হার দিয়ে টি-টুয়েন্টি সিরিজ শুরু বাংলাদেশের

হার দিয়ে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচের টি-টুয়েন্টি সিরিজ শুরু করলো সফরকারী বাংলাদেশ। আজ সিরিজের প্রথম ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের কাছে ৬৬ রানে হেরেছে মাহমুদুুল্লাহ রিয়াদের দল। ফলে ১-০ ব্যবধানে সিরিজে এগিয়ে গেল স্বাগতিক নিউজিল্যান্ড।
প্রথম তিন ওয়ানডেতেও টস জিততে পারেনি বাংলাদেশ। হ্যামিল্টনে টি-টুয়েন্টি সিরিজের প্রথমটিতে টস ভাগ্যে হেরে আগে বোলিং-এ নামে টাইগাররা। বল হাতে শুরুটা দারুন ছিলো বাংলাদেশের। অভিষেক ম্যাচ খেলতে নামা বাঁ-হাতি স্পিনার নাসুম আহমেদকে দিয়ে বোলিং আক্রমণ শুরু করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ।
ওভারের শেষ বলে নিউজিল্যান্ডের ওপেনার ফিন অ্যালেনকে বোল্ড করেন নাসুম। অভিষেক ম্যাচে খালি হাতে ফিরতে হয় তাকে। শুরুর খারাপটা ভুলিয়ে দেন আরেক ওপেনার মার্টিন গাপটিল ও ডেভন কনওয়ে। বাংলাদেশের বোলারদের ওপর চড়াও হন গাপটিল। তাই পাওয়ার প্লেতে ৪৮ রান পেয়ে যায় নিউজিল্যান্ড।
সপ্তম ওভারে বাংলাদেশকে আবারো উইকেট শিকারের আনন্দে মাতিয়ে তুলেন নাসুম। গাপটিলের গুরুত্বপূর্ণ উইকেটটি তুলে নেন তিনি। লং-অফে সৌম্য সরকারকে ক্যাচ দেন গাপটিল। ২৭ বলে ৩টি চার ও ২টি ছক্কায় ৩৫ রান করেন নিউজিল্যান্ড ওপেনার।
দলীয় ৫৩ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারানোর পর নিউজিল্যান্ডের হাল ধরেন শেষ ওয়ানডেতে ১২৬ রান করা ডেভন কনওয়ে ও অভিষেক ম্যাচ খেলতে নামা উইল ইয়ং। রান তোলার কাজটা ভালোভাবে করছিলেন কনওয়ে। তাই ১০ ওভারে নিউজিল্যান্ডের স্কোর ৮৮।
উইকেটে সেট হয়ে কনওয়ের সাথে রানের গতি বাড়াতে থাকেন ইয়ংও। ১৫তম ওভারের পঞ্চম বলে নাসুমকে ছক্কা মেরে ১২ ম্যাচের টি-টুয়েন্টি ক্যারিয়ারে চতুর্থ হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন কনওয়ে। অবশ্য ডিপ ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ারে বাউন্ডারি লাইনে ক্যাচ নিয়েছিলেন শরিফুল। কিন্তু তার পা বাউন্ডারি স্পর্শ করেছিলো। তাই ৩৬ বলেই হাফ-সেঞ্চুরিতে পা রাখেন কনওয়ে।
অভিষেক ম্যাচে হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নিতে ভুল করেননি ইয়ং। ১৭তম ওভারের প্রথম বলে বাউন্ডারি দিয়ে ২৮ বলেই হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন তিনি। অবশ্য ঐ ওভারের পঞ্চম বলে ইয়ংকে বিদায় দেন বাংলাদেশ স্পিনার মাহেদি হাসান। ৩০ বলে ২টি চার ও ৪টি ছক্কায় ৫৩ রান করেন ইয়ং।
১৭ ওভার শেষে নিউজিল্যান্ডের স্কোর ছিলো ৩ উইকেটে ১৬২ রান। ১৮তম ওভারে ১৪ রান তুলে স্কোর ১৭৬ রানে নিয়ে যান উইকেটে নতুন আসা গ্লেন ফিলিপস। ১৯তম ওভারে কনওয়ে-ফিলিপস মিলে ১৪ রান যোগ করেন। তাই ২শ রানের স্কোর পেতে ১০ রানের প্রয়োজন পড়ে নিউজিল্যান্ডের।
শেষ ওভারে বল হাতে ছিলেন বাংলাদেশের পেসার মুস্তাফিজুর রহমান। শেষ ওভারে ২টি করে বাউন্ডারিতে ২০ রান তুলেন কনওয়ে ও ফিলিপস। ফলে ২০ ওভারে ৩ উইকেটে ২১০ রানের সংগ্রহ পায় নিউজিল্যান্ড। বাংলাদেশের বিপক্ষে এটিই নিউজিল্যান্ডের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ। আগেরটি ছিলো ৫ উইকেটে ২০৪ রান।
বাংলাদেশের নাসুম ৪ ওভারে ৩০ রানে ২টি উইকেট নেন। মাহেদি হাসান ৪ ওভারে ৩৭ রানে ১টি উইকেট নেন। এছাড়া মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন-অভিষিক্ত শরিফুল ইসলাম ও মুস্তাফিজ ৪ ওভার করে বল করে যথাক্রমে ৪৩, ৫০ ও ৪৮ রান দিয়ে উইকেটশুন্য ছিলেন।
জয়ের জন্য ২১১ রানের বিশাল টার্গেটে ভালো শুরুর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন বাংলাদেশের দুই ওপেনার মোহাম্মদ নাইম ও লিটন দাস। ১৫ বলে ২০ রান যোগ করে বিচ্ছিন্ন হন তারা। ৪ রান করে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হন লিটন। শিকারী ছিলেন নিউজিল্যান্ডের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক ও পেসার টিম সাউদি।
মারমুখী মেজাজে ব্যাট করা নাইম বেশি দূর যেতে পারেননি। ১৮ বলে ৫টি চারে ২৭ রান করেন। তাকে বিদায় দেন লোকি ফার্গুসন।
তবে নিউজিল্যান্ডের স্পিনার ইশ সোধির ঘুর্ণিতে পড়ে বাংলাদেশের মিডল-অর্ডারে ধস নামে। সোধির শিকার হয়ে সৌম্য সরকার ৫, মোহাম্মদ মিঠুন ৪, অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ১১ ও মাহেদি হাসান শুন্য রান করে আউট হন। ফলে ৭ দশমিক ৫ ওভারে ৫৯ রানে ষষ্ঠ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। আর সেখানেই রচিত হয়ে যায় বাংলাদেশের আরও একটি হারের কাব্য।
হারের ব্যবধানটা বড় হতে দেননি আফিফ হোসেন ও সাইফউদ্দিন। সপ্তম উইকেটে নিউজিল্যান্ডের বোলারদের বিপক্ষে সাবলীল ব্যাট করে দলের স্কোর শতরান পার করেন তারা। ইনিংসের শেষ পর্যন্ত খেলাতেই মনোযোগি ছিলেন আফিফ-সাইফউদ্দিন।
১৪তম ওভার শেষে জুটিতে হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন আফিফ-সাইফউদ্দিন। শেষ ৩৬ বলে ১০২ রানের প্রয়োজন পড়ে বাংলাদেশের। ওভারপ্রতি ১৭ রান দরকার ছিলো।
১৭তম ওভারের চতুর্থ বলে আফিফকে ফিরিয়ে জুটি ভাঙ্গেন নিউজিল্যান্ডের ফার্গুসন। ৩৩ বলে ৫টি চার ও ১টি ছক্কায় ৪৫ রান করেন আফিফ। তবে ইনিংসের শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ছিলেন সাইফউদ্দিন। ৩টি চার ও ১টি ছক্কায় ৩৪ বলে ৩৪ রান করেন তিনি। ২০ ওভার শেষে ৮ উইকেটে ১৪৪ রান করে বাংলাদেশ। নিউজিল্যান্ডের সোধি ৪ ওভারে ২৮ রানে ৪ উইকেট নেন। ম্যাচ সেরা হয়েছেন নিউজিল্যান্ডের কনওয়ে।
আগামী ৩০ মার্চ নেপিয়ারে বাংলাদেশ সময় দুপুর ১২টায় অনুষ্ঠিত হবে সিরিজের দ্বিতীয় টি-টুয়েন্টি।