লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে প্রতারণার জাল বিছিয়ে অনলাইনে আয়ের লোভ দেখিয়ে তিন মাসে দুই হাজার মানুষের কাছ থেকে ১৬ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ৭ যুবকের একটি সিন্ডিকেট। এ সিন্ডিকেটের প্রত্যেকেই ছাত্রদল ও শিবিরের কর্মী। সম্প্রতি ঘটনাটি ফাঁস হলে এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে তারা।
পলাতক অভিযুক্তরা হলেন- ঐ উপজেলার উত্তর চর আবাবিল ইউনিয়নের ইমরান হোসেন ফারাবি, ইকরামুল কবির, আমিন আহমেদ জুয়েল ও উজ্জ্বল। এছাড়া এ চক্রে রয়েছেন স্থানীয় শিবির কর্মী মহসিন কবির, মো. আনাছ ও মো. নোমান।
সূত্র জানিয়েছে, কলেজছাত্র ইমরান হোসেন ফারাবি ও উজ্জল ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। আমিন আহমেদ জুয়েল হায়দরগঞ্জ বাংলাবাজারের নিউ তৃষা ডিজিটাল স্টুডিও অ্যান্ড টেলিকমের মালিক। ইকরামুল কবির ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত এবং একাধিক মামলার আসামি। ঘটনা ফাঁস হওয়ার পর জুয়েল দক্ষিণ আফ্রিকা পালিয়ে যান। রোমানিয়া যাওয়ার চেষ্টা করছেন ফারাবী।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৭ জনের এ প্রতারক চক্র প্রথমে এসপিসি, এসপিএল, সিএফসি, পিএমসি এবং সর্বশেষ ড্রিম শপ লিমিটেড নামে সফটওয়্যার চালু করে। এগুলোতে একটি অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য ফারাবী নগদে ১৯০০ টাকা নিতো। নতুন অ্যাকাউন্টে প্রতিদিন ২টি করে ভিডিও বিজ্ঞাপন আসে। ঐ ভিডিওগুলো দেখলে ২০ টাকা করে আয় হতো। এভাবে প্রতি মাসে একটি অ্যাকাউন্টে ৬০০ টাকা আসতো। প্রথম দিকে কিছু গ্রাহককে লোভ দেখাতে টাকা তুলতে দিলেও ৩ মাস পর তোলার সুযোগটি বন্ধ করে দেয়। এভাবে প্রায় ২ হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে তারা ১৫-১৬ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়।
এ চক্রের পাল্লায় পড়ে ৭ লাখ টাকা খুইয়েছেন হায়দরগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী সোহরাব হোসেন। তিনি বলেন, চক্রটির প্রধান ইমরান হোসেন ফারাবী। সে ও অন্যরা ড্রিম শপ সফটওয়্যার তৈরি করে আমার মতো অসংখ্য লোককে রাস্তায় বসিয়ে দিয়েছে।
কয়েকজন ভুক্তভোগী জানান, যে ফারাবী ১০০ টাকা হাত খরচ করতে পারতো না, সে হঠাৎ করে কয়েকদিনের মধ্যে ৫ লাখ টাকা দিয়ে মোটর সাইকেল কিনে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। কোটি টাকা খরচ করে বিলাসবহুল ভবন নির্মাণ করেছে। কোম্পানি থেকে এগুলো দেওয়া হয়েছে বলে প্রচার করতে থাকে ফারাবী ও কবির। তাদের হঠাৎ পরিবর্তন দেখে লোকজনও বেশি লাভের আশায় শত শত অ্যাকাউন্ট খুলতে থাকে। তারা একটির পর একটি সফটওয়্যার তৈরি ও বন্ধ করে প্রতারণার ফাঁদ পাততে থাকে।
টাকা আত্মসাতের ঘটনায় লক্ষ্মীপুর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেছেন ভুক্তভোগী ফাহিম কাদের। তিনি বলেন, ৭ যুবকের এ চক্র শুধুমাত্র হায়দরগঞ্জ বাজার এলাকা থেকেই হাতিয়ে নিয়েছে ১৫-১৬ কোটি টাকা। ৬ কোটি টাকা দিয়ে জুয়েল দক্ষিণ আফ্রিকায় সুপারশপ তৈরি করেছে। ফারাবী নিয়েছে ১ কোটি ৫৬ লাখ, ইকরামুল কবির ৭৫-৮০ লাখ টাকা নিয়েছে।
ফাহিম আরো বলেন, তারা প্রতারণার মাধ্যমে একটির পর একটি সফটওয়্যার তৈরি করে লোকজনকে বোকা বানিয়ে টাকা হাতিয়ে নেয়। মামলা করায় তারা আমাকে হুমকি দিচ্ছে।
শিবির কর্মী ফারাবীর প্রতারণা থেকে রক্ষা পায়নি তার স্বজনরাও। বড় বোনের দেবর আবদুল হালিমের কাছ থেকেও ৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে সে। হালিম বলেন, ফারাবী এতটা ধূর্ত ও প্রতারক আগে বুঝিনি। আমার টাকা দেই দিচ্ছি বলেও দিচ্ছে না।
অভিযোগের বিষয়ে ইমরান হোসেন ফারাবী বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনা অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ সঠিক নয়। সফটওয়্যার বন্ধ থাকায় লেনদেন বন্ধ রয়েছে। জুয়েল দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ায় আমরা বিপদে পড়েছি। আমার আয় দিয়ে আমি বাড়ি, গাড়ি করায় অনেকেই আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডি লক্ষ্মীপুরের এসআই মো. আশরাফ উদ্দিন বলেন, তদন্ত চলছে। শিগগিরই আদালতে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে। খবর-ডেইলি বাংলাদেশ
আজকের বাজার/আখনূর রহমান