২৫০২৭ নাম্বার কয়েদির ডায়েরি

চোখে মুখে বিরক্তি নিয়ে রেডী হলাম, শুধু দাঁত ব্রাশ আর মাথায় তেল পানি দিয়েছি। লুঙ্গি স্যান্ডেল সু আর গোল গলার টি-শার্ট পড়া আমি ২৫০২৭। সকালের ঝাঁঝালো রোদ স্বল্প ঘুমের চোখ দু’টোকে মুক্তি দেয়নি। লাইনে দাঁড়ানো থেকে বেঁচে গেলাম। আমদানীতে নতুন কয়েদীরা বসে আছে, মনে হলো কোন কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে ঢুকে পড়েছি। রাত জাগা সাধারন কয়েদীরা সিরিয়াল মেনে বসে আছে। একটু শঙ্কা জাগলো, আমাকেও কি এভাবে হাঁটু ভেঙ্গে বসতে হবে? নাহ … বেঁচে গেলাম, যথাবিহিত সম্মান জানিয়ে শাওন আমাকে নিয়ে গেলো রেজিস্ট্রি বইটার কাছে। শুধু সাইন করেই মুক্তি পেলাম।

রাইটার ছেলেটা শুধু বললো- কষ্ট করে কেনো এসেছেন !! বেশী কথা না বলার সিদ্ধান্ত যেহেতু নিয়েছি তাই বললাম- নিয়ম ঠিক রাখতে এসেছি, ছবি কখন তুলবেন ? বললো- ভাই সাড়ে দশটায়। আমি জিজ্ঞেস করলাম- তাহলে কি অপেক্ষা করবো ? আশ্বস্ত হলাম, ওরা বললো আপনি বিশ্রাম করুন, আমরা সাড়ে দশটায় ক্যামেরা নিয়ে আসবো। চান্স পেয়েই বলে ফেললাম- ভাই সাড়ে এগারোটায় আসেন, একটু ঘুমাবো। প্রত্যুত্তর –সমস্যা নাই, কেবিনে গিয়ে শুয়ে পড়লাম।

তারপর থেকেই বিভিন্ন সেল এর কয়েদীরা আমার রুমে ঢুকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে জিজ্ঞেস করা শুরু করলো- কেমন আছি !! এমনিতেই প্যাঁচে আছি, শুস্ক হাসি দিয়ে বলেছি, ভালো আছি, একটু ঘুমাতে চাই ভাই। লাভ হলো না … এর মধ্যে আমার কেবিন মেটরা কড়াকড়ি স্থাপন করলেন, আর কেউ ঘুম ভাঙ্গাতে পারেনি অন্ততঃ একঘন্টার জন্য। যারা আমাকে চেনেন না, এই মানুষ গুলো আমার ঘুমের সূযোগ করে দিলেন কোন সম্পর্কের অধিকারে !! আসলেই উনারা কি ভয়ঙ্কর আসামী!! ভয়ঙ্কর ব্যাপারটা আসলে কি ? আমি অবুঝ হিসেবেই নিজেকে বোঝাতে পেরেছি- ওরাই আমার বন্ধু, কারাবন্ধু। কোন লেনদেন ছাড়াই ভালবেসে ঋণী করে রেখেছেন …

আসিফ আকবরের ফেসবুক পেইজ থেকে নেওয়া।