সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করায় বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের দুই যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক এবং রাশেদ খানকে ‘হত্যার হুমকি’ দিয়েছে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। এ ব্যপারে নুরুল হক এবং রাশেদ খান নিজেদের নিরাপত্তার বিষয় চিন্তা করে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে গেলে পুলিশ তা নেয়নি বলে জানিয়েছে তারা।
বুধবার (১৬ মে) বিকেল চারটায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক এ অভিযোগ করেন।
নুরুল হক বলেন, ‘গতকাল মঙ্গলবার রাতে ছাত্রলীগ নেতারা আমাদের হত্যার হুমকি দেন। আমরা এ বিষয়ে শাহবাগ থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে গেলে পুলিশ তা নেয়নি। আমাদের অভিযোগ শুনেছে। আধা ঘণ্টা বসিয়ে রেখেছে কিন্তু জিডি নিতে বলা হলে তারা বলেছে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া জিডি নিতে পারব না।’
তিনি বলেন, ‘প্রথমত আমি রাষ্ট্রের একজন নাগরিক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী। আমাদের জিডি না নিয়ে পুলিশ দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় দিয়েছে। গণতান্ত্রিক দেশে আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাই।’
হুমকি বা হয়রানিতে আন্দোলন থামবে না জানিয়ে সংগঠনের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশ করা হলেই কেবল আমরা আন্দোলন থেকে সরে আসব।’
আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খান বলেন, ‘নিরাপত্তা না দিয়ে পুলিশ যে আচরণ দেখিয়েছে, তা আমরা ভালোভাবে নেইনি। আমাদের জানমালের নিরাপত্তা দেওয়া পুলিশের কর্তব্য।’ কোটা সংস্কারের প্রজ্ঞাপন না হওয়া পর্যন্ত প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজে ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন থাকবে বলে জানান তিনি।
গতকাল মঙ্গলবার (১৫ মে) দিবাগত রাত দেড়টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের দুই যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক এবং রাশেদ খানকে ‘হত্যার হুমকি’ দেয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।
অভিযুক্ত হুমকিদাতারা হলেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ইমতিয়াজ উদ্দিন বাপ্পি, মহসীন হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান সানী, চারুকলা অনুষদ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফাহিম হাসান লিমন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জ্যোতি।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, হুমকির বিষয়ে নুরুল হক নূর বলেন, ‘কেন্দ্রীয় কমিটির (কোটা সংস্কার) যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ আমার রুমে ছিল। এর মধ্যে চারুকলা অনুষদের ছাত্রলীগের সেক্রেটারি লিমন ফোন দিয়ে থ্রেট দেয় যে, হল থেকে নামিয়ে দেওয়া হবে। পিটিয়ে নামিয়ে দেওয়া হবে। আমরা নাকি সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছি।’
তিনি বলেন, ‘এক পর্যায়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ইমতিয়াজ উদ্দিন বাপ্পি কল নিয়ে বলেন, ছাত্রদলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকুতে মারছি। তোদের মতো পোলাপানকে খেয়ে দিতে দুই সেকেন্ডও লাগে না। তোগোরে গুলি কইরা মারি নাই শুধু কিছু সিনিয়রের নিষেধ ছিল। তবে তোরা বাঁচবি না। কিছুদিন পর প্রজ্ঞাপনটা জারি হোক। দেখি তোদের কোন বাপ ঠেকায়।’
নুরুল হক আরও বলেন, ‘তার ১০ মিনিট পরে কক্ষে পিস্তল নিয়ে এসে বলে, তোরা মা-বাবার কাছ থেকে দোয়া নিয়ে নে। তোরা বাঁচবি না। তোদের গুলি করে মারব। আমাকে (নুরুল হক নুর) মারতেও আসে। তারা আমার মোবাইলও নিয়ে যায়। যাতে আমি রেকর্ড করতে না পারি। আমরা এখন জীবননাশের হুমকির মুখে আছি।
তবে ‘হত্যার হুমকি’র অভিযোগ অস্বীকার করে ইমতিয়াজ বাপ্পি বলেন, ফাহিমের ফেসবুক আইডিতে রিপোর্ট করার বিষয়ে জানতে গিয়েছিলাম। এমন কিছুই হয়নি। বরং আমরা যদি বলি তারা আমাদের হুমকি দিয়েছে?
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানি বলেন, আমরা ঘটনাটি শুনেছি। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে জানতে হবে।
আজকের বাজার/ এমএইচ