সোনালী ব্যাংকের টাকা হলমার্ক গ্রুপ লুণ্ঠন করেছিল বলে মন্তব্য করেছেন ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ। তিনি বলেন, হলমার্কে যে পরিমাণ ঋণ তার বিপরীতে সমপরিমাণে সম্পদ নেই। মূলত এখানে ঋণ বিতরণ করা হয়নি, হয়েছে লুণ্ঠন । আর এ কারণেই ব্যাংকটির প্রকৃত খেলাপি ঋণ প্রায় ৫০ শতাংশ ছাড়িয়েছে।
৭ জুন বুধবার বিকেলে রাজধানীর মতিঝিলে সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে ব্যাংকটির সর্বশেষ অবস্থা জানাতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ বলেন, সোনালী ব্যাংকের ২০টি শাখার অবস্থা খুবই নাজুক। যেখানে প্রায় ৮৪ শতাংশ খেলাপি ঋণ রয়েছে। এছাড়া ৫টি শাখার খেলাপি ঋণ ৫৪ শতাংশ।
সোনালী ব্যাংকের কথা আসলেই ঘুরেফিরে হলমার্কের কথা উঠে আসে মন্তব্য করে মাসুদ বলেন, ২০১০, ২০১১ এবং ২০১২ সালে ব্যাংকিং খাত, পুঁজিবাজার ও আবাসন খাতে বড় ধস নেমেছিল।
ওবায়েদ উল্লাহ বলেন, সোনালী ব্যাংকে বর্তমানে আমানত আছে ১ লাখ কোটি টাকা। এর মধ্যে ঋণ বিতরণ করা হয়েছে ৩৮ হাজার কোটি টাকা। বর্তমানে ব্যাংকটির দৃশ্যমান খেলাপি ১০ হাজার কোটি টাকা। ৭ হাজার কোটি টাকা অবলোপন করা হয়েছে। আরও ২ হাজার কোটি টাকা পুনঃতফসিলের আদালতে রিটের কারণে আটকে আছে। ৩৮ হাজার কোটি টাকার মধ্যে ১৯ হাজার কোটি টাকা নেই। এখন যেভাবে হোক ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমাতে হবে।
তবে ব্যাংকটির প্রায় অর্ধেক শাখায় খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশের কাছাকাছি থাকায় বিষয়টিকে তিনি ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন।
খেলাপি ঋণের কারণ উল্লেখ করে ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, কিছু দুষ্ট ঋণগ্রহীতাদের কাছে ব্যাংকের টাকা আটকে আছে। এটা বাদ দিলে মোটের উপরে কিন্তু ঋণ খেলাপি খুব বেশি না। মূল সমস্যা হচ্ছে বড় শাখায় বড় ঋণগ্রহীতাদের কাছে ঋণগুলো আটকে থাকা। তবে ঋণ আদায়ে নানারকম পদ্ধতি আছে। সুদ মওকুফ পদ্ধতি, পুনঃ তফসিল পদ্ধতি এবং আরেকটা পদ্ধতি মামলা।
ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ বলেন, ক্ষুদ্র ঋণ গ্রহীতাদের লোকদের বিরুদ্ধে মামলা করা হলে সফলতা পাওয়া যায়। এছাড়া টাকা আদায়ের হারও ভালো। কিন্তু যখন বড় ঋণগ্রহীতার কাছ থেকে টাকা আদায় করতে যাওয়া হয়, তখন আমরা খুবই অসহায় হয়ে পড়ি। আমরা রিটের আশ্রয় নেই। তবে আমরা রিটের চাপ থেকে বের হতে পারি না।
ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, আগে আদালতের রিট থাকা ঋণগুলো নিয়মিত দেখানো হতো। এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশে তা খেলাপি দেখানো হচ্ছে। এর ফলে ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ বেড়েছে। এ ছাড়া আগে নিয়মিত করা প্রায় ৩০০ কোটি টাকার ঋণ এবং নতুন করে আরও ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকার ঋণ খেলাপি হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে ব্যাংকের ডিএমডি এবং জিএমরা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ, ২০১০ থেকে ২০১২ সালের মার্চ পর্যন্ত সময়ে সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা শাখা থেকে অনিয়মের মাধ্যমে হল-মার্ক গ্রুপের আড়াই হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার ঘটনা প্রকাশ পেলে দেশব্যাপী ব্যাপক তোলপাড় হয়।
আর্থিক খাতে বড় এই কেলেঙ্কারির ঘটনায় ২০১২ সালের অগাস্টে অনুসন্ধান ও তদন্ত শুরু করে দুদক। প্রাথমিক অনুসন্ধান শেষে ওই বছর ৪ অক্টোবরে মোট ১১টি মামলা করা হয়।
২০১৩ সালের ৭ অক্টোবর হল-মার্ক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর মাহমুদ, তার স্ত্রী ও গ্রুপের চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলামসহ ২৫ জনের বিরুদ্ধে ১১ মামলায় অভিযোগপত্র দেয় দুদক।
আজকের বাজার : এলকে /এলকে ৭ জুন ২০১৭