ওয়ালটন ত্রিদেশীয় সিরিজের চতুর্থ ম্যাচে স্বাগতিক আয়ারল্যান্ডকে ৮ উইকেটে হারিয়েছে টাইগাররা। জয়ের জন্য ১৮২ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে ২৭ ওভার ১ বলে মাত্র দুই উইকেট হারিয়ে জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে যায় মাশরাফি বাহিনী। এই জয়ে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে যাওয়ার পথ সুগম হলো বাংলাদেশের।
তুলনামূলক ছোট লক্ষ্যে খেলতে নেমে সতর্ক কিন্তু মারমুখী শুরু করেন তামিম ও সৌম্য সরকার। গড়েন ৯৫ রানের জুটি। তবে জয়ের ব্যবধান যখন দুই অংকে নেমেছে এসেছে, দর্শক সমর্থকরা স্বপ্ন দেখছেন বড় জয়ের তখনই কেভিন ও’ব্রেইনের বলে নেইল ও’ব্রেইনের তালুবন্দি হন তামিম। ১৩ ওভার খেলা শেষে নিজের ৪৭ রানের মাথায় সাজ ঘরে ফেরেন তামিম।
৪০ রান নিয়ে ক্রিজে থাকা ওপেনার সৌম্য সরকারের সঙ্গে যোগ দেন সাব্বির রহমান। এর কিছুক্ষণ পরেই একদিনের ম্যাচে নিজের ৬ষ্ঠ অর্ধশতক তুলে নেন সৌম। সাব্বিরও তার সঙ্গে সমান তালে এগিয়ে যান। তবে জয়ের জন্য যখন আর মাত্র ১১ রান দরকার তখনই নিজের ৩৫ রানের মাথায় ব্যারি ম্যাককার্থির বলে জর্জ ডকরেলের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন সাব্বির। অপর প্রান্তে ৭৯ রানে অপরাজিত সৌমের সঙ্গে ক্রিজে যোগ দিতে মাঠে নামেম মুশফিক। ইনিংসের ২৮ তম ওভারে মুশফিকের ব্যাট থেকে আসে জয়সূচক রানটি। মুশফিক অপরাজিত থাকেন ৩ রানে। আর সৌম্য ৬৮ বল খেলে ৮৭ রানে অপরাজিত থাকেন।
এর আগে টসে হেরে মোস্তাফিজ, মাশরাফি, অভিষিক্ত সানজামুলের দারুণ বোলিং এর মুখে ৪৬ ওভার ৩ বলে আইরিশদের সব কয়জন ব্যাটসম্যান সাজ ঘরে ফেরেন। মোস্তাফিজ ৯ ওভার বল করে মাত্র ২৩ রানে নিয়েছেন ৪ উইকেট। দুইটি মেডেন ওভারও আছে তার। মাশরাফি ৬ ওভার ৩ বল করে ১৮ রানে নিয়েছেন ২ উইকেট। অভিষিক্ত সানজামুল ৫ ওভার বল করে ২২ রান দিয়ে নিয়েছেন ২ উইকেট। সাকিব ৯ ওভার বল করে ৩৮ রান দিয়ে নিয়েছেন ১ উইকেট। আর আরেকটি উইকেট নিয়েছেন মোসাদ্দেক হোসেন। তিনি ৬ ওভার বল করে ২১ রান দিয়েছেন। অপর দিকে রুবেল হোসেন ৮ ওভারে ৪১ রান দিয়ে রয়েছেন উইকেটশূন্য। মাহমুদুল্লাহ ৩ ওভার বল করে কোনো উইকেট পাননি। দিয়েছেন ১৩ রান।
আইরিশ ব্যাটসম্যানদের মধ্যে পল স্টার্লিং নিজের ও দলের রানের খাতা খোলার আগেই মোস্তাফিজের প্রথম শিকার হন। এরপর ক্রিজে আসেন অধিনায়ক ইউলিয়াম পোর্টারফিল্ড। এড জয়সির সঙ্গে ৩৭ রানের জুটি হয় তার। তবে নিজের ২২ রান ও দলের ৩৭ রানের মাথায় মোসাদ্দেকের কাছে কট এন্ড বোল্ড হয়ে সাজ ঘরে ফেরেন তিনি। দলের ৬১ রানের মাথায় সাকিবের বলে বোল্ড হয়ে সাজ ঘরে ফেরেন ইউলিয়াম পোর্টারফিল্ডের পরে ক্রিজে আসা অ্যান্ডি ব্যালবের্নি। ফিরে যাওয়ার আগে নিজের নামের পাশে তিনি যোগ করেন ১২ রান। এরপর এড জয়সির সঙ্গে যোগ দিতে ক্রিজে আসেন নেইল ও’ব্রেইন। তারা দুইজন ভালোই মোকাবিলা করছিলেন মোস্তাফিজ-সাকিবদের। তবে দলের ১১৬ রান আর নিজের ৩০ রানের মাথায় মোস্তাফিজের দ্বিতীয় শিকার হন নেইল ও’ব্রেইন। অপর প্রান্তের ৪০ এর কোটা পাড় করে ফেলেছেন এড জয়সি। কিন্তু দলের ১২৬ রানের মাথায় নিজের ৪৬ রানে সানজামুলের বলে তামিমকে ক্যাচ দিয়ে সাজ ঘরে ফেরেন তিনি। এরপর দলের ১৩৪ রানের মাথায় সাজ ঘরে ফেরেন কেভিন ও’ব্রেইন। তার সংগ্রহ ১০ রান। তিনি মোস্তাফিজের তৃতীয় শিকার হন। এরপর আর ব্যক্তিগত ৬ রানে মোস্তাফিজুরের বলে মুশফিককে ক্যাচ দিয়ে সাজ ঘরে ফেরেন গ্যারি উইলসন। দলের রান তখন ৭ উইকেট হারিয়ে ১৩৬।
ধারাবাহিক এই ব্যাটিং বিপর্যয়ের পরে দলের হাল ধরার চেষ্টা করেন জর্জ ডকরেল ও ব্যারি ম্যাককার্থি। ব্যক্তিগত ১২ রানে ম্যাককার্থি যখন সানজামুলের দ্বিতীয় শিকার হয়ে সাজঘরে ফেরেন তখন দলের রান ৮ উইকেট হারিয়ে ১৭১ রান। ম্যাককার্থি ফিরে গেলে ডকরেলকে সঙ্গ দিতে আসেন টিম মুর্তাঘ। কিন্তু এই জুটি দলের পাশে ৯ রান যোগ করতেই মাশরাফির প্রথম শিকারে হয়ে ব্যক্তিগত ২৫ রানে মাঠ ত্যাগ করেন জর্জ ডকরেল। দলের রান তখন ৯ উইকেটে ১৮০। জর্জ ডকরেল ফিরে গেলে ক্রিজে আসেন পিটার চেস। কিন্তু কোনো রান রা করেই মাশরাফির দ্বিতীয় শিকারে পরিনত হন তিনি। দলের রান তখন ১০ উইকেটে ১৮১। আইরিশদের ১১ জন ব্যাটসম্যানের মধ্যে ৫ রান নিয়ে অপরাজিত থাকেন টিম মুর্তাঘ।
সিরিজে বাংলাদেশ ও আয়ারল্যান্ডের তৃতীয় ম্যাচ এটি। ইতোমধ্যে সিরিজে দুই ম্যাচ খেললেও জয়ের স্বাদ পায়নি টাইগাররা। সিরিজে নিজেদের প্রথম ম্যাচ স্বাগতিক আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে ড্র; দ্বিতীয় ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের কাছে ৪ উইকেটে পরাজিত হয় মাশরাফি বাহিনী।
অন্যদিকে সিরিজের প্রথম ম্যাচ বাংলাদেশের সঙ্গে ড্র হওয়ার পর দ্বিতীয় ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের কাছে ৫১ পরাজিত হয় স্বাগতিক। সিরিজে টিকে থাকার জন্য দুই দলের কাছে আজকের ম্যাচটি গুরুত্বপূর্ণ।
এই ম্যাচে বাংলাদেশ দলে একটি পরিবর্তন আনা হয়। আজকের ম্যাচে তরুণ অলরাউন্ডার সানজামুল ইসলামের অভিষেক হচ্ছে। তাকে একাদশে জায়গা দিতে সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচ খেলা তরুণ অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান মিরাজকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে আয়ারল্যান্ডের একাদশে ডাক পেয়েছেন এড জয়সি। তাকে দলে নিতে বাদ দেওয়া হয়েছে স্ট্রুয়ার্ট থম্পসনকে।
বাংলাদেশ স্কোয়াড:
মাশরাফি বিন মুর্তজা (অধিনায়ক), তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকার, সাব্বির রহমান, মুশফিকুর রহিম, সাকিব আল হাসান, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, মোসাদ্দেক হেসেন, সানজামুল ইসলাম, রুবেল হোসেন এবং মোস্তাফিজুর রহমান।
আয়ারল্যান্ড স্কোয়াড:
ইউলিয়াম পোর্টারফিল্ড (অধিনায়ক), পল স্টার্লিং, এড জয়সি, নেইল ও’ব্রেইন, অ্যান্ডি ব্যালবের্নি, গ্যারি উইলসন, কেভিন ও’ব্রেইন, জর্জ ডকরেল, ব্যারি ম্যাককার্থি, টিম মুর্তাঘ এবং পিটার চেস।
আজকের বাজার:এলকে/এলকে/১৯ মে২০১৭