সুপরিকল্পিত ও আধুনিক নগরায়নের উদ্দেশে যশোর পৌরসভার মহাপরিকল্পনা

সুপরিকল্পিত ও আধুনিক নগরায়নের উদ্দেশে ‘মাস্টারপ্ল্যান’ তৈরি করেছে যশোর পৌরসভা। ২০১৭ থেকে ২০৩৭ সাল ২০ বছর মেয়াদী এই মাস্টারপ্ল্যানের মাধ্যমে গড়ে উঠবে আধুনিক নগর। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও বিনোদনসহ অনেকগুলো কমিউনিটি সুবিধার সমন্বয়ে প্রণীত হয়েছে এই মহাপরিকল্পনা। এছাড়াও বিদ্যমান নাগরিক সমস্যার সমাধানেও রয়েছে নানা পরিকল্পনা।
নব্যপ্রণীত মাস্টারপ্ল্যান ঘিরে যশোর পৌরসভার আরো অনেক রূপকল্প রয়েছে। যার মধ্যে আছে শহরের চারপাশ দিয়ে বাইপাস নির্মাণ। এছাড়া মহাপরিকল্পনায় ভৈরব পাড়ে একটি পার্ক, হাঁটাচলার পথ ও একটি সেতু নির্মাণেরও প্রস্তাবনা আছে। পাশাপাশি সৌন্দর্য্য বর্ধণের জন্য শহরের বিভিন্ন সার্কুলেশন পয়েন্টে ভাস্কর্য ও পাঁচটি প্রবেশ দ্বার নির্মাণের কথা বলা হয়েছে।
মানুষ ও যানবাহনের চাপ কমাতে সম্প্রসারিত হওয়া পৌর এলাকার চারপাশ ঘিরে বাইপাস নির্মাণ হবে। শোভাবৃদ্ধির জন্য নির্মাণ করা হবে এই জেলার ঐতিহ্য খেজুরগাছ ও আল্লাহু লেখা ভাস্কর্য। আর নদের পাড়ের প্রস্তাাবিত লিনিয়ার পার্কটিতে বসার জন্য থাকবে বিভিন্ন ডিজাইনের ‘সিটিং অ্যারেজমেন্ট’।
এছাড়া নতুন ব্রিজ নির্মাণ হবে শহরের দড়াটানার অদূরে বকুলতলা এলাকায়। সেখান থেকে সেতুটি নদের ওপারে ঘোপ নওয়াপাড়া সড়ক পর্যন্ত বিস্তৃত হবে। সদর হাসপাতাল থেকে কিছুদূর এগিয়ে জোড়াবাড়ির আগে যে একটি ইউটার্ন বা মোড় রয়েছে সেখানটায় গিয়ে ব্রিজটি সংযুক্ত হবে। এর পাশাপাশি নদের পাড় নিয়ে নির্মাণ করা হবে সাত কিলোমিটারব্যাপী ‘ওয়াকিংওয়ে’ বা হাঁটাচলার পথ।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর-এলজিইডি’র তৃতীয় নগর পরিচালন এবং অবকাঠামো উন্নীতকরণ (সেক্টর) প্রকল্পের মাধ্যমে যশোর পৌরসভা এই মহাপরিকল্পনা তৈরির উদ্যোগ নেয়। সংক্ষেপে ইউজিপিআইআইপি-৩, প্যাকেজ-২’র অধীন প্রস্তুতকৃত এই মাস্টারপ্ল্যানে বহুক্ষেত্র বিশিষ্ট স্বল্পমেয়াদী বিনিয়োগ পরিকল্পনা তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আর এতে ভূমির ব্যবহার, স্যানিটেশন, পরিবহন, যোগাযোগ, পরিবেশ ব্যবস্থাপনাসহ নগরবাসীর জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের নানা দিক সন্নিবেশিত করা হয়েছে।
পৌরসভার নগর পরিকল্পনাবিদ সুলতানা সাজিয়া জানান, এই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের মধ্যদিয়ে যশোরে আধুনিক মানের একটি নগরকাঠামো গড়ে তোলা সম্ভব হবে।
যশোর পৌরসভা সূত্র জানায়, বিদ্যমান ও ভবিষ্যৎ চাহিদা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে পৌর এলাকায় শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিনোদন ও কমিউনিটি সুবিধার অভাব রয়েছে। আর এই অবস্থার উন্নয়নে মাস্টারপ্ল্যানে শিক্ষাক্ষেত্রে ৩টি, স্বাস্থ্যে ৯টি, বিনোদনে ৪টি ও কমিউনিটি পর্যায়ে ১৭টি সুবিধার প্রস্তব রাখা হয়েছে। এমনকি নারী ও শিশুবান্ধব নগর কাঠামো গড়ে তোলারও পরিকল্পনা রয়েছে এতে।
পরিকল্পনায় ফুটপাত ও গণশৌচাগারের জন্য মহিলাদের পৃথক ব্যবস্থা, পার্ক ও নদীর ধারে আলাদা বসার স্থানের কথাও বলা হয়েছে। এছাড়া প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে খেলার মাঠেরও প্রস্তাবনা রয়েছে। মহাপরিকল্পনায় বলা হয়েছে প্রতিটি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তার এলাকায় অফিস, বাজার ও প্রশাসনিক সুবিধা সরবরাহ করবেন।
এসবের পাশাপাশি যশোর পৌরসভার আগামী দিনের বর্ধিষ্ণু অবস্থার বিষয় বিবেচনায় আরো অনেক সংখ্যক এলাকাভিত্তিক পার্ক, খেলার মাঠ, স্টেডিয়ামসহ বিভিন্ন অবকাঠামো গড়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
যশোর পৌরসভার সচিব আজমল হোসেন জানান, মহাপরিকল্পনায় প্রত্যেকটি এলাকা পৃথকভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এমনকি প্রত্যেকটি এলাকার জন্য আলাদা-আলাদা পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে। এক্ষেত্রে আবাসিক ও বাণিজ্যিক প্রত্যেকটি ভিন্ন এলাকার জন্য পৃথক পৃথক পরিকল্পনাও রাখা হয়েছে। ফলে এই পরিকল্পনার বাইরে এখন থেকে নিজের ইচ্ছামত কেউ আর কোনো অবকাঠামো স্থাপন করতে পারবে না। তিনি আরও জানান, মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন হলে সব ধরনের নাগরিক সুবিধাসহ পরিবেশ বান্ধব ও আধুনিক অবকাঠামোর দিক দিয়ে স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি মডেল পৌরসভা গড়ে উঠবে।