সৌদি আরবে অনুষ্ঠেয় বিনিয়োগ সম্মেলন বর্জনকারীদের তালিকা দীর্ঘতর হচ্ছে। এবার এ তালিকায় নাম লিখিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী স্টিভেন মুচিন ও যুক্তরাজ্যের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য উন্নয়ন মন্ত্রী লিয়াম ফক্স। বৃহস্পতিবার তারা ওই সম্মেলন বর্জন করার ঘোষণা দিয়েছেন। খবর বিবিসি ও দ্যা ইনডিপেনডেন্টের
আগামী ২৩ তারিখ থেকে ২৫ তারিখ পর্যন্ত সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে ফিউচার ইনভেস্টমেন্ট ইনিশিয়েটিভ সামিট নামের আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলনে বিশ্বের বিভিন্ন শিল্পোন্নত দেশ, আন্তর্জাতিক সংস্থা, বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান, সম্পদ ব্যবস্থাপক, বড় বিনিয়োগকারী প্রমুখকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। তাতে ব্যাপক সাড়াও মিলে। কয়েক ডজন প্রভাবশালী ব্যক্তি ওই সম্মেলনে অংশগ্রহণে সম্মতিও দেন।
কিন্তু সাংবাদিক জামাল খাসোগির ‘নিখোঁজ’ এর ঘটনা সব কিছু উল্টেপাল্টে দেয়। জামাল খাসোগি নিখোঁজ নয়, বরং সৌদি সরকারের পরিকল্পনায় হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সন্দেহের আঙুল খোদ সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের দিকে। এ ঘটনায় পশ্চিমা বিশ্বে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। তার প্রেক্ষিতে সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীদের অনেকেই তাদের নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
উল্লেখ, গত ২ অক্টোবর কিছু বিশেষ কাগজ সংগ্রহের জন্য ইস্তাম্বুলে নিজ দেশের দূতাবাসে ঢোকার পর থেকেই নিখোঁজ সৌদি সাংবাদিক জামাল খাসোগি। যুবরাজ সালমানের কঠোর সমালোচক খাসোগি বেশ কিছুদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রে স্বেচ্ছা নির্বাসনে ছিলেন। তিনি ওয়াশিংট পোস্টে নিয়মিত কলাম লিখতেন। এসব কলামের অনেকগুলোতেই উঠে আসত যুবরাজ সালমানের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড।
বিভিন্ন সূত্রের বরাত দিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, খাসোগিকে সম্ভবত সৌদি দূতাবাসের ভেতর খুন করা হয়েছে। আর এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে ব্যক্তিগত বিমানে করে ঝটিকা সফরে আসা সৌদি আরবের ১৫ ব্যক্তির একটি বিশেষ দল। ওই দলে সৌদি সেনাবাহিনীর ফরেনসিক বিভাগের প্রধানসহ সেনা ও বিমান বাহিনীর কয়েকজন সদস্য ছিলেন। তারা খাসোগির ঘণ্টাখানেক আগে দূতাবাসে প্রবেশ করেন। পরে সেখান থেকে বের হয়ে সেদিনই তুরস্ক ছেড়ে যান।
সৌদি সরকারের বিরুদ্ধে নিজ দেশের সাংবাদিককে হত্যা করার অভিযোগের প্রেক্ষিতে পশ্চিমে সমালোচনার ঝড় শুরু হয়। এ ঘটনার প্রতিবাদে একে একে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান সৌদিতে অনুষ্ঠেয় বিনিয়োগ সম্মেলন থেকে তাদের নাম প্রত্যাহার করে নেয়।
ইতোমধ্যে ফ্রান্সের অর্থমন্ত্রী বুনু ল্য ম্যার ও নেদারল্যান্ডের অর্থমন্ত্রী ওপকা হোয়েক্সত্রা সম্মেলন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের প্রধান ক্রিস্টিন লাগার্দেও এ সম্মেলন থেকে নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
সম্মেলন বর্জনের সিদ্ধান্ত নেওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে আরও রয়েছেন সাবেক মার্কিন জ্বালানি মন্ত্রী আর্নেস্ট মোনিজ, ভার্জিন গ্রুপের কর্ণধার রিচার্ড ব্রনসন, এওএলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ কেস, উবারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা দারা খশরুশাহী, ভায়াকমের সিইও বব বিকাশ, জেপি মরগান চেজের সিইও জেমি ডিমন, ব্ল্যাকরকের সিইও ল্যারি ফিঙ্ক, ব্ল্যাকস্টোনের স্টিফেন শোয়ার্জম্যান, ফোর্ডের প্রেসিডেন্ট এবং মাস্টারকার্ডের সিইও অজয় বাঙ্গার প্রমুখ।
সম্মেলনে যাচ্ছে না এইচএসবিসি ব্যাংক, ক্রেডিট সুইস, স্ট্যান্ডার্ড চ্যার্টার্ড ব্যাংক।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী পত্রিকা নিউইয়র্ক টাইমস এবং যুক্তরাজ্যের ফিন্যান্সিয়াল টাইমস ওই বিনিয়োগ সম্মলনের মিডিয়া পার্টনার হিসেবে নিজেদের নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছে। অন্য গণমাধ্যমগুলোর মধ্যে সিএনএন, ব্লুমবার্গ, ইকোনোমিস্ট, সিএনবিসি সৌদি বিনিয়োগ সম্মেলন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে।