স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্য কতটা শক্তিশালী কাতালোনিয়া

একটি বিতর্কিত ও স্পেনের চোখে বেআইনি গণভোটের পর কাতালোনিয়ার নেতা কারলেস পুইগডেমন্ট বিবিসিকে বলেছেন, তাদের স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়া এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। কিন্তু এটা তারা করলে, তাতে ভালো রকমের বাধাও আসবে। কিন্তু ধরা যাক, এলাকাটি স্বাধীনতা পেল। তারপর? কাতালোনিয়ার নিজের পায়ে দাঁড়ানোর ক্ষমতা কতটা আছে?

পর্যবেক্ষকদের চোখে, এরই মধ্যে কাতালোনিয়াতে একটি পূর্ণাঙ্গ রাষ্ট্রের অনেক বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান।

তাদের নিজস্ব পতাকা আছে। একটি পার্লামেন্ট আছে। একজন নেতাও রয়েছেন। এ অঞ্চলের নিজস্ব পুলিশ বাহিনী রয়েছে। রয়েছে নিজস্ব সম্প্রচার নিয়ন্ত্রক, এমনকি বিদেশে কিছু ‘মিশন’ ও মিনি দূতাবাসও পরিচালনা করে তারা।

তারা কিছু জনসেবা এখনই প্রদান করে, যেমন, স্কুল ও স্বাস্থ্যসেবা। যদিও স্বাধীনতা পেলে তাদের আরো অনেক অবকাঠামো সৃষ্টি করতে হবে। স্থাপন করতে হবে সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, কাস্টমস ইত্যাদি।

প্রয়োজন হবে যথাযথ বৈদেশিক সম্পর্ক, প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, একটি কেন্দ্রীয় ব্যাংক, অভ্যন্তরীণ রাজস্ব এবং বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা। এর সবই এখন পরিচালিত হয় স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদ থেকে।

কিন্তু ধরা যাক, এই সব প্রতিষ্ঠানই তৈরি করতে পারলো তারা- কিন্তু এর যে ব্যয় এটা কী বহন করতে পারবে তারা? কাতালোনিয়ার একটি জনপ্রিয় শ্লোগান হলো, ‘মাদ্রিদ আমাদের লুটে নিচ্ছে’।

স্পেনের একটি রাজ্য হিসেবে কাতালোনিয়া কেন্দ্রকে যা দেয়, ফেরত পায় তার চেয়ে কম- এমনটিই ধারণা।

স্পেনের অন্যান্য অংশের তুলনায় অনেক সম্পদশালী কাতালোনিয়া। স্পেনের মোট জনগোষ্ঠীর ১৬ শতাংশের বাস কাতালোনিয়ায়। কিন্তু জিডিপির ১৯ শতাংশ আর রপ্তানির এক চতুর্থাংশ তাদের।

পর্যটন প্রশ্নেও কাতালোনিয়ার পাল্লা ভারী। স্পেনে গত বছর যে সাড়ে সাত কোটি মানুষ গেছে, তার মধ্যে এক কোটি আশি লাখই প্রথম গন্তব্য হিসেবে বেছে নিয়েছিল কাতালোনিয়াকে।

টারাগোনাতে রয়েছে ইউরোপের বৃহত্তম রাসায়নিক কেন্দ্র। পণ্য পরিবহন প্রশ্নে বার্সেলোনা ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ কুড়িটি বন্দরের একটি। এটাও সত্যি যে কাতালানরা তাদের রাজ্যে যা ব্যয় হয় তার চাইতে অনেক বেশি কর দেয়।

২০১৪ সালে কাতালোনিয়ায় কেন্দ্রীয় সরকার যতটা খরচ করেছে তার চাইতে দশ বিলিয়ন ডলার বেশি কর দিয়েছে কাতালানরা। কিন্তু কেউ কেউ মনে করেন, স্বাধীনতা পাওয়ার ফলে কর বাবদ কাতালোনিয়ার যা অতিরিক্ত রোজগার হবে, তার সবটাই লেগে যাবে নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান বানাতে এবং পরিচালনা করতে।

কাতালোনিয়ার ঋণও সম্ভবত একটা বড় আশংকার কারণ। সবশেষ হিসেব অনুযায়ী কাতালান সরকারের ঘাড়ে ঋণের বোঝা রয়েছে ৭৭ বিলিয়ন ইউরো। এটা তাদের জিডিপির ৩৫.৪ শতাংশ। এর মধ্যে ৫২ বিলিয়নই পাবে স্পেনের সরকার।

বৈশ্বিক মন্দার পর ২০১২ সালে রাজ্যগুলোকে নগদ সহায়তা দেয়ার জন্য একটি বিশেষ তহবিল গঠন করে স্পেনের সরকার। এই তহবিলের সবচাইতে বড় সুবিধাভোগীই কাতালোনিয়া, এখন পর্যন্ত এরা এখান থেকে ৬৭ বিলিয়ন ইউরো নিয়েছে।

স্বাধীনতা পেলে কাতালোনিয়া এই তহবিল ব্যাবহারের সুযোগই শুধু হারাবে না, একই সঙ্গে এই প্রশ্নও উঠবে যে, স্বাধীনতার পর কাতালোনিয়া তাদের ঋণের কতটা পরিশোধ করতে আগ্রহী থাকবে।

কাতালোনিয়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের এবং একক বাজারের অংশ থাকছে কী না তার ওপরও অনেকটা নির্ভর করছে তাদের অর্থনৈতিক সামর্থ্য। আর এটা থাকার জন্য তাদের সবগুলো ইইউভুক্ত দেশের অনুমোদন প্রয়োজন হবে, তার মধ্যে স্পেনও থাকবে।

কোন কোন স্বাধীনতাপন্থী শিবির মনে করছেন, কাতালোনিয়া এক্ষেত্রে নরওয়ের মতো একটা সমাধানে যেতে পারে। নরওয়ে ইইউতে যোগদান না করেই একক বাজার সুবিধার অংশ।

কাতালানরা হয়তো ইইউর সুবিধা এবং অবাধ চলাচলের সুযোগ পেতে অর্থকড়ি খরচ করতেও রাজি থাকবে। কিন্তু স্পেন যদি চায় তাহলে তারা স্বাধীন কাতালোনিয়ার জীবন দুর্বিসহ করে তুলতে পারবে।

আজকের বাজার:এলকে/এলকে ৪ অক্টোবর ২০১৭