটির ব্যবহার সব থেকে বেশি মাত্রায় হয়ে থাকে, সেটি হল নেইলপলিশ। কিন্তু আপনাদের কি জানা আছে, রং বেরঙের এই প্রসাধনীটি নখ এবং ত্বকের কতটা ক্ষতি করে থাকে! বিশেষত লাল এবং কালো রঙের নেইলপলিশ যদি প্রতিদিন লাগানো হয়, তাহলে তো নখের মারাত্মক ক্ষতি হয়ে থাকে।
সেই সঙ্গে নানাবিধ কেমিক্যালের প্রভাবে নখ হলুদ হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটে থাকে। প্রসঙ্গত, নেইল পলিশে অ্যাসেটোন নামক একটি উপাদান থাকে। এই কেমিকালটি নখকে দুর্বল করে দেয়। সেই সঙ্গে ধীরে ধীরে সৌন্দর্যও কমাতে শুরু করে।
তবে নেইলপালিশ, লিপস্টিক, কাজল দেওয়া একেবারেই বন্ধ করলে কেমন হয়ে যায়, তাই হঠাৎ করে দুই একদিন পরতে পারেন।
৭) ময়েসশ্চারাইজার
ত্বকের হারিয়ে যাওয়া আদ্রতা ফিরিয়ে দিতে এই ক্রিমটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে ঠিকই। কিন্তু এই ধরনের কোনও ক্রিমই স্কিনের জন্য ভাল নয়। আসলে অধিকাংশ ময়েসশ্চারাইজারেই এমন কিছু উপাদান থাকে, যা স্কিন বেরিয়ারকে নষ্ট করে দেয়। ফলে ত্বকের আদ্রতা বাড়ার পরিবর্তে আরও কমতে শুরু করে। সেই সঙ্গে ত্বকের নিজস্ব যে প্রতিরোধ ব্যবস্থা রয়েছে তাও দুর্বল হতে শুরু
৮) হেয়ার কালার এবং হেয়ার ডাই
এই ধরনের প্রসাধনী থেকে একদিকে যেমন অ্যালার্জির মতো রোগ আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে, তেমনি চুল পরা বেড়ে যাওয়া, ত্বকের প্রদাহ, সারা শরীরে লালা লাল ছোপ, চুলকানি এবং শ্বাস কষ্টের মতো সমস্যা মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে পারে।
প্রসঙ্গত, অনেক হেয়ার ডাইতে পিফেনাইলেনেডিয়ামাইন নামক উপাদান থাকে, যা ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা তো বাড়াই, সেই সঙ্গে রিপ্রোডাকটিভ টক্সিসিটি, নিউরোটক্সিসিটি, অ্যালার্জি, ইমিউন টক্সিসিটি এবং নানাবিধ ত্বকের রোগের পথ প্রশস্থ করে।
এসএম/