২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা : আসামী পক্ষে যুক্তিতর্ক পেশ অব্যাহত

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগ আয়োজিত সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে হতাহতের ঘটনায় আনা মামলায় আসামীপে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন অব্যাহত রয়েছে। সোমবার আসামী মুন্সি মুহিবুল্লাহ ওরফে অভির পে তার আইনজীবী সাইফুর রশিদ সবুজ তৃতীয় দিনের মতো যুক্তিতর্ক পেশ করেন। তার যুক্তিতর্ক পেশ অসমাপ্ত রয়েছে। এ আইনজীবী তার মোয়াক্কেলের পে যুক্তিতর্কে বিভিন্ন অপ্রয়োজনীয় বক্তব্য দেয়ায় আদালত বিরক্তি প্রকাশ করে। এ সময় আদালত যুক্তিতর্কে আসামীর জন্য প্রাসঙ্গিক হয়- এমন বক্তব্য ও আইনি পয়েন্টের আলোকে শুনানি করতে আইনজীবীকে পরামর্শ দেয়।
রাজধানীর পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে স্থাপিত ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিনের আদালতে এ মামলার বিচার চলছে। কালও মামলার পরবর্তী ধার্য রয়েছে। সোমবার ছিল এ মামলার যুক্তিতর্কের ৩১ তম দিন।
এর আগে চার কার্যদিবসে পলাতক আসামী মাওলানা লিটন ওরফে জুবায়েরের পে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আবদুল বাতেন, পলাতক আসামী মুফতি সফিকুর রহমানের পে আইনজীবী মাজহারুল কুদ্দুস, পলাতক আসামী মো. ইকবালের পে আইনজীবী মুহাম্মদ মাহবুবুল আলম, পলাতক আসামী মাওলানা তাজউদ্দিনের পে আইনজীবী আশরাফুল আলম, পলাতক আসামী জাহাঙ্গির আলম বদরের পে আইনজীবী সাইদুল হক, রাতুল আহমদ বাবুর পে এডভোকেট মশিউর রহমান, মহিবুল মোত্তাকিনের পে এডভোকেট হালিমা আক্তার, হানিফ পরিবহনের মালিক মো. হানিফের পে আইনজীবী চৈতন্য চন্দ্র হালদার, পলাতক মো, খলিলের পে এডভোকেট খলিলুর রহমান খান, বিএনপি নেতা সাবেক সংসদ সদস্য শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদের পে এডভোকেট আশরাফ-উল আলম, বিএনপি নেতা পলাতক হারিছ চৌধুরীর পে এডভোকেট আবু তৈয়ব ও পলাতক আনিসুল মোরসালিনের পে এডভোকেট সাখাওয়াৎ হোসেন যুক্তিতর্ক পেশ শেষ করেন।
গত ১ জানুয়ারি মামলার আসামীদের আইন অনুযায়ি সর্বোচ্চ সাজা দাবি করে রাষ্ট্রপ যুক্তিতর্ক পেশ শেষ করে। মামলার সকল আসামীর বিরুদ্ধে আনীত অপরাধ স্বতন্ত্র, নিঃস্বার্থ, দালিলিক ও পারিপার্শ্বিক সাীদের দ্বারা দেয়া সা্েয সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে সম হয়েছে বলে দাবি করেন প্রধান কৌঁসুলি। তিনি আদালতে বলেন, ‘ন্যায়বিচারের স্বার্থে বিচার প্রার্থী মানুষের প্রত্যাশা পূরণের ল্েয আইনের বিধানের আলোকে আসামীদের প্রত্যেককে সর্বোচ্চ সাজা প্রার্থনা করছি।’
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় গত ২৩ অক্টোবর থেকে রাষ্ট্রপে যুক্তিতর্ক শুরু হয়। আদালতে সোমবার রাষ্ট্রপে ছিলেন প্রধান কোঁসুলি সৈয়দ রেজাউর রহমান, বিশেষ পিপি আব্দুলাহ আবু ভূঞা, আইনজীবী আকরাম উদ্দিন শ্যামল, এডভোকেট ফারহানা রেজা, মো. আমিনুর রহমান, আবুল হাসনাত, কাজী ইলিয়াসুর রহমান, আশরাফ হোসেন তিতাস প্রমুখ।
অপরদিকে আসামিপে আবদুস সাবহান তরফদারসহ বিভিন্ন আইনজীবী আদালতে আজ উপস্থিত ছিলেন। ২১ আগস্টের ওই নৃশংস হামলায় পৃথক দুটি মামলায় মোট আসামী ৫২ জন। মামলার আসামী বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, বিএনপি নেতা সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ২৩ জন কারাগারে রয়েছে। এ মামলায় পুলিশের সাবেক আইজি আশরাফুল হুদা, শহুদুল হক ও খোদাবক্স চৌধুরী, লে.কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ডিউক এবং মামলার সাবেক তিন তদন্ত কর্মকর্তা- সিআইডি’র সাবেক এসপি রুহুল আমিন, সিআইডি’র সাবেক এএসপি আতিকুর রহমান ও আবদুর রশিদসহ মোট ৮ জন জামিনে রয়েছেন।
তারেক রহমান, বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরী, শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, মেজর জেনারেল (এলপিআর) এটিএম আমিন, লে. কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দারসহ ১৮ জন এখনো পলাতক।
এ ছাড়া ৩ জন আসামী জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, মুফতি হান্নান ও শরীফ সাইদুল আলম বিপুলের অন্য মামলায় মৃত্যুদন্ড কার্যকর হওয়ায় এ মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।
বিএনপি-জামায়াতের জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের এক সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটে। ওই নৃশংস হামলায় ২২ জন নিহত ও নেতকর্মী-আইনজীবী-সাংবাদিকসহ পাঁচ শতাধিক লোক আহত হয়। নিহতদের মধ্যে ছিলেন তৎকালীন মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের পতœী আইভি রহমান। তৎকালীন বিরোধী দলীয় নতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের প্রথম সারির অন্যান্য নতা এই গ্রেনেড হামলা থেকে বেঁচে যান। এতে অল্পের জন্য শেখ হাসিনা প্রাণে বেঁচে গেলেও গ্রেনেডের প্রচন্ড শব্দে তার শ্রবণশক্তিতে আঘাতপ্রাপ্ত হয়।
আজকের বাজার: ওএফ/ ১৫ জানুয়ারি ২০১৮