জেলার ভেড়ামারার হার্ডিঞ্জ ব্রীজের নিচে প্রমত্তা পদ্মা নদী শুকিয়ে হারিয়েছে তার জৌলুস। পদ্মা নদী হার্ডিঞ্জ ব্রীজের নিচে চলছে চাষাবাদ। পর্যাপ্ত পানি না থাকায় এখন বিভিন্ন কৃষিজাত ফসলের চাষ হচ্ছে। এবছর হার্ডিঞ্জ ব্রীজের নিচে গাজর চাষের বাম্পার ফলন হয়েছে। শুষ্ক মৌসুম শুরু হতেই নাব্যতা হারিয়েছে খরস্রোতা পদ্মা। এক সময়কার ভরা যৌবনা পদ্মা শুকিয়ে ধু ধু বালু চরে পরিণত হয়েছে। পানি কমায় বাড়ছে চরের বিস্তৃতি।
প্রমত্তা পদ্মা নদীর হার্ডিঞ্জ ব্রীজের ২পাশে এখন মরুময় ধু-ধু বালুচর। পদ্মার সঙ্গে বিভিন্ন অঞ্চলের খাল বিল শুকিয়ে গেছে। শুকিয়ে গেছে পদ্মার শাখা, উপশাখা নদীগুলোও। বেশ কিছু ছোট নদী এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে। বর্তমান পদ্মায় পানি থাকলেও কোনও স্রোত নেই। অনেক আগেই পদ্মা পানি শুন্য হয়েছে। পদ্মার শাখা, উপশাখা নদীগুলো মূলত পদ্মাকে ঘিরেই এর সৌন্দর্য বিরাজ করে। কিন্তু শুষ্ক মৌসুমের আগেই পদ্মার পানি শুন্য হয়ে পড়ায় এর প্রভাব পড়েছে এসব নদী ও খাল বিলে। পদ্মার মতই নাম করা নদীর পানি শুকিয়ে গেছে। ছুটে চলা পদ্মা এখন পানি শুন্য নদী। দূর দিগন্তে যতদূর চোখ যায় শুধু ধু ধু বালুর চর। তবে এবার বৈশাখ আসার আগেই যতটুকু পানি পদ্মায় রয়েছে তা আর দেখা যাবে না বলেও সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
সংশ্লিষ্টদের মতে মূলত নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে বালুচরের উচ্চতা বেড়ে গেছে। বর্ষা মৌসুমে মাস তিনেকের জন্য নদীতে পানি থাকলেও সারা বছর জুড়েই তলানিতে থাকে পানি। পদ্মায় শেষ পর্যন্ত যে পানি থাকে কোনও কাজে লাগে না। বেশিরভাগ সময় একেবারে নাগালের বাইরে এ পানি অবস্থান করে। যা দিয়ে সেচের কাজও করতে পারে না কৃষকরা।
জেলে আমজাদ হোসেন বাসসকে বলেন, প্রমত্তা পদ্মা নদীতে পানি শুকিয়ে যাওয়ার কারনে জেলেদের একটি বড় অংশ বেকার হয়ে যায়। যারা নদীতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেন তাদের এখনই দুর্দিন শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে অনেকেই পদ্মা নদী থেকে নৌকা ও জাল গুটিয়ে নিয়েছে। তারা মাছ শিকার না করে দিনমজুর, অটো, ভ্যান ও রিকশা চালানোর পেশা বেছে নেয়।
পরিবেশবিদ আতাউর রহমান বাসসকে বলেন,আমরা অনেক আগে থেকেই নদী বাঁচাও আন্দোলন করে যাচ্ছি। কৃষক মজিবুর রহমান বাসসকে বলেন, হার্ডিঞ্জ ব্রীজের পূর্ব পাশে লালন শাহ সেতু ও হার্ডিঞ্জ ব্রীজের মধ্যখানে পদ্মার চরে গাজর চাষের বাম্পার ফলন হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর আগাম জাতের গাজরের ভালো ফলন হয়েছে। বিঘা প্রতি ১ লাখ টাকা থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত দামে গাজর বিক্রি হয়েছে। তবে অন্য বছরের তুলনায় এবারে গাজর আবাদের খরচ বেড়েছে। গাজরের বীজ এবারে কৃষকরা বেশি দামে বিক্রি করেছে। পাশাপাশি কৃত্রিম সার সংকটের কারনে সরকারের নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে সার কিনতে হয়েছে। শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির সঙ্গে আবাদের শুরুতে তীব্র খরায় দ্বিগুণ সেচ দিতে হয়েছে। গাজর চাষে আগে খরচ হতো সর্বোচ্চ ৪০ হাজার টাকা। এবারে হয়েছে ৬০-৭০ হাজার টাকা। তবে সার ও বীজের দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি বিদেশ থেকে গাজর আমদানির ফলে কৃষকরা দেশীয় গাজরের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না। গাজর চাষীদের কেউ কেউ আগাম গাজরের দাম পেয়ে খুশি। আবার অনেকেই সার, বীজসহ অন্যান্য উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় লাভবান হচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন।
ভেড়ামারা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মাহমুদা সুলতানা বলেন, গাজরের বাম্পার ফলনের জন্য বিভিন্ন জাতের বীজ চাষ করে থাকেন কৃষকরা। গাজর চাষ লাভজনক হওয়ায় প্রতি বছর গাজরের আবাদ বাড়ছে। এবারে গাজরের বাম্পার ফলন হয়েছে। বর্তমান বাজারে গাজর যে দামে বিক্রি হচ্ছে তাতে কৃষকরা অনেক লাভবান হচ্ছে। গাজর চাষীদের নানা পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করে আসছে কৃষি বিভাগ। (বাসস)