হাওরের বাঁধ রক্ষায় কৃষকদের প্রাণান্তকর চেষ্টা

প্রতিবছর শুকনো মৌসুমে হাওরে ফসল রক্ষা বেরিবাঁধ সংস্কার করা হয়। আবার প্রতিবছরই পানিতে কম বেশি তলিয়ে যায়। কোন কোন বছর একেবারে আপামর হাওরের ফসল তুলতে পারেন না কৃষক। আবার কোন কোন বছর কিছু যায় কিছু থাকে। প্রতিবছরই পানি আসতে শুরু করলে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষসহ স্থানীয় প্রশাসন নড়ে চরে বসেন। ব্যাপক কাজ করেন বাঁধগুলো রক্ষায়। ফেসবুকে পোস্ট দেন আর বিল করেন সরাকারি কাগজে।

অথচ নিয়ম অনুযায়ী শুকনো মৌসুমের শুরুতেই বাঁধের কাজ মজবুত করে করলে এবং খনন কাজগুলো নিয়ম অনুযায়ী করলে ফসল হানির আশঙ্কায় শেষ মুহূর্তে হাওর পাড়ে দিন কাটাতে হয় না। তখন নজরদারি থাকলে হাজার হাজার কৃষকের ভোগান্তি হয় না।

ফসল চোখের সামনে ডুবে যাওয়ার দৃশ্য মাথায় রেখেই রসুল পুর গ্রামের মন্তোষ দাস ক্ষোভের সঙ্গে কথাগুলো বলেন।

তিনি সহ অন্যরা বলেন, খাল খননে চোখের সামনে দেখেছি অনিয়ম। লুটপাট বেড়িবাঁধেও। কিন্তু আমরা সাধারণ কৃষক। আমাদের কথা শুনেনা কেউ। ঠিকাদারদের সুবিধামতো সব করে। এখন ফসল যাচ্ছে কৃষকদের। না খেয়ে থাকলে থাকবে কৃষক। তাদের তো কিছু না। সরকার তাদের বেতন বন্ধ করবে না। এমন নানা অভিযোগ করেন স্থানীয় জগন্নাথপুর, নাওটানাসহ আশপাশের এলাকার সিদ্দক মিয়া, রবীন্দ্র তালুকদারসহ অসংখ্য কৃষক।

সোমবার বিকেলে আগাম বন্যা থেকে ফসল রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের সব প্রস্তুতি রয়েছে নিশ্চিত করলেও মঙ্গলবার দুপুর থেকে পানি বৃদ্ধির গতি অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ায় এখন অনেকটাই শঙ্কায় পড়েছেন জেলা প্রশাসনসহ পানি উন্নয়ন বোর্ড।

এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহন লাল সৈকত জানান, যদিও ফসল রক্ষায় সার্বক্ষনিক বাঁধে কাজ করছেন তারা সংশ্লিষ্ট পিআইসি সদস দের নিয়ে স্থানীয় প্রশাসনসহ তারপরেও সবচেয়ে বড় ধনু নদ ও কংশ নদীর পানি আশংকা জনক হারে বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় কিছুটা চিন্তার বিষয়। এরইমধ্যে বিভিন্ন স্থানে পানি উপচে নষ্ট হয়েছে নদের তীরবর্তী জমির ধান ও বিভিন্ন জাতের সবজি ঘের।

কৃষকরা আরো জানান, ধান পাকা ও কাটাইয়ে এখনো সময় লাগবে ২০-২৫দিন। আজকালের মধ্যে বাঁধ ভেঙে গেলে হাজার হাজার হেক্টর জমির কাঁচা ধান তলিয়ে যাবে। এসব বাঁশ বেত আর বালুর বস্তায় আটাকাবে না পানি।

জানা গেছে, নেত্রকোনা জেলায় ছোট বড় ১৩৪ টি হাওরের মধ্যে খালিয়াজুরী উপজেলাতেই ৮৯ টি হাওর। বাকীগুলো মোহনগঞ্জ ও মদন সহ কলমাকান্দা বারহাট্টা মিলিয়ে। তারমধ্যে খালিয়াজুরীতেই ১৮১ কিলোমিটার, মোহনগঞ্জে ৬১ কিলোমিটার এবং মদনে ৪৬ কিলোমিটার ডুবন্ত বাঁধ রয়েছে। ৪ টি ফোল্ডারে ৮৮ টি সেকশনে প্রায় এই ৩০০ কিলোমিটার বাঁধের ১৮৩ কিলোমিটার কাজ করেছে। এর মাঝে আবার আবার খালিয়াজুরী সদর ও চাকুয়া হয়ে ৫৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধে ৭ কিলোমিটার কীর্ত্তণখলা। এর অংশটিই এবছর আবারো ঝুঁকিপূর্ণ রয়ে গেছে। গত বছরও এটি দিয়ে পানি প্রবেশ করে হাওর ডুবেছিলো।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেয়া তথ্য মতে, জেলার ১০টি উপজেলার মাঝে হাওর বেষ্টিত ৬টি উপজেলায় ১৩৪টি হাওরে ডুবন্ত বাঁধ রয়েছে ৩ ৬৫ কিলোমিটার। এর মাঝে এ বছর ২৩ কোটি ৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৮৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ মেরামত করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় এবছর ১ লাখ ৮৪ হাজার ৮২৮ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়েছে। তারমধ্যে ৪১ হাজার হেক্টর জমিই হাওরাঞ্চলে। ইতিমধ্যে ধনু নদীর তীরবর্তী বাধেঁর বাইরের প্রায় দুই শতাধিক ধান ও সবজি ঘের নষ্ট হয়েছে। খবর-ডেইলি বাংলাদেশ

আজকের বাজার/আখনূর রহমান