৩ হাজার বছর ধরেই জেরুজালেম ইসরায়েলের রাজধানী: নেতানিয়াহু

ফিলিস্তিনিদের ‘জেরুজালেম বাস্তবতা’ মেনে নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, জেরুজালেমই ইসরায়েলের রাজধানী। গত তিন হাজার বছর ধরেই জেরুজালেম ইসরায়েলের রাজধানী ছিল। এটি কখনোই আর কারো রাজধানী ছিল না। শান্তির জন্য ফিলিস্তিনিদের অবশ্যই বাস্তবতার মোকাবেলা করতে হবে। খবর বিবিসির।

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ প্যারিসে একটি যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীকে শান্তি প্রক্রিয়া ব্যাহত না করার অনুরোধ করেছেন। নেতানিয়াহুর বক্তব্যের সূত্র ধরে মি. ম্যাক্রোঁ বলেন, আমি তাকে বলছি, অনুগ্রহ করে শান্তি আনতে আরেকটি সুযোগ দিন। ফিলিস্তিনিদের কথা ভাবুন, শান্তি যুক্তরাষ্ট্রের হাতে নেই। শান্তি রয়েছে দুই দেশের দুই নেতার হাতে, তাদের শান্তি স্থাপনের উদ্যোগের ওপর।

এদিকে জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে মার্কিন স্বীকৃতির পর জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্টেনিও গুতেরেস বলেছেন, এই সিদ্ধান্ত মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রক্রিয়ার উদ্যোগকে ঝুঁকিতে ফেলছে।

মধ্যপ্রাচ্যে চলমান সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পোপ ফ্রান্সিস। তিনি জেরুজালেমকে ইহুদী, মুসলিম ও খ্রিস্টানদের ‘এক পবিত্র নগরী’ হিসেবেও উল্লেখ করেছেন। এক বিবৃতিতে ওই এলাকায় স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে আহ্বান জানিয়েছেন পোপ ফ্রান্সিস। এই ঘোষণার প্রতিবাদে আরব ও মুসলিম বিশ্বে প্রতিবাদ অব্যাহত রয়েছে।

অন্যদিকে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কঠোর সমালোচনা করেছেন বলে তার মুখপাত্র জানিয়েছেন। জেরুজালেমকে রাজধানী ঘোষণা করার প্রতিবাদে মাইক পেন্সের সঙ্গে পূর্বনির্ধারিত বৈঠকে অনীহা প্রকাশ করেছেন ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জেরুজালেমকে রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার ঘোষণায় বিশ্বনেতাদের অনেকেই এর নিন্দা জানাচ্ছেন। পূর্ব জেরুজালেমকে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের রাজধানী স্বীকৃতি দেয়ার জন্যও বিশ্ববাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে আরব লীগ।

ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ খামেয়নি বলেছেন, ‘ট্রাম্পের এই ঘোষণার বিপক্ষে অবশ্যই মসলিম বিশ্ব রুখে দাড়াবে। আজ বিশ্ব রাজনীতির আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে জেরুজালেম। একদিন না একদিন অবশ্যই ফিলিস্তিন স্বাধীন হবেই। এই লক্ষ্যে কাজ করে যাওয়া প্রতিটি মুসলিমের নৈতিক দায়িত্ব।’

ইউরোপিয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি ফেডেরিক মগেরিনি বলেছেন, সংস্থাটি ট্রাম্পের এই ঘোষণায় খুবই চিন্তিত। তারা মনে করে, এই ঘোষণা চলমান শান্তি আলোচনাকে মারাত্মকভাবে ব্যহত করবে।

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে বলেছেন, ব্রিটিশ দুতাবাস তেল আবিব থেকে সরানোর কোন পরিকল্পনা আমাদের নেই। ট্রাম্পের এই ঘোষণা এই অঞ্চলের শান্তি বিনষ্ট করবে।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান বলেছেন, জেরুজালেমের বর্তমান মর্যাদা সমুন্নত রাখা খুবই জরুরি। এই ইস্যতে সারা মুসলিম বিশ্বকে এক হয়ে কাজ করতে হবে।

অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্র দফতর এক বিবৃতিতে বলেছে, তারা কোনভাবেই এই ঘোষণা সমর্থন করে না। এবং তাদের দুতাবাস তেল আবিব থেকে অন্য কোথাও স্থানান্তরের পরিকল্পনাও তাদের নেই।

একই ধরনের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সৌদি, কাতার, ইন্দোনেশিয়া, জর্ডান, ফ্রান্স, আরব আমিরাত, মিশর, কুয়েত ও মরক্কোর রাষ্ট্র বা সরকার প্রধানরা।