২০১৭-১৮ অর্থবছরের জন্য ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকার বাজেট পাস হয়েছে। নির্দিষ্টকরণ বিল-২০১৭ জাতীয় সংসদে গৃহীত হওয়ার মধ্য দিয়ে এই বাজেট পাস হয়।
২৯ জুন বৃহস্পতিবার সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ব্যয় নির্বাহের যৌক্তিকতা তুলে ধরে ৫৯টি মঞ্জুরি দাবি সংসদে উত্থাপন করেন মন্ত্রীরা। মঞ্জুরি দাবিগুলো সংসদে কণ্ঠভোটে অনুমোদিত হয়।
প্রধান বিরোধীদল ও স্বতন্ত্র সদস্যরা মঞ্জুরি দাবির যৌক্তিকতা নিয়ে মোট ৩৫২টি ছাঁটাই প্রস্তাব উত্থাপন করেন। এর মধ্যে ৫টি দাবিতে আনীত ছাঁটাই প্রস্তাবের ওপর জাতীয় পার্টি ও স্বতন্ত্র সদস্যরা আলোচনা করেন। পরে কণ্ঠভোটে ছাঁটাই প্রস্তাবগুলো নাকচ হয়ে যায়। এরপর সংসদ সদস্যগণ টেবিল চাপড়িয়ে নির্দিষ্টকরণ বিল-২০১৭ পাসের মাধ্যমে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট অনুমোদন করেন।
গত ৫ জুন থেকে ২৮ জুন পর্যন্ত সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও অন্যান্য মন্ত্রীসহ সরকারি ও বিরাধীদলের সদস্যরা মূল বাজেট ও সম্পূরক বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।
বাজেটে মোট রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৮৭ হাজার ৯৯১ কোটি টাকা; যা জিডিপির ১৩ শতাংশ। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে আয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৪৮ হাজার ১৯০ কোটি টাকা; যা জিডিপির ১১ দশমিক ২ শতাংশ। এছাড়া এনবিআর বহির্ভূত সূত্র থেকে কর রাজস্ব ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৬২২ কোটি টাকা; যা জিডিপির শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। কর বহির্ভূত খাত থেকে রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ৩১ হাজার ১৭৯ কোটি টাকা; যা জিডিপির ১ দশমিক ৪ শতাংশ।
বাজেটে অনুন্নয়নসহ অন্যান্য খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৪১ হাজার ২৫৩ কোটি টাকা; যা জিডিপির ১০ দশমিক ৮ শতাংশ। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিবি) ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ৫৩ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা; যা জিডিপির ৬ দশমিক ৯ শতাংশ এবং স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার ১০ হাজার ৭৫৩ কোটি টাকা। ফলে এডিপির মোট আকার ১ লাখ ৬৪ হাজার ৮৫ কোটি টাকা; যা জিডিপির ৭ দশমিক ৪ শতাংশ।
সার্বিক বাজেট ঘাটতি দেখানো হয়েছে ১ লাখ ১২ হাজার ২৭৫ কোটি টাকা; যা জিডিপির ৫ শতাংশ। এই ঘাটতি পূরণে বৈদেশিক সূত্র থেকে ৫১ হাজার ৯২৪ কোটি টাকা এবং অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ৬০ হাজার ৩৫২ কোটি টাকার অর্থায়ন ধরা হয়েছে। যা যথাক্রমে জিডিপির ২ দশমিক ৩ শতাংশ এবং ২ দশমিক ৭ শতাংশ। অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ২৮ হাজার ২০৩ কোটি টাকা এবং সঞ্চয়পত্র ও অন্যান্য ব্যাংক বহির্ভূত উৎস থেকে ৩২ হাজার ১৪৯ কোটি টাকার সংস্থানের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৭ দশমিক ৪ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।
বাজেটের লক্ষ্য হলো অর্থনীতির সব খাতের সুষম ও সামঞ্জস্যপূর্ণ উন্নয়ন। সাধারণ একটি মধ্যমেয়াদী সামষ্টিক অর্থনৈতিক কাঠামোর আওতায় বাজেট কাঠামো প্রস্তুত করে এই লক্ষ্য অর্জন করতে চায় সরকার। এছাড়া মধ্য মেয়াদী সামষ্টিক অর্থনৈতিক কাঠামো প্রতি বছরই হালনাগাদ করা এবং এক্ষেত্রে সামষ্টিক অর্থনীতির অন্যান্য খাত যথা প্রকৃত, মুদ্রা ও বহিঃখাতের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি আয় ও ব্যয় সীমা নির্ধারণ করা।
সামষ্টিক অর্থনৈতিক ভারসাম্য বজায় রাখার স্বার্থে বাজেটের আয় ও ব্যয়ের পরিমাণকে একটি নিরাপদ সীমার মধ্যে নির্ধারণ করা। পাশাপাশি, সামষ্টিক অর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বাজেট ঘাটতির পরিমাণ ও ঘাটতি অর্থায়ন প্রক্রিয়া সম্পর্কেও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা।
বাজেটে মোট বরাদ্দের শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে ১৬ দশমিক ৪ শতাংশ; জনপ্রশাসন খাতে ১৩ দশমিক ৬ শতাংশ; পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে ১২ দশমিক ৫ শতাংশ; সুদ প্রদান খাতে ১০ দশমিক ৪ শতাংশ; স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন খাতে ৬ দশমিক ৯ শতাংশ; প্রতিরক্ষা খাতে ৬ দশমিক ৪ শতাংশ; কৃষি খাতে ৬ দশমিক ১ শতাংশ; সামাজিক নিরাপত্তা ও কল্যাণ খাতে ৬ শতাংশ; জনশৃংখলা ও নিরাপত্তা খাতে ৫ দশমিক ৭ শতাংশ; জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে ৫ দশমিক ৩ শতাংশ; স্বাস্থ্য খাতে ৫ দশমিক ২ শতাংশ; শিল্প ও অর্থনৈতিক সার্ভিস খাতে ১ শতাংশ; বিবিধ ব্যয় খাতে ২ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
বাজেটে পদ্মা সেতু, একটি বাড়ি একটি খামারসহ ১০টি মেগাপ্রকল্প তথা যোগাযোগ অবকাঠামো, ভৌত অবকাঠামো, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিজ্ঞান-প্রযুক্তি, কৃষি, মানবসম্পদ উন্নয়ন খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।
আজকের বাজার: এলকে/এলকে ২৯ জুন ২০১৭