হরিধানের আবিষ্কারক কৃষক হরিপদ কাপালি মারা গেছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯৫ বছর। বুধবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে সদর উপজেলার সাধুহাটি ইউনিয়নের আসাননগর গ্রামের নিজ বাড়িতে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
হরিপদ কাপালি ১৯৯৯ সালে নতুন প্রজাতির ধান আবিস্কার করেন। তার নামের সঙ্গে মিল রেখেই ওই ধানের নামকরণ করা হয় হরিধান। হরিধান একটি বিশেষ জাতের উচ্চ ফলনশীল ধান।
১৯৯৯ সালে নিজের ধানের জমিতে একটি ছড়া তার নজর কাড়ে। ধানের গোছা বেশ পুষ্ট এবং গাছের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে বেশি। এ ছড়াটি তিনি নজরদাড়িতে রাখলেন। ধানের বাইল (ছরা) বের হলে তিনি দেখতে পান বাইল গুলো তুলনামূলকভাবে অন্য ধানের চেয়ে দীর্ঘ, এবং প্রতিটি বাইলে ধানের সংখ্যাও বেশি। ধান পাকলে তিনি আলাদা করে বীজ ধান হিসেবে রেখে দিলেন। পরের মৌসুমে এগুলো আলাদা করে আবাদ করলেন এবং আশাতীত ফলন পেলেন। এভাবে তিনি ধানের আবাদ বাড়িয়ে চললেন। আর নিজের অজান্তেই উদ্ভাবন করলেন এক নতুন প্রজাতির ধান, হরিধান।
রাস্তার পাশে জমি হওয়ার কারণে চারদিক এ ধানের নাম ছড়িয়ে পড়ে। ধান কাটা শুরু হলে আশপাশ গ্রামের কৃষকও বীজ নিয়ে বাম্পার ফলন পান। কৃষক এ ধানের কোনো নাম না পেয়ে নাম দেন হরি ধান। এর পর থেকে হরি ধানের আবাদ বিস্তার ঘটে এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে, জেলা থেকে বিভাগ হয়ে সারা দেশে। সরকারের কৃষি বিভাগ থেকে হরি ধানের বীজ সংগ্রহ করে পরীক্ষামূলকভাবে মহেশপুরের দত্তনগর কৃষি ফার্ম ও সাধুহাটি খামারে চাষ করা হয়। হরি ধানের বৈশিষ্ট্য দেখে অনেকটা অবাক হয়ে যান কৃষিবিজ্ঞানীরা। তারা জানান হরি ধানে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি এবং অতিবৃষ্টি সহনীয়।
নিরহংকার এই মানুষটি মিডিয়ার কাছে দেশের ‘নিরক্ষর উদ্ভাবক’ হিসাবে পরিচিতি পেয়েছেন। বিগত তত্বাবধায়ক সরকার হরিপদ কাপালিকে সাদা মনের মানুষ হিসাব পুরষ্কিত করে। এছাড়াও তিনি পেয়েছেন নানা পুরুষ্কার ও সম্মাননা।
আজকের বাজারঃ সালি/ ৬ জুলাই ২০১৭