স্থানীয় সরকার নির্বাচন প্রচারণায় এমপিদের অংশ না নেয়ার বিধান বৈষম্যমূলক: তথ্যমন্ত্রী

তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন প্রচারণায় এমপিদের অংশ না নেয়ার বিধান বৈষম্যমূলক।
তিনি আজ রাজধানীর মিন্টো রোডে তাঁর সরকারি বাসভবনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে একথা বলেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জে সংসদ সদস্য শামীম ওসমান ঘোষণা দিয়েছেন তিনি নৌকার পক্ষে কাজ করবেন। আমি মনে করি এটিই সঠিক সিদ্ধান্ত। কিন্তু সেটি নিয়ে দেখলাম কিছু গণমাধ্যমে শামীম ওসমান নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করেছেন এমন কথা বলা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন প্রণীত আচরণ বিধিতে বলা হচ্ছে সংসদ সদস্যরা কোনো স্থানীয় নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। কিন্তু আশেপাশে কোনো দেশেই এ ধরণের আচরণবিধি নেই, ইউরোপেও এ ধরণের বিধিনিষেধ নেই।
তিনি আরো বলেন, মন্ত্রী এবং সংসদ সদস্যরা অন্যদেশে তাদের প্রটোকল বাদ দিয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে পারেন। পার্শ্ববর্তী দেশে এমনকি মুখ্যমন্ত্রীরাও পারেন, মন্ত্রীরাও পারেন। সেক্ষেত্রে শুধু প্রটোকল সুযোগ-সুবিধা বাদ দিতে হয়। সংসদ সদস্যদের ওপর নির্বাচন কমিশনের এ ধরণের বিধিনিষেধ বৈষম্যমূলক। ২০১৫ সালেও এ বিধিনিষেধ ছিলো না। অনেকেই বলছেন যে, এই বিধিনিষেধ অগণতান্ত্রিক। আমাদের দলের পক্ষ থেকে এ বিষয়টি বেশ কয়েকবার নির্বাচন কমিশনের নজরে আনা হয়েছে এবং কয়েকটি বৈঠকে আমি নিজেও ছিলাম। সেখানে এ বিষয়গুলো উপস্থাপন করা হয়েছিলো।’
করোনার সাথে আওয়ামী লীগের তুলনা দেয়ার বিষয়ে বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী’র মন্তব্য সম্পর্কে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘রিজভী সাহেবের এই বক্তব্যে মনে হয়, আসলে রাজনৈতিকভাবে আওয়ামী লীগকে মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়ে বিএনপি নেতারা দিক-বেদিক জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছেন এবং আবোল-তাবোল বলছেন, এটি তারই ধারাবাহিকতা।’
মন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী যেভাবে করোনা মোকাবিলা করেছেন সেটি পার্শ্ববর্তী দেশগুলোসহ অনেক দেশই করতে পারেনি। এটি সারা বিশ্ব কর্তৃক প্রশংসিত হয়েছে এবং করোনা মহামারিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হওয়ার কারণে আমাদের দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা আছে। করোনা মহামারিতে গতবছর পৃথিবীর মাত্র ২০টি দেশে পজেটিভ জিডিপি গ্রোথ হয়েছে তারমধ্যে বাংলাদেশ একটি, বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়।
হাছান মাহমুদ বলেন, করোনা এবং টিকা নিয়েও বিএনপির নেতারা বিভ্রান্তি ছড়িয়েছেন, আবার নিজেরাই করোনার টিকা নিয়েছেন। রিজভী আহমেদসহ বিএনপি’র সামনের সারির নেতারা ফ্রন্টলাইনার কারণ তারা রাজনীতির মাঠে সামনে থেকে সরকারের বিরুদ্ধাচরণ করছেন। আমরা চাই তারা সুস্থ থাকেন এবং ফ্রন্টলাইনার হিসেবে বুস্টার ডোজ নেবেন এই আশা করি।’
‘তবে বিএনপি’র ধ্বংসাত্মক রাজনীতি বাংলাদেশের মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে’ উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেন, ‘তারা ২০১৩, ২০১৪, ২০১৫ সালে দেশে প্রচন্ড ধ্বংসাত্মক রাজনীতির আশ্রয় নিয়েছিলো। তারা পেট্রোলবোমা, আগুনবোমা নিক্ষেপ করে মানুষকে হত্যা করেছে এবং দিনের পর দিন হরতাল, অবরোধের মাধ্যমে মানুষকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে। মানুষ সেই রাজনীতি প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা যে আবার সেই পথে হাঁটতে পারে সেটির ইঙ্গিত স্পষ্ট এবং সেটি হলে দেশের মানুষ তাদেরকে প্রতিহত করবে।’
‘এখন তারা মানুষের কাছ থেকে দূরে সরে গেছে। আবার একই অপরাজনীতি যদি তারা শুরু করে এবং অপরাজনীতির আশ্রয় নেয়, তারা চিরতরে মানুষের কাছ থেকে দূরে সরে যাবে’ বলেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী।
এর আগে মন্ত্রী হাছান মাহমুদ প্রধান অতিথি হিসেবে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে নিজ নির্বাচনী উপজেলা রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় সমতল ভূমিতে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে প্রাণিসম্পদ দপ্তরের সমন্বিত প্রকল্পের আওতায় ভেড়া ও শেড নির্মাণ সামগ্রী, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বিশেষ সহায়তার আওতায় শিক্ষার্থীদের মাঝে সাইকেল ও শিক্ষাবৃত্তি, ৪৩তম জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহ উপলক্ষে বিজ্ঞান মেলায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ এবং রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় স্কুল কলেজ পর্যায়ে ১২-১৮ বছর পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের করোনার টিকাদান কার্যক্রম উদ্বোধন করেন।
রাঙ্গুনিয়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ইফতেখার ইউনুসের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানে উপজেলা চেয়ারম্যান স্বজন কুমার তালুকদার, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও রাজানগর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শমসের আলম, জেলা আওয়ামী লীগ নেতা আকতার হোসেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা খায়রুল বাসার প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।