সুশাসনের অভাবে মানুষ আইন হাতে তুলে নিচ্ছে

সুশাসনের অভাবে মানুষ আইন হাতে তুলে নিচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। ১৪ অক্টোবর শনিবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউটে পার্টি কেন্দ্রীয় যৌথ সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

এরশাদ বলেছেন,সারাদেশে এখন অস্থিরতা বিরাজ করছে। রাজনৈতিক সংকট, রোহিঙ্গা সংকট, খাদ্য সংকট, প্রশাসনিক দূর্বলতা, আইন শৃঙ্খলার পরিস্থিতির চরম অবনতি, বিচার বিভাগসহ সর্বক্ষেত্রে অস্থিরতা বিরাজ করছে। দেশে এখন আইনের শাসন নেই বললেই চলে। তাই সাধারণ মানুষ নিজের হাতে আইন তুলে নিচ্ছে।

সাবেক রাষ্ট্রপতি আরো বলেন, দেশ নাকি মধ্যম আয়ের দেশ। অথচ শুক্রবার মাত্র তিন টাকার ডিম কেনার জন্য রাজধানীতে যা ঘটলো তা দেখে কি মনে হয় দেশ আসলে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নত হয়েছে? তিন টাকায় ডিম কিনতে ডিম মেলায় এসে হাজারো মানুষের হাঙ্গামায় আক্ষেপ প্রকাশ করে সাবেক রাষ্ট্রপতি বলেন,আমরা গর্ব করে বলি মধ্যম আয়ের দেশ। অথচ তিন টাকার ডিম নেয়ার জন্য কত মানুষ গিয়েছিল? এটা তো দৈন্যতার লক্ষণ, দারিদ্র্যের লক্ষণ, হীনমন্যতার লক্ষণ। আমরা সেই পর্যায়ে পৌঁছে গেছি।

এরশাদ বলেন, ‘বিএনপি মাত্র দশ বছর ক্ষমতার বাইরে আছে। এর মধ্যে তারা ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে। আমরা ২৬ বছর ক্ষমতার বাইরে। কিন্তু জণগণের ভালোবাসায় জাতীয় পার্টি এখনও বাংলাদেশে জনপ্রিয় দল । বিএনপি আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে কিনা সন্দেহ আছে। জাপা চেয়ারম্যান দলীয় নেতাকর্মীর প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘তোমরা আমার নয় বছরের শাসনামলের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড জণগণের কাছে তুলে ধরো না। অথচ প্রধান নির্বাচন কমিশনার সহ অন্যান্য কমিশনাররা সেই আমরা কর্মকাণ্ডের যে প্রশংসা করেছেন তাতে আমি অভিভূত হয়েছি। তারা সরকারী উচ্চ পদে থেকেও আমার প্রসংশা করেছেন।

রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে এরশাদ বলেন,মায়ানমারে সেনা প্রধান বলেছেন রোহিঙ্গারা নাকি বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমার গেছে, তারা বাঙ্গালী। সেনা প্রধানের এই বক্তব্যে পর মনে হয় না রোহিঙ্গাদের তাদের দেশে পাঠানো যাবে। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ দিয়ে এরশাদ বলেন,আপনি যতই কূটনৈতিক তৎপরতা চালান না কেন মনে হয় না তারা আর ফিরে যেতে পারবে বা মিয়ানমার ফেরত নেবে। তাই আমি অনুরোধ করবে তাদের কে আশ্রয় দেওয়ার ক্ষেত্রে যদি জাতীয় পার্টির সাহায্য প্রয়োজন হয়, আমরা সাধ্যমত সাহায্য করবো। এরশাদ সারাদেশ থেকে আগত দলীয় নেতাদের উদ্দেশ্যে বলেন,আমরা ক্ষমতায় যেতে চাই। কিন্তু তোমরা মনে রেখো ক্ষমতা কেউ হাত তুলে দেয় না। ক্ষমতা আদায় করে নিতে হয়। এজন্য দলকে আরো সুসংগঠিত করতে হবে।

সভায় সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা, পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ বলেন, ক্ষমতায় যেতে হলে দলকে আরো সুসংগঠিত করতে হবে। সাধারণ মানুষের কাছে জাতীয় পার্টির নয় বছরের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরতে হবে। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান দেশের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। আর পল্লীবন্ধু এরশাদ স্বাধীনতার সুফল ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়েছেন।

পার্টির কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেন, যারা দল থেকে বিশ্বাস ঘাতকতা করে চলে গেছেন তারা আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছেন। আবার অনেক পরীক্ষিত কর্মীও সঠিক মূল্যায়ন পাচ্ছে না। জাতীয় নির্বাচনে বিজয় হতে হলে আমাদের কর্মসূচী হতে হবে বাস্তবধর্মী ও কল্যাণমুখী।

মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন,জাতীয় পার্টি তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না। বর্তমান সংবিধান অনুয়ায়ী যে নির্বাচন হবে তাতে অংশ গ্রহণ করবে জাতীয় পার্টি। তিনি বলেন,নির্বাচনের সময় অবাধ ও সুষ্ট নির্বাচনের স্বার্থে সেনাবাহিনীতে স্ট্র্যাইকিং ফোর্স হিসেবে মাঠে রাখতে হবে। ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা বলেন, ৩০০ আসনে নির্বাচন করতে হলে এখন থেকেই প্রতিটি কেন্দ্রে ১০১ সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্র কমিটি গঠন করতে হবে। ভোট কেন্দ্র নিজেদের দখলে রাখতে শক্তিশালী কর্মী বাহিনী তৈরী করতে হবে।

এতে আরো উপস্থিতি ছিলেন পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য এম এ সাত্তার, অধ্যাপক দোলোয়ার হোসেন, সোলেয়মান আলম শেঠ, রত্না আমিন হাওলাদার, গোলাম কিবরিয়া টিপু, এম হাফিজ উদ্দীন আহমেদ, আবুল কাশেম, এম এ মান্নান, তাজুল ইসলাম চৌধুরী এমপি, উপদেষ্টা রেজাউল ইসলাম ভুইয়া, কাজী মামুনুর রশিদ, নাজমা আক্তার, যুব সংহতির সভাপতি আলমগীর শিকদার লোটন, ছাত্র সমাজের সভাপতি সৈয়দ ইফতেখার আহসান, কেন্দ্রীয় নেতা ইসহাক ভূঁইয়া, এমএ রাজ্জাক খান, সুজন দে, শেখ মাসুকুর রহমান।

যৌথসভা হলেও নেতাকর্মীদের ব্যাপক উপস্থিতির কারণে জনসভায় রূপ নেয় ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউট প্রাঙ্গণ। সকাল থেকেই সারাদেশের পাশাপাশি ঢাকা মহানগর উত্তর, দক্ষিণ, যুব সংহতি, ছাত্র সমাজের খণ্ড খণ্ড মিছিল জড়ো হয় রমনা এলাকায়। এই সময় পুরো সড়কে তীব্র যানজট লেগে যায়।

আজকের বাজার:এলকে/এলকে ১৪ অক্টোবর ২০১৭