চলতি অর্থবছরে মেগাপ্রকল্পের জন্য প্রথম আলাদা বাজেট ঘোষণা করেছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। কিন্তু একমাত্র পদ্মা সেতু ছাড়া মেগাপ্রকল্পগুলোতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। তাই এবারের অর্থবছরে ১০ প্রকল্পে ৩১ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।
দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের গতি বাড়াতে অবকাঠামো খাতে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে এ পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আসন্ন অর্থবছরের জন্য মেগাপ্রকল্পগুলোতে যে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে তার অর্ধেকই ব্যয় হবে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ও পদ্মা সেতুতে। চলতি বাজেটে (২০১৬-১৭) এসব মেগা প্রকল্পে বরাদ্দ ছিল ১৮ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। নতুন বাজেটে রূপপুর প্রকল্প এককভাবে ১০ হাজার ১৮৬ কোটি টাকা পাচ্ছে। চলতি বছর বরাদ্দ ছিল মাত্র ৬১৮ কোটি টাকা।
এ ছাড়া নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পে এবার বরাদ্দ থাকছে ৫ হাজার ৫২৪ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ছয় হাজার ২৬ কোটি টাকা। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত সেতুর কাজের ৪৩ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, আগামী বাজেটেও মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে। এ জন্য বরাদ্দ অব্যাহত থাকবে। সম্প্রতি সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে যুক্ত অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, বাস্তবায়নকারী মন্ত্রণালয়গুলোর কিছু সমস্যার কারণে মেগা প্রকল্পের অগ্রগতি সন্তোষজনক নয়। আগামী বাজেটে এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে গুরুত্ব দেওয়া হবে। এ জন্য অর্থ বিভাগে আলাদা তদারকি সেল খোলা হবে। আশা করা হচ্ছে, এর ফলে আগামীতে বাস্তবায়নে গতি আসবে।
মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে তিন বছর মেয়াদি পরিকল্পনা নিয়েছিল সরকার। এর মধ্যে এক বছর শেষ হতে যাচ্ছে। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে তিন লাখ কোটি টাকা প্রয়োজন, যার সংস্থান হবে দেশি-বিদেশি উৎস থেকে।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১০ মেগা প্রকল্পের অর্ধেক এখনও কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ। এর মধ্যে সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর, পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর, পদ্মা রেল সংযোগ, দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার-গুনদুম পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প উল্লেখযোগ্য।
দাতারা প্রতিশ্রুতি দিলেও এসব প্রকল্পের অর্থায়ন নিশ্চিত হয়নি এখনও। কিছু প্রকল্পে জমি অধিগ্রহণ, টেন্ডারসহ নানা জটিলতাও রয়েছে। ফলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এগুলোর বাস্তবায়ন নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
পরিসংখ্যান ব্যুরোর সাময়িক হিসাব অনুযায়ী, চলতি অর্থবছর মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির প্রবৃদ্ধি হবে ৭ দশমিক ২৪ শতাংশ। মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে সরকারের লক্ষ্য প্রবৃদ্ধির হার ক্রমে দুই অঙ্কের ঘরে নিয়ে যাওয়া। এ জন্য ক্রমান্বয়ে সরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি করে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে পথনকশা তৈরি করছে সরকার।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক ড. কে এ এস মুরশিদ বলেন, জিডিপির গতি ত্বরান্বিত করতে হলে বড় অবকাঠামো প্রকল্প প্রয়োজন। সেদিক থেকে বর্তমান সরকারের উদ্দেশ্য ভালো। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে অর্থায়ন। এ ছাড়া বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ তো রয়েছেই। আমাদের বাস্তবায়নের সামর্থ্য কম।
এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. মোহাম্মদ জাহিদ হোসেন বলেন, নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হলে রাজস্ব আয় বাড়াতে হবে, যা কঠিন। বিকল্প হিসেবে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা সম্ভব। কিন্তু সেটিও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। এসব বিবেচনায় অর্থ জোগান দেওয়া কঠিন হবে।
দক্ষ মানবসম্পদ, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ, কৃষি, জ্বালানি, ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন, তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি, বিনিযোগের গতি সঞ্চারসহ ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরের জন্য জনকল্যাণমুখী বাজেট চূড়ান্ত করেছে সরকার। আগামী ১ জুন জাতীয় সংসদে এ বাজেট পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এটি বর্তমান সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদের চতুর্থ এবং অর্থমন্ত্রীর ব্যক্তিগত ১১তম বাজেট। বিজি প্রেসে শুধু ছাপার অপেক্ষায় রয়েছে অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতা।
অর্থমন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বাজেটের আকার হবে চার লাখ কোটি টাকার বেশি। যা দেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ বাজেট। বাজেটের আকারে সঙ্গে বাড়ানো হচ্ছে ঘাটতির পরিমাণ। বাজেটে ঘাটতি ধরা হতে পারে ১ লাখ ২৯ হাজার ১০ কোটি টাকা; যা জিডিপির প্রায় ৫ দশমিক ৮ শতাংশ। চলতি বাজেটে যা ছিল ৯৭ হাজার ৮৫৩ কোটি টাকা। ঘাটতি মেটাতে নেওয়া অর্থের জন্য বছর শেষে সুদ বাবদ খরচ হতে পারে ৪২ হাজার ৬৪৬ কোটি টাকা।
২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে ১ লাখ ৫৩ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে এডিপিতে বরাদ্দ ছিল ১ লাখ ১০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। রাজস্ব আদায় লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ২ লাখ ৭১ হাজার কোটি টাকা।
আজকের বাজার:এলকে/এলকে/৩১ মে ২০১৭