পুঁজিবাজারের তালিকাভূক্ত আইসিবি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের বিরুদ্ধে ২৭ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ব্যাংকটি গ্রাহকের কাছ থেকে বিভিন্ন ফি বাবদ ভ্যাট কেটে রাখলেও তা সঠিকভাবে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেয়নি।
এছাড়া লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে বিভিন্ন খরচের ওপর উৎসে মূসক (ভ্যাট) ও ব্যাংকের বিভিন্ন হিসাবের স্ল্যাব অনুযায়ী আবগারি শুল্ক সঠিকভাবে পরিশোধ করেনি বলেও অভিযোগ উঠেছে।
সম্প্রতি মূসক নিরীক্ষা গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর কর্তৃক আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের ২০১১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত নিরীক্ষা প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
নিরীক্ষা প্রতিবেদন অনুযায়ী ৫ বছরে আইসিবি ব্যাংক ভ্যাট হিসেবে ২৫ কোটি ৯০ লাখ ৮৩ হাজার ৩৩৩ টাকা ২০ পয়সা, আবগারি শুল্ক ১ কোটি ৪২ লাখ ৬৭ হাজার ১৮২ টাকাসহ মোট ২৭ কোটি ৩৩ লাখ ৫০ হাজার ৫১৫ টাকা ২০ পয়সা টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে।
মূসক গোয়েন্দা সূত্র জানায়, ব্যাংকের মূসক নিবন্ধন নম্বর ১৯১১১০৩৬০৬৮। অডিটের জন্য তথ্য চাওয়া হলে প্রতিষ্ঠানটি ২০১১ থেকে ২০১৫ সালের সিএ ফার্ম রিপোর্ট ও মূসক রিটার্ন দাখিল করে।
পরে প্রতিবেদন ও মাসিক দাখিলপত্রের তথ্য, আবগারি শুল্ক, উৎসে কর আদায় ও পরিশোধের তথ্য আড়াআড়াড়ি যাচাই করা হয়। এতে কিছু কিছু ক্ষেত্রে অস্পষ্টতা ও ব্যাপক গড়মিল পাওয়া যায়।
সিএ ফার্মের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে বিভিন্ন খাতের আয় ও উৎসে কর্তৃক খাতসমূহে সুদসহ অপরিশোধিত ভ্যাটের পরিমাণ ২৫ কোটি ৯০ লাখ ৮৩ হাজার ৩৩৩ টাকা ২০ পয়সা।
নিরীক্ষা মেয়াদের বার্ষিক অডিট রিপোর্ট ও আবগারি শুল্ক পরিশোধের বিবরণী পর্যালোচনা করে আবগারি শুল্ক বকেয়া ১ কোটি ৪২ লাখ ৬৭ হাজার ১৮২ টাকার তথ্য উৎঘাটিত হয়।
সূত্র জানায়, আইসিবি ব্যাংকের শাখার সংখ্যা ৩৩। পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে অডিট করা হয়। প্রতিষ্ঠানটি কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট, ঢাকা (দক্ষিণ) এর আওতায় মূসক নিবন্ধন নিয়েছে।
ব্যাংকটি সেবার কোড ০৫৬.০০ এর আওতায় ব্যাংকিং সেবা প্রদান করে থাকে। ব্যাংকিং সেবা প্রদানকালিন প্রাপ্ত কমিশন, চার্জ, ফি, বিবিধ আয় ইত্যাদির ওপর ১৫ শতাংশ মূসক প্রযোজ্য।
এছাড়াও প্রতিষ্ঠানটি লিমিটেড কোম্পানি হওয়ায় বিভিন্ন ধরণের খরচের ওপর উৎসে মূসক কর্তন ও পরিশোধযোগ্য। ব্যাংকের বিভিন্ন হিসাবের জমার স্ল্যাব অনুযায়ী আবগারি কর পরিশোধযোগ্য।
প্রতিষ্ঠানটি সেবা প্রদানকারী হওয়ায় চলতি হিসাব পরিপালন করে না। প্রতিষ্ঠানের প্রাপ্ত সেবা মূল্যের ওপর প্রযোজ্য মূসক, উৎসে কর্তনযোগ্য মূসক পরবর্তী মাসের মাসিক দাখিলপত্র সার্কেলে দাখিলের পূর্বে ট্রেজারি চালানে জমা প্রদান করে থাকে।
প্রতিষ্ঠানটি নিয়মিত মাসিক দাখিলপত্র ও ট্রেজারি জমার চালানসমূহ পর্যাসলোচনা করা হয়। এতে মাসিক দাখিলপত্র ও ট্রেজারি চালানের হিসাবের বেশ গড়মিল পাওয়া গেছে।
এরমধ্যে ২০১১ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর (১২ মাসে) পর্যন্ত দাখিলপত্রে সার্ভিস চার্জের ওপর প্রদর্শিত মূসক, বাড়ি ভাড়ার ওপর প্রদর্শিত মূসক ও উৎসে কর্তনের বিপরীতে প্রদর্শিত মূসক ৯২ লাখ ৯৮ হাজার ২৬৯ টাকা ৬১ পয়সা।
২০১১ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ট্রেজারি চালানের তথ্যে সার্ভিস চার্জের ওপর পরিশোধিত মূসক, বাড়ি ভাড়ার ওপর পরিশোধিত মূসক ও উৎসে কর্তনের বিপরীতে পরিশোধিত মূসক ৯২ লাখ ৪৭ হাজার ৭৮১ টাকা ৪০ পয়সা।
২০১১ সালে ট্রেজারি চালানের চেয়ে ভ্যাট অফিসে দাখিলপত্রে ৫০ হাজার ৪৮৮ টাকা ২১ পয়সার মূসক পরিশোধের তথ্য বেশি দেখানো হয়েছে।
২০১২ সালে দাখিলপত্রে ১ কোটি ৬৪ লাখ ৮৮ হাজার ৪৫১ টাকা ২৫ পয়সা ও চালানের তথ্যে ১ কোটি ৫৭ লাখ ৭ হাজার ২৩ টাকা ১ পয়সা দেখানো হয়। এবছর ৭ লাখ ৮১ হাজার ৪২৮ টাকা ১৫ পয়সা বেশি দেখানো হয়।
২০১৩ সালে দাখিলপত্রে ১ কোটি ১৭ লাখ ৯৪ হাজার ৬৭৯ টাকা ৩৯ পয়সা ও চালানের তথ্যে ১ কোটি ১৪ লাখ ৩৬ হাজার ৫১০ টাকা ৯০ পয়সা দেখানো হয়। এবছর ৩ লাখ ৫৮ হাজার ১৬৮ টাকা ৪৯ পয়সা বেশি দেখানো হয়। ২০১৪ সালের তথ্যে তেমন গরমিল নেই।
২০১৫ সালের দাখিলপত্রে ১ কোটি ৭৭ লাখ ৮ হাজার ৬৬৮ টাকা ৬৮ পয়সা ও চালানের তথ্যে ১ কোটি ৭৫ লাখ ৫৯ হাজার ৮৯২ টাকা ৭৭ পয়সা দেখানো হয়। এবছর ১ লাখ ৪৮ হাজার ৭৭৫ টাকা ৯১ পয়সা বেশি দেখানো হয়।
প্রতিষ্ঠানটির মাসিক দাখিলকৃত দাখিলপত্রে প্রদেয় ও পরিশোধিত মূসক এর হিসাব দেখানো হয়েছে তার সাথে সংযুক্ত ট্রেজারি চালানের হিসাবের গড়মিল রয়েছে। প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রাপ্ত কমিশন, চার্জ ফি ইত্যাদির ক্ষেত্রে মূসক পরিশোধ করেছেন তার সঠিক তথ্য দাখিলপত্রে দেখানো হয়নি।
কিছু কিছু কমিশন, চার্জ ফি এর হিসাব উৎসে কর্তন খাতের সাথে একত্রে প্রদর্শন করেছে। আবার বাড়ি ভাড়া ও গুদাম ভাড়ার ওপর ৯% মূসক পরিশোধ করেছে। বাড়ি ভাড়ার ওপর ২০১০ পর্যন্ত ১৫% হারে ২০১১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৯% হারে মূসক প্রযোজ্য।
ট্রেজারি চালান যাচাই করে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি গুদাম ভাড়ার ওপর ৯% মূসক পরিশোধ করেছে। কিন্তু গুদাম ভাড়ার ওপর ১৫% মূসক প্রযোজ্য। গুদাম ভাড়ার ওপর প্রতিষ্ঠানটি ২০১১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৯% হারে মোট ৯ লাখ ১৫ হাজার ৭৩৮ টাকা মূসক পরিশোধ করেছে। ১৫% হারে এ সময়ে মূসক দাঁড়ায় ৫ লাখ ২৬ হাজার ২৩০ টাকা। এসময়ে মূসক কম পরিশোধ করেছে ২ লাখ ১০ হাজার ৪৯২ টাকা।
সূত্র আরো জানায়, ২০১১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত গুদাম ভাড়া ১৫% এর স্থলে ৯% হারে মূসক পরিশোধ করায় কম পরিশোধিত মূসকের পরিমাণ ২ লাখ ১০ হাজার ৪৯২ টাকা। অপরিশোধিত এ মূসকের ওপর ২০১৬ সালের মার্চ পর্যন্ত সুদ ১ লাখ ৬৩ হাজার ৮৪৬ টাকা ৮০ পয়সা। সুদসহ গুদাম ভাড়ায় মূসক ফাঁকির পরিমাণ ৩ লাখ ৭৪ হাজার ৩৩৮ টাকা ৮০ পয়সা।
প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক অডিট প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১১ সাল থেকে ২০১৪ পর্যন্ত গুদাম ভাড়া হিসেবে বকেয়া দেনা ৭ লাখ ৯০ হাজার ৯ টাকা দেখানো হয়েছে। ২০১৫ সালে গুদাম ভাড়া বাবদ কোন বকেয়া দেখানো হয়নি। ২০১৪ সালে যেকোন মাসে পূর্বের বকেয়া ভাড়া ৭ লাখ ৯০ হাজার ৯ টাকার ওপর ১৫% হারে বকেয়া মূসক ১ লাখ ১৪ হাজার ১ টাকা।
২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৭ সালের মার্চ পর্যন্ত ২৭ মাসের মাসিক ২% হারে মূসক হিসেবে বকেয়া ৬১ হাজার ৫৬০ টাকা ৫৪ পয়সা অর্থাৎ সুদসহ মূসক ১ লাখ ৭৫ হাজার ৫৬১ টাকা ৫৪ পয়সা।
সূত্র আরো জানায়, প্রতিষ্ঠানটি ২০১১ সালে জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত চার্জ ফি, কমিশন বাবদ মাসিক দাখিলপত্রে ৫ লাখ ৯০ হাজার ৩৫৮ টাকা ৮৯ পয়সা দেখিয়েছে।
কিন্তু দাখিলপত্রের সাথে সংযুক্ত ট্রেজারি চালান অনুযায়ী বিভিন্ন খাতে চার্জ ফি, কমিশন এর ওপর জমার পরিমাণ পাওয়া যায় ২১ লাখ ২৯ হাজার ৮২২ টাকা ৩২ পয়সা।
একইভাবে ২০১২ সালে দাখিলপত্রে ১১ লাখ ৫৮ হাজার ৫৮৭ টাকা ৩৪ পয়সা দেখানো হলেও ট্রেজারি চালান অনুযায়ী পাওয়া যায় ৬৪ লাখ ৪২ হাজার ১৫৮ টাকা ৫৪ পয়সা।
২০১৩ সালে দাখিলপত্রে ৫ লাখ ৪৯ হাজার ৫২৫ টাকা ৪২ পয়সা দেখানো হলেও ট্রেজারি চালান অনুযায়ী পাওয়া যায় ২৭ লাখ ৭৩ হাজার ৪৯৬ টাকা ৯৯ পয়সা। ২০১৪ সালে দাখিলপত্রে ১১ লাখ ৯৪ হাজার ১০৫ টাকা ৩৫ পয়সা দেখানো হলেও ট্রেজারি চালানে পাওয়া যায় ৫৩ লাখ ১১ হাজার ৫৭৬ টাকা ৬৫ পয়সা। ২০১৫ সালে দাখিলপত্রে ৫৫ লাখ ৮ হাজার ৩২৯ টাকা ৪ পয়সা দেখানো হলেও ট্রেজারি চালানে পাওয়া যায় ৭৪ লাখ ৯ হাজার ২২৬ টাকা ১৪ পয়সা।
প্রতিষ্ঠানটি ২০১১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত কমিশন, ফি, চার্জ ও অন্যান্য আয় দেখিয়েছেন ৫৮ কোটি ৯ লাখ ৪ হাজার ১৯৩ টাকা। এসময় মূসক পরিশোধ করেছে ২ কোটি ৪০ লাখ ৬৬ হাজার ২৮০ টাকা ৬৪ পয়সা। আর ফাঁকি দিয়েছে ১১ কোটি ১৫ লাখ ৯১ হাজার ৩৯৪ টাকা (২% সুদসহ)।
সূত্র জানায়, ২০০৩-০৪ অর্থবছর পর্যন্ত মানি এক্সচেঞ্জ সেবা করমুক্ত ছিল। কিন্তু ২০০৩-০৪ অর্থবছরের অর্থবিলে মানি এক্সচেঞ্জ সেবাকে করযোগ্য সেবার আওতায় আনা হয়। মানি একচেঞ্জে প্রতিষ্ঠানটি কিছু ক্ষেত্রে মূসক আদায় করলে কিছু ক্ষেত্রে আদায় করেনি।
প্রতিষ্ঠানটি মানি এক্সচেঞ্জ বির্তকিত খাতে (এক্সচেঞ্জ গেইন) ১৫% হারে ২৩ লাখ ৪৪ হাজার ৯২৫ টাকা মূসক পরিশোধ করেনি। এ খাতে বির্তকিত মূসক বাদ দিলে নীট অপরিশোধিত মূসকের পরিমাণ দাঁড়ায় (৬,৩০,৬৯,৩৪৯-২৩,৪৪,৯২৫) ৬ কোটি ৭ লাখ ২৪ হাজার ৪২৪ টাকা।
২% সুদসহ অপরিশোধিত মূসক (৪,৮৫,২২,০৪৬-২৭,২৮,৫৭৫.৯০) ৪ কোটি ৫৭ লাখ ৯৩ হাজার ৪৭০ টাকা ১০ পয়সা। এখানে ২০১১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে বিতর্কিত খাতের আয় বাদ দিলে সুদসহ মূসক ফাঁকির পরিমাণ (৬,০৭,২৪,৪২৪+৪,৫৭,৯৩,৪৭০) ১০ কোটি ৬৫ লাখ ১৭ হাজার ৮৯৪ টাকা ১০ পয়সা।
সূত্র আরো জানায়, ২০০৩-০৪ অর্থবছর পর্যন্ত সেভিংস সঞ্চয় গ্রহণ, লিজ ফাইন্যান্সিং, অর্থলগ্নি, ঋণদান প্রতিষ্ঠান করমুক্ত ছিল। কিন্তু ২০০৪-০৫ অর্থবছরে শুধুমাত্র সেভিংস সঞ্চয় গ্রহণ ব্যতীত লিজ ফাইন্যান্সি, অর্থলগ্নি ও ঋণদান প্রতিষ্ঠানকে করযোগ্য সেবার আওতায় আনা হয়। ফলে তা মূসক যোগ্য।
কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি ঋণদান কার্যক্রমের সুদ হিসেবে প্রাপ্ত আয়কে বার্ষিক প্রতিবেদনে ইনভেস্টমেন্ট ইনকাম হিসেবে দেখিয়েছে। এতে ২০১১ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত সুদ আয়ের বিপরীতে অপরিশোধিত মূসকের পরিমাণ ৪২ কোটি ৭৯ লাখ ২১ হাজার ৯৩৮ টাকা ৯০ পয়সা। সুদের পরিমাণ ৩৭ কোটি ১৭ লাখ ৯ হাজার ৭১ টাকা। অর্থাৎ সুদসহ মূসকের পরিমাণ ৭৯ কোটি ৯৬ লাখ ৩১ হাজার ৯ টাকা ৯০ পয়সা।
সূত্র জানায়, উৎসে মূসক কর্তন করে ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার বিধান থাকলেও প্রতিষ্ঠানটি ২০১১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সঠিকভাবে উৎসে মূসক কর্তন ও পরিশোধ করেনি। এসময় ৭ কোটি ৮০ লাখ ৩৮ হাজার ১৮৯ টাকার মূসক পরিশোধ করেনি। অপরিশোধিত মূসকের ওপর ২০১৭ সালের মার্চ পর্যন্ত ২% হারে সুদের পরিমাণ দাঁড়ায় ৫ কোটি ৮১ লাখ ৪৫ হাজার ২৮২ টাকা। সুদসহ অপরিশোধিত উৎসে মূসকের পরিমাণ (৭,৮০,৩৮,১৮৯+৫,৮১,৪৫,২৮২) ১৩ কোটি ৬১ লাখ ৮৩ হাজার ৪৭১ টাকা।
সূত্র আরো জানায়, প্রতিষ্ঠানটি কিছু কিছু স্থায়ী সম্পদ ক্রয় ও কিছু বিক্রয় করেছে বলে উল্লেখ করেছে। স্থায়ী সম্পদ ক্রয় ও বিক্রয়ের বিপরীতে ২০১১ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত উৎসে কর্তৃক পরিশোধযোগ্য মূসকের পরিমাণ ২৯ লাখ ২৬ হাজার ৯২৯ টাকা ৬২ পয়সা। ২০১৭ সালের মার্চ পর্যন্ত সুদ ২৮ লাখ ২০ হাজার ২৩০ টাকা ১৩ পয়সাসহ সর্বমোট মূসক ৫৭ লাখ ৪৭ হাজার ১৫৯ টাকা ৭৫ পয়সা।
সূত্র জানায়, প্রত্যেক বছরের বকেয়ার শেষ স্থিতি পরবর্তী বছরের প্রারম্ভিক স্থিতি হিসাবে দেখানো হয়েছে। এ হিসাবে প্রত্যেক বছরের শেষ স্থিতির তুলনায় পরবর্তী বছরের বকেয়া বৃদ্ধি ঘটলে তা নতুন সৃষ্ট বকেয়া হিসাবে এবং পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় পরবর্তী বছরের বকেয়া কম হলে পার্থক্যের পরিমাণকে ওই বছরে পরিশোধ হিসাবে দেখানো হয়েছে।
এ হিসাবে ২০১৬ সালের ১লা জানুয়ারি বকেয়ার পরিমাণ ৩৭ লাখ ৪ হাজার ৬২৪ টাকা। সংশ্লিষ্ট বছরে সৃষ্ট বকেয়ার মাস উল্লেখ না থাকায় মাসিক গড় হিসাব করলে বছরে সৃষ্ট বকেয়ার ওপর ৬ মাসের সুদ হিসাব করা যায়।
পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ১২ লাখ ৩৩ হাজার ৮৭৩ টাকা পরিশোধ দেখানো হলেও মাসিক দাখিলপত্র এবং দাখিলকৃত ট্রেজারি চালান বকেয়া উৎসে কর্তৃক মূসক পরিশোধের কোন হিসাব পাওয়া যায়নি।
প্রতিষ্ঠানের নিকট হতে উৎসে কর্তন খাতে প্রকৃত বকেয়ার পরিমাণ (৩৭,০৪,৬২৪+ ১২,৩৩,৮৭৩) অর্থাৎ ৪৯ লাখ ৩৮ হাজার ৪৯৭ টাকা এবং বার্ষিক প্রতিবেদনে এ পরিশোধ দেখানো হলেও প্রকৃত পক্ষে পরিশোধ না করা ১২ লাখ ৩৩ হাজার ৮৭৩ টাকার ওপর ২০১৩ সাল থেকে ২০১৭ সালের মার্চ পর্যন্ত ৫১ মাসে ২% হারে সুদ বাবদ ১২ লাখ ৫৮ হাজার ৫৫০ টাকা আদায়যোগ্য হবে।
উৎসে কর্তন খাতে সুদ বাবদ (৩৮,৮৭,৮৬১+ ১২,৫৮,৫৫০) অর্থাৎ ৫১ লাখ ৪৬ হাজার ৪১১ টাকা আদায়যোগ্য। এ হিসাবে মূল বকেয়া এবং সুদসহ সর্বমোট (৪৯,৩৮,৪৯৭+ ৫১,৪৬,৪১১) অর্থাৎ ১ কোটি ৮৪ হাজার ৯০৮ টাকা আদায়যোগ্য।
২০১১ সালের ২০১৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত আবগারি কর পর্যাোলোচনা করে দেখা যায়, বছরের প্রথমে আবগারি শুল্ক খাতে ব্যাংকের দায় এবং দায় হ্রাস দেখানো হয়েছে। প্রত্যেক বছরের বকেয়ার শেষ স্থিতি পরবর্তী বছরের প্রারম্ভিক স্থিতি হিসাবে স্থানান্তর করা হয়েছে। ২০১৫ সালের শেষে সৃষ্ট বকেয়া সরকারের নীট পাওয়া হিসাবে বিবেচিত। অপরিশোধিত বকেয়া পরিশোধ না করার কারণ এক্সাইজ এন্ড সল্ট এ্যাক্ট, ১৯৪৪ এর বিধান মোতাবেক ১ কোটি ৪২ লাখ ৬৭ হাজার ১৮২ টাকা আবগারি শুল্ক প্রতিষ্ঠানের নিকট হতে আদায়যোগ্য।
সূত্র জানায়, ২০১১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৫ সালের ডিসেম্বর মেয়াদের নিরীক্ষায় ব্যাংক কর্তৃক মোট ১৪ কোটি ৬৯ লাখ ৫২ হাজার ৫৩২ টাকা ৬০ পয়সা মূসক পরিহার করেছেন। এ পরিহারকৃত মূসক এর ওপর মূসক আইনের ধারা ৩৭ (৩) অনুযায়ী ২০১৭ সালের মার্চ পর্যন্ত মাসিক ২% হারে নিরুপিত সুদ বাবদ ১১ কোটি ২১ লাখ ৩০ হাজার ৮০০ টাকা ৬০ পয়সাসহ মোট রাজস্ব (১৪,৬৯,৫২,৫৩২.৬০ +১১,২১,৩০,৮০০.৬০) অর্থাৎ ২৫ কোটি ৯০ লাখ ৮৩ হাজার ৩৩৩ টাকা ২০ পয়সা এবং বকেয়া আবগারি শুল্ক বাবদ ১ কোটি ৪২ লাখ ৬৭ হাজার ১৮২ টাকা অর্থাৎ সর্বমোট (২৫,৯০,৮৩,৩৩৩.২০ + ১,৪২,৬৭,১৮২.০০) অর্থাৎ ২৭ কোটি ৩৩ লাখ ৫০ হাজার ৫১৫ টাকা ২০ পয়সা টাকা ফাঁকি দিয়েছে।
এ বিষয়ে আইসিবি ব্যাংকের জন সংযোগ কর্মকর্তা মীর মূর্তজা করিম বলেন, রাজস্ব ফাঁকির বিষয়ে আমি ইনফর্ম না। আমি এ বিষয়ে কিছু বলতে পারবো না। ব্যাংকের অডিট বা ফাইন্যান্স ডিপার্টমেন্ট জানতে পারে।
তথ্য যাচাইয়ের জন্য প্রশ্ন মেইল করতে অনুরোধ করেন মূর্তজা। পরে ব্যাংকের এডিপি সাখাওয়াত হোসেন এ বিষয়ে কথা বলবে বলে ব্যাংকের নিজস্ব নম্বরে ফোন দিতে বলেন। তার দেওয়া নম্বরে একাধিকবার ফোন করা হলেও কোন উত্তর পাওয়া যায়নি।
সূত্র:অর্থসূচক
আজকের বাজার:এলকে/ এলকে/ ০৯ জুলাই ২০১৭