৬১টি রোহিঙ্গা সংগঠন,মায়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার দাবি

রাখাইনে নির্যাতন ও গণহত্যা বন্ধে মায়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহবান জানিয়েছেন রোহিঙ্গাদের আন্তর্জাতিক সংগঠনের নেতারা। একইসঙ্গে সেখানে সেফ জোন বা নিরাপদ অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করে বহুজাতিক বাহিনী মোতায়েনেরও দাবি জানিয়েছে ওআইসি অনুমোদিত সংগঠনটি।

জাতিসংঘের অধিবেশন শুরু হচ্ছে আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে। সংগঠনটির নেতাদের প্রত্যাশা, অধিবেশনে উপস্থিত বিভিন্ন দেশের শীর্ষ নেতারা যাতে মায়ানমারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়ে চাপ সৃষ্টি করেন। তারা রোহিঙ্গাদের রক্ষা এবং রাখাইনে ফিরে যাওয়ার বিষয়ে বিশ্বনেতাদের ভূমিকা রাখার আহবান জানান।

গত শুক্রবার ওআইসির কাছে পেশ করা এক প্রতিবেদনে এসব দাবি জানায় আরাকান রোহিঙ্গা ইউনিয়ন। সংস্থার মহাপরিচালক ড. ওয়াকার উদ্দিন প্রতিবেদনটি পেশ করেন। বিশ্বব্যাপী ৬১টি রোহিঙ্গা সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে আরাকান রোহিঙ্গা ইউনিয়ন। ওআইসির ৩৮তম পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্মেলনে এ সংগঠনকে রোহিঙ্গাদের প্রতিনিধিত্বকারী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, মায়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতে ভারি আর্টিলারি ব্যবহার করে হামলা চালাচ্ছে। রোহিঙ্গাদের শিরচ্ছেদ, জবাই ও সংক্ষিপ্ত বিচারের ফাঁসি দেয়া হচ্ছে। সেনাবাহিনীর পাশাপাশি বৌদ্ধ মিলিশিয়ারা হত্যাযজ্ঞ ও অগ্নিসংযোগ করছে। বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা রাখাইনে নির্মমতার যে বর্ণনা দিয়েছেন তার সঙ্গে আরাকান রোহিঙ্গা ইউনিয়নের এসব তথ্য মিলে যায়।

ওআইসির কাছে দেয়া প্রতিবেদনে মায়ানমারের ওপর যেন ফের আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয় সে জন্য ভূমিকা রাখতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহবান জানানো হয়েছে। সামরিক শাসনের অধীনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের কারণে দেশটির ওপর বহু বছর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা ছিল। সুচির দল ক্ষমতায় আসার পর সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়। তবে কিছু কিছু নিষেধাজ্ঞা এখনও বহাল আছে।

আরাকান রোহিঙ্গা ইউনিয়ন উত্তর রাখাইনের দুর্গত এলাকায় আন্তর্জাতিক ত্রাণকর্মী ও গণমাধ্যমকে অবাধে প্রবেশ, এখানে সেফ জোন প্রতিষ্ঠা করে বহুজাতিক বাহিনী মোতায়েন, জাতিসংঘের তদন্ত দলকে প্রবেশের সুযোগ দেয়া, রোহিঙ্গা বিদ্বেষ বন্ধ ও ১৯৮২ সালের কুখ্যাত নাগরিকত্ব আইন বাতিল করার দাবি জানায়। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে মায়ানমারের বিরুদ্ধে প্রস্তাবে সমর্থন দেয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ওআইসি, কানাডার প্রতি আহবান জানানো হয়। যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট ও কংগ্রেসে রোহিঙ্গাদের রক্ষায় শুনানির আহবান জানায় সংগঠনটি। তারা মায়ানমার সরকারের কাছেও বেশকিছু সুপারিশ করেছে।

এর মধ্যে রয়েছে- রোহিঙ্গাদের ওপর সামরিক হামলা স্থায়ীভাবে বন্ধ করা, রোহিঙ্গাদের নিরাপদে প্রত্যাবর্তনের অনুমতি দেয়া, কফি আনান কমিশনের সুপারিশ দ্রুত বাস্তবায়ন, বেসামরিক লোকদের রক্ষায় আন্তর্জাতিক চুক্তি মেনে চলা, নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক সংস্থার মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো মানবতাবিরোধী অপরাধের তদন্ত ও রোহিঙ্গাবিরোধী মিথ্যা প্রচারণা বন্ধ করা।

এদিকে আরাকান রোহিঙ্গা ইউনিয়ন জানায়, মায়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছে। মিথ্যা সংবাদ, ভুয়া সাক্ষ্য, বিকৃত ভিডিও ক্লিপ ও ছবি সরকারি উদ্যোগে তৈরি করে ব্যাপকভাবে প্রচার করা হচ্ছে। এর উদ্দেশ্য- সাম্প্রদায়িক সহিংসতা বাড়ানো এবং সঠিক খবরকে কলঙ্কিত করা।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২৫ আগস্ট নিরাপত্তা চৌকিতে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলার অভিযোগ তুলে সেনা অভিযান শুরু হলেও তার বেশকিছু দিন আগেই মংডুতে অবস্থান নিতে শুরু করে মায়ানমার সেনাবাহিনী। তারা ২ আগস্ট একটি গ্রাম কর্ডন করে বৌদ্ধ মিলিশিয়াদের নিয়ে রোহিঙ্গাদের ওপর হামলা ও তাদের বাড়িঘরে আগুন দেয়। এরপর থেকেই বাড়ানো হয় সেনাসদস্যদের উপস্থিতি। এরপর ২৫ আগস্ট হামলার দাবি করে ‘ক্লিয়ারেন্স অপারেশন্স’ শুরু করে মায়ানমারের সেনারা।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ২৮ আগস্ট মংডুর ৫নং ওয়ার্ডের পুরোটাই ধ্বংস করে দেয়া হয়। এখানে ৪৩৭টি বাড়ি ছিল। ৩নং ওয়ার্ডের ৫৫টি বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া হয়। এ ছাড়া বাকাগুনা, থিহো কাইউন, নইয়ং, কায়সারাবিল, কিগানবাইন, মাইওথুগি, ডংসে, চক শুংসহ বহু গ্রাম পুড়িয়ে ছাই বানিয়ে ফেলা হয়েছে।

জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস ক্ষোভ ও অসহায়ত্ব প্রকাশ করে বলেছেন, মায়ানমার সরকার জাতিসংঘের কথা কানে তুলছে না। শুক্রবার তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সংকটে আমরা খুবই সক্রিয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হল- এটা সহজ ব্যাপার না, কারণ আমাদের কোনো অনুরোধই মায়ানমার সরকার কানে তুলছে না। আমরা বিপাকে।

আজকের বাজার : এলকে/এলকে ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭