১৮ হাজার বছর পুরোনো কুকুরছানা উদ্ধার করল এক সাইবেরিয়ান দম্পতি

১৮ হাজার বছর পুরোনো কুকুরছানা

চোখের পাতা বেশ বড় বড়, ঘন কালচে খয়েরি লোম। তুলতুলে কুকুরছানার বয়স নাকি ১৮ হাজার বছর!‌ সাইবেরিয়ার ঘন বরফের স্তরে চেহারার কোনও বদল হয়নি। প্রাণহীন নিথর দেহটা দেখলে মনে হবে, ডাক দিলেই উঠে দাঁড়িয়ে লেজ নাড়াবে।

পূর্ব সাইবেরিয়ার ইয়াকুস্কের কাছে বরফের কবরে এত বছর ধরে চাপা পড়েছিল একটি কুকুরছানা। এক দম্পতির বছর দুয়েকের পোষা কুকুর এটির সন্ধান পায়। বরফের স্তর সরিয়ে এমনই একটি প্রাণীকে দেখে আচর্য্য হয়ে যান ওই দম্পতি। ঘন লোমে ঢাকা প্রাণীটিকে দেখে মনে হবেই না, কত হাজার বছর ধরে এমনভাবেই বরফে ঘুমিয়ে রয়েছে সে।
বয়স দু’ মাস, রেডিও কার্বন ডেটিং করে এমনটাই জানিয়েছে সুইডেনের ‘সেন্টার ফর প্যালিওজেনেটিক্স’। পাঁজরের হাড় পরীক্ষা করে জানা গেছে বর্তমানে এই প্রাণীর বয়স ১৮ হাজার বছর। তুষার যুগে তার অবাধ বিচরণ ছিল। তবে প্রাণীটি কুকুর না নেকড়ে শাবক সেটা এখনও জোর দিয়ে বলতে পারেননি বিজ্ঞানীরা। ‘সেন্টার ফর প্যালিওজেনেটিক্স’–এর গবেষক ডেভিড স্ট্যানটন বলেছেন, প্রাথমিক লক্ষণগুলো সবই কুকুরের। ডিএনএ পরীক্ষাতে সবটা ধরা পড়েনি। তুষারযুগের ওই সময়টাতে একটা বড়সড় বিবর্তন ঘটেছিল। তাই এই প্রাণীটি নেকড়ে নাকি সংকর প্রজাতি সেটা বিশদে গবেষণার পরেই বোঝা যাবে।

ডিএনএ সিকুয়েন্সিং এর জন্য প্রাণীটির দেহ সুইডিশ সেন্টার থেকে রাশিয়ার বিজ্ঞানীদের দিয়ে দেওয়া হয়েছে। রাশিয়ার নর্থ–ইস্টার্ন ফেডারাল ইউনিভার্সিটিতে দীর্ঘদিন ধরেই প্রাচীন যুগের প্রাণীদের নিয়ে গবেষণা চালান ড. সারগে ফেডোরভ। তিনি বলেছেন, ‘‌প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছে এটি কুকুরছানাই। তবে নেকড়ে হওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।’‌

তবে ড. ফেডোরভের কথায়, প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে নেকড়ে থেকে কুকুরের বিবর্তনের এক সন্ধিক্ষণে জন্ম হয়েছিল এই প্রাণীর। তাই এর মধ্যে নেকড়ে ও কুকুর দুইয়েরই বৈশিষ্ট্য রয়ে গেছে। ১৫,০০০ থেকে ৪০,০০০ বছর আগের এই সময়টাতে একটা পরিবর্তন ঘটেছিল প্রাণীদের মধ্যে। বিজ্ঞানীরা মনে করেন বর্তমান যুগের কুকুররা নেকড়েরই একটি বিশেষ প্রজাতির বিবর্তনের ফলে তৈরি হয়েছে। রেডিও কার্বন ডেটিং এর তথ্য যখন বলেছে এই প্রাণীর বয়স ১৮ হাজার বছর তখন মনে হতেই পারে বিবর্তনের সেই সময়েই জন্ম হয়েছিল প্রাণীটির। কোনভাবে দলছুট হয়ে তুষার ঝড়ের কবলে পড়ে মৃত্যু হয়। বরফের স্তরে চাপা থাকার জন্য শরীর এতটুকু বিকৃত হয়নি।

আজকের বাজার/লুৎফর রহমান