বিশ্বে সৌরশক্তি ব্যবহারকারী দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষস্থানে অবস্থান করছে বাংলাদেশ৷ বিশ্বে ৬০ লাখ সৌর প্যানেলের মধ্যে ৪০ লাখই বাংলাদেশে ব্যবহার করা হয়৷ ‘রিনিউয়েবলস ২০১৭ গ্লোবাল স্ট্যাটাস রিপোর্ট'-এ এসেছে এই তথ্য৷
রিপোর্ট-এ বলা হয়েছে, বাংলাদেশে প্রায় ৪০ লাখ সৌরশক্তির প্যানেল রয়েছে৷ এছাড়া ক্লিন স্টোভ ও বায়োগ্যাস ব্যবহারেও সামনের দিকে রয়েছে বাংলাদেশ৷ এতে প্রচুর কর্মসংস্থানও তৈরি হয়েছে৷ বাংলাদেশ বিশ্বে নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহারে ৫ম স্থানে রয়েছে৷
২০১৬ সাল থেকে বিশ্বে ৬০ লাখেরও বেশি স্থানে সৌরশক্তি ব্যবহার চলছে, আর এতে উপকৃত হচ্ছে আড়াই কোটি মানুষ৷ বিশ্বের অর্ধেকের বেশি সৌরশক্তির প্যানেলে বাংলাদেশে ব্যবহৃত হয়৷ এর সংখ্যা প্রায় ৪০ লাখ৷
প্যারিসভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান আরইএন এই প্রতিবেদন তৈরি করে৷ তাদের অর্থায়ন করেছে জার্মানির অর্থনৈতিক সহায়তা ও উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রণালয়, অর্থনৈতিক বিষয় ও বিদ্যুৎ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক প্রকল্প এবং ইন্টার-অ্যামেরিকান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (আইডিপি)৷
বাংলাদেশের ছয়টি প্রতিষ্ঠান এখন সোলার প্যানেল উৎপাদন করছে৷ এছাড়া সৌরশক্তি বিষয়ে অনেক গবেষণা হচ্ছে৷ ফলে সৌরবিদ্যুতের দাম দিন দিন কমছে বলে জানান ‘বাংলাদেশ সোলার অ্যান্ড রিনিউয়েবল এনার্জি এসোসিয়েশন’ বা বিএসআরইএ-র সভাপতি দীপাল চন্দ্র বড়ুয়া৷
প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘‘মিনি গ্রিড ও স্ট্যান্ড অ্যালোন দুই ব্যবস্থাই গ্রহণ করছে বাংলাদেশ৷ মূলত ক্ষুদ্রঋণের কারণেই প্রায় ৪০ লাখ সৌরশক্তি প্যানেল তৈরি করা সম্ভব হয়েছে৷’’ তালিকায় বাংলাদেশের পরেই বেশ কিছু আফ্রিকান দেশ রয়েছে৷ জ্বালানি ও বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের মতে, বর্তমানে দেশের ২ দশমিক ৮৬ শতাংশ বিদ্যুৎ সৌরশক্তিসহ নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে আসে৷
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, পাওয়ার গ্রিড দিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহের প্রক্রিয়া অনেক পুরাতন হয়ে গেছে৷ জাতীয় গ্রিড পৌঁছায় না এমন স্থানেই ওই ৪০ লাখ সৌরশক্তি প্যানেল স্থাপন করা হয়েছে৷ বাংলাদেশে প্রায় ৬ কোটি মানুষের কাছে বিদ্যুৎ এখনো পৌঁছায়নি বলে রিপোর্টে দাবি করা হয়৷
২০১২ সালে এই খাতে ৩০ লাখ ডলার ব্যয় করেছিল সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো৷ কিন্তু ২০১৫ সালে এসে তা দাঁড়ায় ১৫৮ মিলিয়ন ডলারে৷ আর ২০১৬ সালে সেটা হয় ২২৩ মিলিয়ন ডলার৷ নতুন অর্থ বছরে সৌরশক্তি ব্যবহারে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব করায় এই খরচ আরও বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে৷
অন্যদিকে পরিবেশবান্ধব চুলা ( ক্লিন কুকিং স্টোভ) ব্যবহারে বাংলাদেশে বিশ্বে ৫ম স্থানে রয়েছে৷ ২০১৪ সালে এমন পাঁচ লাখ চুলা স্থাপন করা হয়৷ এমন চুলা আমদানিতে সরকারি সহায়তার কারণে এই সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে রিপোর্টে বলা হয়।
২০১৫ সালে ২ কোটি পরিবেশ বান্ধবচুলা সরবরাহ করা হয়৷ বিশ্বে সবচেয় বেশি ব্যবহার করে চীন৷ এরপর ভারত, ইথিওপিয়া, নাইজেরিয়া ও বাংলাদেশ৷
বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট ব্যবহারেও বাংলাদেশ বিশ্বে ৫ম স্থানে রয়েছে৷ বর্তমানে সারাদেশে ৪৫ হাজার ৬১০টি বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট রয়েছে৷
২০১৬ সালে বায়োগ্যাসের মাধ্যমে রান্নার বিষয়টি বেড়ে গেছে৷ এশিয়াতেই এই হার অনেক বেশি৷ সবেচেয়ে বেশি চীনে (৪ কোটি ২৬ লাখ)৷ এরপর ভারতে (৪৭ লাখ)৷ এশিয়ায় আরও ৬ লাখ ২০ হাজার বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট রয়েছে৷ ২০১৬ সালে অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান গাড়িতে নবায়নযোগ্য জ্বালানি নিয়ে কাজ শুরু করেছে৷ চলতি বছরের শেষের দিকে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে সৌরশক্তিচালিত তিন চাকার অ্যাম্বুলেন্স দেখা যেতে পারে৷ ২০১৫ সাল থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে সারাবিশ্বেই নবায়নযোগ্য জ্বারানির ব্যবহার ১.১ শতাংশ বেড়েছে৷ আর এতে কর্মসংস্থান হয়েছে ৯৮ লাখ মানুষের৷
তথ্য-প্রযুক্তি খাতে সোলার ফটোভোলটাইক ও জৈব জ্বালানি সবচেয়ে বেশি কর্মসংস্থান নিশ্চিত করেছে৷ সারাবিশ্ব্ইে বিশেষ করে এই এশিয়াতে এই সংখ্যা সবচেয়ে বেশি৷ বাংলাদেশে এই সংখ্যা বেড়েছে ১০ শতাংশ৷
সুত্র: ডি ডব্লিই
আজকের বাজার: সালি / ১০ ডিসেম্বর ২০১৭