স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতির তথ্য জনগন জানতে পারবে: দুদক চেয়ারম্যান

স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতির অনুসন্ধানের সব তথ্য জনগণ জানতে পারবে এবং কোনো তথ্যই গোপন থাকবে না বলে মন্তব্য করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান (দুদক) ইকবাল মাহমুদ। তিনি বলেছেন, ‘স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতির বিরুদ্ধে করোনা প্রাদুর্ভাবের আগ থেকেই কমিশন সক্রিয় ছিল। এ খাতের দুর্নীতির বিরুদ্ধে দুদক শুন্য সহিষ্ণুতার নীতি অনুসরণ করছে।’ আজ শুক্রবার সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

কমিশনের জনসংযোগ কার্যালয় বিষয়টি জানায়, সরকারের সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচিসহ বিভিন্ন দুর্নীতির বিষয়ে কমিশনের আইনী কার্যক্রমের ওপরে আজ একটি বিশেষ প্রতিবেদন দুদক চেয়ারম্যানের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এ সময় ইকবাল মাহমুদ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, ‘অত্যন্ত প্রতিকুল পরিবেশেই দুদককে আইনি দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। করোনা ভাইরাস দুদকের দুইজন কর্মকর্তার মূল্যবান জীবন কেড়ে নিয়েছে। এখনও ১৫ জনের বেশি কর্মকর্তা-কর্মচারী চিকিৎসা নিচ্ছেন। অনেকের পরিবারের সদস্যরাও করোনায় আক্রান্ত। আমি তাদের সকলের রোগমুক্তি কামনা করি।’

ত্রাণ আত্মসাৎকারীদের আগেই সতর্ক করা হয়েছিল জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কতিপয় লোভী মানুষকে প্রতিরোধ করা যায়নি। তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। অনেকে গ্রেফতার হয়েছে। বাস্তবতা হচ্ছে এদেরকে আইনের মুখোমুখি হতে হচ্ছে।’

ত্রাণ আত্মসাতের মামলাগুলোর আর্থিক সংশ্লেষ কম হলেও মামলাগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে দুদক চেয়ারম্যান কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, ‘তাই মামলাগুলো নিখুঁতভাবে তদন্ত সম্পন্ন করতে হবে। কোনো অবস্থাতেই প্রকৃত অপরাধীরা যেন পার না পেয়ে যায়।’

স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতি নিয়ে তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে বর্তমান কমিশন প্রতিকার ও প্রতিরোধমূলক বেশকিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। কমিশন ২০১৭ সালেই স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতি প্রতিরোধে প্রাতিষ্ঠানিক টিম গঠন করেছিল। ২০১৯ সালের শুরুতে এই খাতের দুর্নীতির ১১টি উৎস ও তা নিয়ন্ত্রণে ২৫ দফা সুনির্দিষ্ট সুপারিশ সংবলিত কমিশনের প্রতিবেদন দুদক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও সচিবের কাছে হস্তান্তর করে। এই পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন বাস্তবায়ন করা গেলে হয়তো স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতির লাগাম কিছুটা হলেও টেনে ধরা সম্ভব হতো।’

তিনি বলেন, ‘ঢাকা, সাতক্ষীরা, রংপুর, চট্টগ্রাম, ফরিদপুরসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা সামগ্রী ক্রয়ে দুর্নীতির অভিযোগেও কমিশন থেকে ১১টি মামলা করা হয়। এসব মামলায় সম্পৃক্ত ১৪টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করার বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করা হয়েছে।’

ইকবাল মাহমুদ জানান, সংশ্লিষ্ট এসব অনুসন্ধান ও তদন্ত এখনও চলমান রয়েছে। হয়তো আরও মামলা হবে, আরও প্রতিষ্ঠান কালো তালিকাভুক্ত করার সুপারিশ করা হবে। স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতির বিরুদ্ধে কমিশন শুন্য সহিষ্ণুতার নীতি অনুসরণ করছে বলেও জানান তিনি।

তিনি বলেন, ‘সরকারের সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচির দুর্নীতি, স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতি, সরকারি খাদ্য গুদাম থেকে খাদ্য সামগ্রী আত্মসাৎ ও জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনসহ বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে কমিশন একটি বিশেষ প্রতিবেদন করেছে। ঐ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- কমিশনের অনুমোদনক্রমে বিগত তিন মাসে ত্রাণ দুর্নীতি, সরকারি খাদ্য গুদামের খাদ্য-সামগ্রী আত্মসাৎ, অবৈধভাবে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনসহ বিভিন্ন অভিযোগে ২৩টি মামলা দায়ের করেছে কমিশন। প্রতিটি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাও নিয়োগ করা হয়েছে।’

ইকবাল মাহমুদ আরও বলেন, ‘স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে কোভিড-১৯ এর চিকিৎসায় নিম্ন মানের মাস্ক, পিপিই ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি ক্রয়সহ বিভিন্ন হাসপাতালে সরবরাহের নামে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ দ্রুততার সঙ্গে অনুসন্ধান করা হচ্ছে বলেও ওই প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।’