বিএনপি সাংগঠনিকভাবে দুর্বল হলেও তাদের ব্যাপক জনসমর্থনের বিষয়টি মাথায় রাখতে বলেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। ১৯৯১ ও ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের হারের বিষয়টিও মাথায় রাখতে নেতা-কর্মীদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন তিনি।
মঙ্গলবার ২৮ নভেম্বর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নগর ভবনের সামনে ঢাকার প্রথম নির্বাচিত মেয়র মোহাম্মদ হানিফের স্মরণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন কাদের।
ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘সাংগঠনিক ভবে এলোমেলো হলেও তাদেরকে (বিএনপি) জনসমর্থনে ছোট করে দেখবেন না। আমরা জিতে গেছি এই মানসিকতা বাদ দিতে হবে। ১৯৯১ এবং ২০০১ এর নির্বাচনের কথা মনে করতে হবে।’
এরশাদ সরকারের পতনের পর ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়ের বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী ছিল। আত্মবিশ্বাস এতটাই তুঙ্গে ছিল যে দলের নেতা-কর্মীরা নির্বাচনী মাঠে অনেকটাই গা ছাড়া ভাব নিয়ে থেকেছেন। আর এই সুযোগে বিএনপি অপ্রত্যাশিতভাবে জিতে ক্ষমতায় আসে।
১৯৯৬ থেকে পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকার পর ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনেও জেতার বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী থাকলেও আওয়ামী লীগকে পরাজয় বরণ করতে হয়।
এই দুই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ ছিল না মন্তব্য করে কাদের দলের ভেতরের সব বিরোধ মিটিয়ে এক হয়ে লড়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘বাংলার জনগণ শেখ হাসিনা উন্নয়নে খুশি, নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে কেউ আমাদের হারাতে পারবে না।’
কাদের বলেন, ‘বিএনপিকে তুচ্ছ করে দেখছি না, আওয়ামী লীগবিরোধী সব সাম্প্রদায়িক শক্তি গাঁটছড়া বাঁধছে বিএনপির সঙ্গে।’
নিজেদের মধ্যে বিবেদ না করে ঐক্যবদ্ধ থাকার পাশাপাশি মানুষের সঙ্গে ভালো আচরণ করার পরামর্শ দেন কাদের। বলেন, ‘আওয়ামী লীগের উন্নয়ন, অর্জনের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ নেতাকর্মীর ভালো আচরণ যোগ করলে আগামী নির্বাচনে বিপুল ভোটে আওয়ামী লীগ নির্বাচিত হবে।’
বিএনপির আন্দোলনের হুমকির জবাবে ক্ষমতাসীন দলের নেতা বলেন, ‘ধাক্কা দিয়ে আওয়ামী লীগকে ফেলানো যাবে না ফখরুল (বিএনপি মহাসচিব) সাহেব। আওয়ামী লীগ বিএনপি নয়, জনতার মঞ্চের ধাক্কায় আপনাদের পতন হয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগের শেকড় বাংলাদেশের মাটির অনেক গভীরে।’
‘ফখরুল সাহেব রঙিন স্বপ্ন দেখছেন, কিন্তু গণঅভ্যুত্থান তো এখন জাদুঘরে। এখন এই দুঃস্বপ্ন দেখে কোন লাভ নেই। দেশে উন্নয়নের জোয়ার চলছে, তাতে আগামীতে আপনাদের ডাকে জনগণ সাড়া দেবে না।’
আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপির কোনো তুলনা চলে না মন্তব্য করে কাদের বলেন, বিশ্বের ১৭৩ দেশের মধ্যে সাহসী নেতৃত্বে শেখ হাসিনা তৃতীয়, অন্যদিকে খালেদা জিয়া দুর্নীতিতে তৃতীয়। এই হচ্ছে পার্থক্য।’ কানাডা আদালতের রায়ে দুটি রায়ে বিএনপিকে সন্ত্রাসী সংগঠন আখ্যা দেয়ার বিষয়টিও তুলে ধরেন তিনি।
ঘরের কথা বাইরে নয়
আওয়ামী লীগের ভেতরে নানা বিষয় বাইরে আলোচনা না করতেও নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন কাদের। বলেন, ‘কোনো সমস্যা থাকলে নিজেরা বসে সমাধান করুন। না হলে আমাকে বলুন, কেন্দ্রীয় নেতারা আছেন, নেত্রী (শেখ হাসিনা) আছেন। ঘরের কথা চায়ের দোকানে বসে আলোচনা করবেন না। এটা হবে আত্নঘাতী।’
দলের কোনো সমস্যা নিয়ে বাইরে আলোচনা করার বিপদ বর্ণনা করে আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ‘বাসে বসে নিজেরা সমালোচনা করলে বাহিরের শত্রুর প্রয়োজন হবে না। তাই বলছি চায়ের দোকানে, বাসে বসে নিজেদের কথা আলোচনা করবেন না।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আওয়ামী লীগ বড় পরিবার, সমস্যা থাকতেই পারে। আলোচনা করে নিজেরা সমাধান করুন।’
ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র সাঈদ খোকনের সভাপতিত্বে স্মরণ সভায় আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসানাত, সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ, যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী প্রমুখ।
আজকের বাজার:এলকে/এলকে ২৮ নভেম্বর ২০১৭