‘হোক আলিঙ্গন’

ভারতে গত সোমবার মেট্রোতে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে থাকায় এক যুগলকে গণপিটুনি দেয় ভিন্নমত পোষণকারী কিছু লোক। ঘটনাটি সংবাদমাধ্যমের প্রচারে আসতেই নিমেষেই চেনা নগরী অচেনা হয়ে যায় কলকাতাবাসীর কাছে। হতভম্ব হলেও এই অমানবিক আচরণের বিরুদ্ধে এবার তারা সোচ্চার প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছেন।

জানা গেছে, বুধবার দুপুরে টালিগঞ্জ মেট্রো স্টেশনের সামনে জমায়েত হয় অসংখ্য তরুণ-তরুণীর। পোস্টার-প্ল্যাকার্ড-স্লোগানে তারা আওয়াজ তোলেন, ‘হোক আলিঙ্গন’। আলিঙ্গন যে আদৌ অশ্লীলতা নয়, অনৈতিক নয়, অপরাধ নয়, সেটা যে দু’টো মানুষের ভালবাসার অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ, সেই বার্তাই দেন ওই প্রতিবাদীরা।

প্রতিবাদে সামিল হন বিভিন্ন পেশার মানুষ। প্রতিবাদে সামিল এক তরুণী বলেন, ‘বন্ধুত্বের মধ্যে লিঙ্গভেদ দেখা হয় না, সেই সঙ্কীর্ণতা কাটিয়ে উঠুক আমাদের চারপাশের মানুষ। কেননা, এই শহর এ ধরনের সঙ্কীর্ণতা দেখতে অভ্যস্ত নয় এবং এই শহর এ সঙ্কীর্ণতাকে ঠাঁই দেবে না, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।’

ধীরে ধীরে বাড়তে থাকা ভিড়ের মধ্যে থেকে তখন ফের আওয়াজ ওঠে, ‘হোক আলিঙ্গন’। এর পর মেট্রো স্টেশনের সামনেই পরস্পর পরস্পরকে আলিঙ্গন করেন প্রতিবাদীরা। তাদের একাংশ মেট্রোর কামরাতেও ওঠেন আলিঙ্গনরত অবস্থায়। এভাবেই রূপ নেয় এক অভিনব বিক্ষোভ। মঙ্গলবার বিকেলে দমদম মেট্রো স্টেশনের সামনে জমা হওয়া মানুষ অবিলম্বে অভিযুক্তদের গ্রেফতারি দাবি করেন।

এ ঘটনায় ফেসবুক লাইভে এসে নিজের মতামত দিয়েছেন সঙ্গীতশিল্পী নচিকেতা। ক্ষুব্ধ নচিকেতা বলেন, ‘আসলে এটা যৌন ঈর্ষার বহিঃপ্রকাশ। এই মানুষদের বয়কট করুন প্রতিবেশীরা। তাদের জানানো হোক, আপনি একটি পবিত্র অনুভূতিকে নষ্ট করেছেন।’ ভবিষ্যৎ সময়ের দিকে তাকিয়ে ওই মানুষদের প্রতি তার পরামর্শ, ‘নিজেদের সংশোধন করুন। কারণ, যে তালিবানেরা বুদ্ধ মূর্তি ভেঙেছিল, তাদের থেকে খুব কম অপরাধ নয় এটা।’

নচিকেতার মতে, এটা আসলে ক্ষমতার জোর দেখানোর ফল। ‘…এটাই আসলে এক ধরনের মৌলবাদ। এর একটা যোগ্য জবাব দেওয়া উচিত।’ তার কথায়, ‘যে মানুষেরা ওই মেয়েটির গায়ে হাত দিল, তারা আসলে মারল না। আসলে ওই মেয়েটিকে ওরা মনে মনে ধর্ষণ করল। সেটা মার হয়ে বেরোল। এই প্রত্যেকটা লোক আসলে ধর্ষক। ওদের খুঁজে বের করে থানায় নিয়ে আসা উচিত।’ ইন্ডিয়া টুডে।

আরজেড/