২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় দন্ডিত ২ আসামিকে জামিন দেয়নি আপিল বিভাগ

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় দন্ডিত পুলিশের সাবেক দুই কর্মকর্তার জামিন আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগ বেঞ্চ তাদের জামিন চেয়ে করা আবেদন আজ খারিজ করে দেন।
তারা হলেন- পুলিশের সাবেক ডিআইজি খান সাঈদ হাসান ও ঢাকা মহানগর পুলিশের সাবেক উপ কমিশনার ওবায়দুর রহমান খান।
আদালতে তাদের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আরশাদুর রউফ ও সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী জামিলুর রহমান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন এটর্নি জেনারেল এ এ ম আমিন উদ্দিন।
২০০৪ সালে সংগঠিত ইতিহাসের জঘন্যতম ভয়াবহ নজিরবিহীন এ হামলায় আনা মামলায় সাবেক ডিআইজি খান সাঈদ হাসান ও ঢাকা মহানগর পুলিশের সাবেক উপ-কমিশনার ওবায়দুর রহমান খানকে দুই বছর কারাদন্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাস করে সশ্রম কারাদন্ড দেয়া হয়।
বিচার চলাকালে পলতাক থাকা এই দুই আসামি ২৮ জানুয়ারি আত্মসমর্পণ করে আপিল করেন।
হাইকোর্ট তাদের আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করে জরিমানা স্থগিত করেন। ২০২০ সালে ৯ মার্চ তাদের জামিন আবেদন খারিজ করে দেন হাইকোর্ট।
এরপর তারা আপিল বিভাগে আবেদন করেন। যেটি আজ রোববার খারিজ হয়ে যায়।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলাটি চালানো হয়। অল্পের জন্য ওই হামলা থেকে প্রাণে বেঁচে যান বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি, তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা। তবে হামলায় আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক, সাবেক রাষ্ট্রপতি (প্রয়াত) জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভী রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন। আহত হন দলের তিন শতাধিক নেতাকর্মী। ঘটনার পরদিন মতিঝিল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ফারুক আহমেদ বাদী হয়ে মামলা করেন।
তদন্ড শেষে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৮ সালের ১১ জুন দেওয়া অভিযোগপত্রে বিএনপি নেতা আবদুস সালাম পিন্টু, তার ভাই মাওলানা তাজউদ্দিন ও হুজি নেতা মুফতি আব্দুল হান্নানসহ ২২ জনকে আসামি করা হয়।
তদন্ড ও সাক্ষ্যে জানা হয়, শেখ হাসিনাকে হত্যা করতেই এ হামলার ছক করা হয়েছিল। পাকিস্তান থেকে এসেছিল হামলায় ব্যবহৃত আর্জেস গ্রেনেড।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পর অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত। দুই বছর তদন্তের পর ২০১১ সালের ৩ জুলাই ৩০ জনকে আসামি করে সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। এর ফলে এ মামলায় মোট আসামির সংখ্যা হয় ৫২।
মোট ৫২ আসামির মধ্যে আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও মুফতি হান্নান এবং তার সহযোগী শাহেদুল ইসলাম বিপুলের মৃত্যুদন্ড অন্য মামলায় কার্যকর হয়। তিনজনের মৃত্যুদন্ড কার্যকর হওয়ায় এ মামলার আসামির সংখ্যা দাঁড়ায় ৪৯ জনে।
এ ৪৯ জনের মধ্যে রায় দেয়ার সময় ৩১ জন কারাগারে ছিলেন। পলাতক ছিলেন বাকি ১৮ জন। তারা হলেন- বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরী, কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, এটিএম আমিন, সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দার, খান সাঈদ হাসান, ওবায়দুর রহমান, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আবদুল হাই, রাতুল বাবু, মোহাম্মদ হানিফ, আবদুল মালেক, শওকত ওসমান, মাওলানা তাজউদ্দিন, ইকবাল হোসেন, মাওলানা আবু বকর, খলিলুর রহমান ও জাহাঙ্গীর আলম। তবে এর মধ্যে এ দুইজন আত্মসমর্পণ করেন।
২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর ওই ঘটনায় বিচারিক আদালত ঘটনার সময়ে বিএনপি জামায়াত জোট সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও উপমন্ত্রী বিএনপি নেতা আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনের মৃত্যুদন্ডাদেশ দেন। একইসঙ্গে তারেক রহমানসহ ১৯ জনের যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড দেয়া হয় অপর আরো ১১ আসামিকে।