২০১৯শে চালু হবে পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল

চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের এ টার্মিনালের কাজ শেষ ও কন্টেইনার হ্যান্ডেলিং এর কাজ শুরু হবে।

সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে প্রকল্পটির কাজ। আগামী ২০১৯ সালের মধ্যেই এই টার্মিনালে কাজ শুরু করা যাবে বলে আশাবাদী চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম খালেদ ইকবাল।

গত সপ্তাহে চেয়ারম্যান বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের কন্টেইনার ধারণ ক্ষমতা ৩৫-৩৬ হাজার। এ মূহুর্তে বন্দরের ভেতর ৩৭ হাজার ২১৭ টিইইউ কন্টেইনার রয়েছে। গত একবছরে বন্দরে ৫০ হাজার ঘনফুট জায়গায় যোগ হয়েছে।

তবে এখনও কন্টেইনার জট নিরসন হয়নি দেশের বৃহত্তম এই বন্দরে। এই অবস্থায় বন্দরে কন্টেইনার জট কমানোর দুটি রাস্তা আছে বলে মনে করেন রিয়ার এডমিরাল এম খালেদ ইকবাল।

তার মতে, জট কমাতে হয় খালি কন্টেইনার অফডকে পাঠাতে হবে অথবা বন্দরের ভেতরে ধারণক্ষমতা বাড়াতে হবে।

আর নিমাণাধীন পতেঙ্গা টার্মিনালের কাজ শেষ হলে জট অনেক কমবে বলে মনে করেন তিনি।

এদিকে গতকাল রোববার সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে এক বৈঠকে ব্যবসায়ীরা দাবি করেন, বন্দরে কন্টেইনার জট কমাতে না পারলে ২৪ ঘণ্টা বন্দর খোলা রেখেও কোন সুফল আসবে না। সেক্ষেত্রে তারা দ্রুত পতেঙ্গা টার্মিনালের কাজ দ্রুত শেষ করার দাবি জানান।

তবে বন্দর চেয়ারম্যানের বক্তব্য, গ্যান্ট্রি ক্রেনের অভাবে বন্দরে কন্টেইনার হ্যান্ডেলিং সমস্যা হয়। পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনালে গ্যান্ট্রি ক্রেনসহ সকল ইক্যুপমেন্ট থাকবে। ফলে কন্টেইনার জট কমে যাবে।

এদিকে চট্টগ্রাম বন্দর সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ তাদের নিজেস্ব অর্থায়নে ১৮৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে টার্মিনাল নির্মাণ করবে। সম্প্রতি প্রকল্পটি চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে একনেক।

স্বল্পমেয়াদে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের নিজস্ব অর্থায়নে পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে ২০২০ সালের মধ্যে এই প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতার কথা বিবেচনা করে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করার সিদ্ধান্ত হয়। টার্মিনালের কাজ দ্রুত শেষ করতে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে বন্দর কর্তৃপক্ষ।

প্রকল্প অনুযায়ী, বন্দরের মূল জেটির ভাটির দিকে চট্টগ্রাম ড্রাইডক থেকে বোটক্লাবের মধ্যবর্তী ২৬ একর জায়গায় এই টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে। টার্মিনালে ৬০০ মিটার লম্বা তিনটি জেটি নির্মাণ করা হবে।

পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনালে একসঙ্গে তিনটি জাহাজ ভিড়তে ও পণ্য খালাস করতে পারবে। এর বাইরে তেল খালাসের জন্য ২২০ মিটার লম্বা একটি ডলফিন জেটিও নির্মাণ করা হবে।

বন্দর সূত্র জানায়, পতেঙ্গা টার্মিনাল প্রকল্পে বেশি খরচ হবে যন্ত্রপাতি ক্রয়ে। মোট ২৯টি যন্ত্রসহ বিভিন্ন জলযান সংগ্রহে খরচ ধরা হয়েছে ৬৫৮ কোটি টাকা। তিনটি জেটি নির্মাণে খরচ হবে ২৭০ কোটি টাকা।

বিমানবন্দর সড়কের বিএএফ শাহীন কলেজ গেইট থেকে জহুরুল হক ঘাঁটি গেইট পর্যন্ত প্রায় ৫০০ মিটার দীর্ঘ সড়কটি সোজা করার মাধ্যমে চিটাগং ড্রাইডক থেকে বোট ক্লাব পর্যন্ত মধ্যবর্তী এই জায়গায় পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল নির্মাণ করা হচ্ছে।

বর্তমানে এ স্থানে ওমেরা অয়েল কোম্পানির একটি ট্যাঙ্কার, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির বেস ডিপো, বাংলাদেশ মেরিন ফিশারিজের ক্যাপাসিটি বিল্ডিং প্রকল্পের একটি অফিস, ডেপুটি কমিশনার অব কাস্টমসের কার্যালয় (এফ ডিভিশন) ও কয়লার ডিপো পুলিশ ফাঁড়ি রয়েছে।

প্রকল্প এলাকায় এসব স্থাপনা নতুন করে নির্মাণ করতে হবে। এ খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৪৮ কোটি টাকা। এ টার্মিনালে বন্দরের চেয়ে কম সময়ে জাহাজ ভেড়ানো সম্ভব হবে।

আবার সাগর থেকে পতেঙ্গা টার্মিনালে জাহাজ ভেড়ানোর জন্য কোনো বাঁক অতিক্রম করতে হবে না। বন্দরের মতোই সাড়ে ৯ মিটার ড্রাফটের (জাহাজের পানির নিচের অংশের দৈর্ঘ্য) জাহাজ ভেড়ানো সক্ষম হবে।

সূত্র:অর্থসূচক

আজকের বাজার: এলকে/এলকে ১ আগষ্ট ২০১৭