সুরের জাদুকর বান্দরবানের মং নু মং

বান্দরবান সদর উপজেলার সদর ইউনিয়নের লুলাইন হেডম্যান পাড়ার বাসিন্দা মং নু মং, বয়স ৭৫ বছর। জন্মের পর থেকে সেখানেই তিনি পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন। জুম চাষ আদি পেশা হলেও মারমা সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী জাইত গানের দলের দলনেতা মং নু মং। মারমা সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী ‘হ্নে’ বাঁশির সুরে পাড়াগুলোকে তিনি মাতিয়ে রাখেন।

জম্ম, মৃত্যু, বিয়ে এই তিন অনুষ্ঠানেই মং নু মং এর হ্নে বাঁশির সুর উঠে। এবং বান্দরবানের তারাছা খাল সংলগ্ন পাহাড়ি বসতি, খালের চর, বটমূলে তার বাঁশি চর্চা চলে। নিজের চেষ্টাতেই তিনি এ বাঁশি বাজাতে শেখেন বলে জানান মং নু মং। সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রায় ৪০ বছর ধরে মারমা সম্প্রদায়ের বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে হ্নে বাঁশি বাজাচ্ছেন। কৈশোর জীবনে ১৫০ টাকায় কেনা মিয়ানমারের তৈরি ৬৫ বছরের পুরনো হ্নে বাঁশিটি তিনি এখনো বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বাজান।

এর জন্য পাড়াবাসী তাকে সামান্য সম্মানী দিয়ে থাকেন। সম্মানী না পেলেও তিনি সামাজিক দায়বদ্ধতার কারণেও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে জাইত দলের সাথে বাঁশি বাজান। এছাড়াও বান্দরবানের ঐতিহ্যবাহী বোমাং রাজপূন্যাহ অনুষ্ঠানেও তিনি বাঁশিতে সুর তোলেন।

মং নু মং এর অসামান্য কৃতিত্বের জন্য ১৯৯৬ সালে ফান্সের এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বাঁশি বাজানোর জন্য তার ডাক পড়ে। বান্দরবান উপজাতীয় সাংস্কৃতিক ইন্সটিটিউটের মাধ্যমে তিনি ৯ সদস্যের একটি সাংস্কৃতিক প্রতিনিধি দলের সাথে ফ্রান্সে যান। সেখানে পরিবেশিত হয় মারমা সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী জাইত গান। এই গানের তালে তালে পরিবেশিত হয় মং নু মং এর হ্নে বাঁশির সুর।

মং নু মং জানান, বাকি জীবন বাঁশি বাজিয়ে গ্রামীণ প্রতিটি অনুষ্ঠানকে আনন্দ মুখর করে রাখতে চান তিনি। বান্দরবান জেলা শিল্পকলা একাডেমি ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইন্সটিটিউট বান্দরবানের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ মং নু মংকে সম্মাননা প্রদান করে। খবর-ইউএনবি

আজকের বাজার/আখনূর রহমান